চঞ্চলা মন আনমনা হয়......

প্রকাশের সময় : 2019-09-26 12:03:10 | প্রকাশক : Administration
চঞ্চলা মন আনমনা হয়......

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীনঃ সকালের সূর্য্য উঠতে তখনও বেশ বাকী। ভোরের হালকা আলো কেবল ফুটতে শুরু করেছে। সুবেহ্ সাদেকের আলো। মিষ্টি মিষ্টি শীতল আলো। এ আলোয় ফজর নামাজ পড়ার তৃপ্তিই আলাদা। অনুভূতিটাই অন্যরকম। আল্লাহ মানুষকে তাঁর খুব নিকটে যাবার জন্যে ভারী চমৎকার একটা আবহ ঠিক করে দিয়েছেন। আলো আঁধারের আবহ। যেখানে আলো কম, এবং কুটকুটে অন্ধকার ভাবটাও নেই। আছে আলো আধারীর মায়াবী মিশ্রণ। প্রকৃতির হাজারো সময়ের মাঝে এ এক অপূর্ব সময়। হাজারো রূপের মাঝে সর্বোত্তম রূপ।

আমি রোজ জানালা মেলে প্রকৃতির এই অপরূপ রূপটা নয়ন ভরে অবলোকন করি। প্রাণ ভরে দেখি। মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখি পাশের ঘরে গভীর ঘুমে থাকা আমার শোনিমের মুখটাও। বড় শান্তির মুখ! আল্লাহ্ কাছ থেকে পাওয়া আমাদের সেরা মুখ; জীবনের সেরা উপহার। কখনো কখনো কাছে গিয়ে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। চুলের মাঝে নাকটি মিশিয়ে ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করি। শোনিম টের পায় না। একটু নড়েচড়ে উঠে কেবল। কিছুটা বিরক্তও হয়।

বিরক্ত হয়ে বন্ধ থাকা দুটো চোখই বাঁকায়; মাথা ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শোয়। আমি জড়িয়ে ধরি। আলগোছে জড়িয়ে ধরে ওর পাশেই শুয়ে পড়ি। শুয়ে থাকি কিছুক্ষণ কিন্তু ডাকি না। ডাকতে পারি না। ডেকে জাগাতে বড় মায়া হয়। ঘুমাক নাহ আর একটু; আর একটু বিশ্রাম নিক। আর কতক্ষণই বা। স্কুলের সময় হবে একটু বাদেই। বাবা আমার উঠেই রেডী হতে শুরু করবে। ঘুমঘুম চোখেই কত কিছু গোছগাছ! সবই পুরো জীবনের জন্যে। সামনে ওর দীর্ঘ জীবন! বড় জটিল একাকী জীবন!!

মানুষ আসলেই একা। জীবনকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, হাজারো মানুষের মাঝে নিজেকে পাওয়া যাক না কেন, কোন না কোন সময় মানুষ তার জীবনে একেবারে একা। শত কোলাহলের মাঝে থেকেও মানুষ কখনো কখনো নিঃসঙ্গ কিংবা একা হয়ে পড়ে। সঙ্গীহীন, বন্ধুহীন হয়ে পড়ে। এটাই জীবনের সমীকরণ; ভিতরগত আসল রূপ। বড় নিষ্ঠুর এই জীবনের কোন কিছুই শোনিম দেখেনি এখনো। সামনে দেখবে। জীবন এগিয়ে যাবে তার নিজস্ব গতিতে আর শোনিম আস্তে আস্তে সব দেখবে।

দেখবে এর ভিতর বাহির। প্রতিটি ধাপে ধাপে দেখবে রহস্যের আদি অন্ত। মানুষের জীবনটা আগাগোড়াই রহস্যে ভরা। রহস্যময় এর সকল আচার আচরণ। চরিত্রগত ভাবে মানুষ প্রায়শই বিপরীতমুখী আচরণ করে। নিজের মধ্যে মানুষ যা ধারণ কিংবা লালন করে; অন্যের মধ্যে তা মেনে নিতে পারে না। পাড়ার সবচেয়ে বাজে ছেলেটাও নিজের বোনকে সতীসাদ্ধী হিসেবে দেখতে চায়। নিজে দিনভর সবার বোনকে উত্যক্ত করে বেড়ায় কিন্তু কিছুতেই নিজের বোনকে কেউ ত্যক্ত করুক সেটা মানতে চায় না।

মানতে পারে না। বোনের কাছে ভাবটা এমন করে যে, দুনিয়া কেয়ামত হয়ে যাবে কিন্তু সে কোন ছেলের নষ্টামি মেনে নেবে না। কাউকে ফাউল গেম খেলতে দেবে না। একটা একটা পুংটা ধরবে আর কঁচুকাটা কাটবে। জনমের মত মিটিয়ে দেবে মেয়েদেরকে উত্যক্ত করার সখ। চিৎকার করে ওঠে; হুংকার দিয়ে শপথ নেয়! সারাদিন নষ্টামি করা মানুষটির নষ্টামির বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠের দীপ্ত শপথ! কোন ভান টান নয়! অবস্থান পরিষ্কার! পুরোটাই হৃদয় নিঙরানো। একেবারে সহি চরিত্রের সেরা ভাইয়ের মত বলিষ্ঠ ভূমিকা।

একটা চমৎকার ভন্ডামী। সমাজের যত্রতত্র এসব দৃশ্যমান। সামাজিকভাবে স্বীকৃত মহা সুদখোর রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় পাঞ্জাবী, টুপী পড়ে। ধার্মিক সাজার একটা অপচেষ্টা। বেশভূষার পাশাপাশি সামাজিক কাজকর্মেও তার প্রতিফলনের চেষ্টা চলে। বাড়ীর সামনে মসজিদ মাদ্রাসা করে। হয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মৃত্যু পর্যন্ত এই পদে থাকে। যেনতেন পদ নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ। তাই মিম্বরের পাশে বসেই নিত্য জুম্মায় খুৎবা শুনে। গভীর মনোযোগের সাথেই শুনে। সুদ বিরোধী বয়ান শুনে কলিজায় কামড় পড়ে। তারপরও মাথা দোলায়। উপর নীচু করে দোলায়। বিড়বিড় করে নাউজুবিল্লাহ্ও বলে। তবে নাউজুবিল্লাহ্ ওই পর্যন্তই। নামাজ শেষ তো আবার গোনা শুরু। সুদের টাকা গোনা।

টাকা অন্যেরাও গোনে। তবে সুদের নয়; গোপন লেনদেনের। সমাজে অনেক ধরনের লেনদেন আছে। এসব লেনদেনের জন্যে ধরো, মারো, খাও পার্টির প্রধান হওয়া লাগে। ভাল লোক হওয়া লাগে না; লেখাপড়াও জানা লাগে না। ঘোড়ার ডিমের লেখাপড়া! ওসব করলেই কি; আর না করলেই কি! কমিটির প্রধান হওয়া জরুরী। না হলে জাত যাবে। খারাপ পথে যেয়ে জাত আগেই গেছে। এখন উদ্ধারের চেষ্টা। কমিটিতে ঢুকতে পারলেই কর্ম সারা। সালিশ কমিটি, বিচার কমিটি, বাজার কমিটি, কলেজ কমিটি। কমিটি একটা হলেই হলো।

চেয়ার একটা পেলেই চলে। বসেই পটশ পটশ কথা। নীতিহীনের নীতির কথা; আদর্শের কথা। হামভরা মার্কা কথা। পকপক করে কথা চলতেই থাকে। বেশী বলে পারফেক্টলি চলার কথা। সমাজের সবাইকে পারফেক্টলি চলতে বলে। কেবল নিজেরা পারফেক্টলি চলতে পারে না। এটা অবশ্য মানুষকুলের সহজাত স্বভাব। মানুষ সবার মধ্যে পারফেক্টনেস আশা করে। কিন্তু কোন মানুষই নিজে পরিপূর্ণভাবে পারফেক্ট হতে পারে না। এবং স্বভাবগত ভাবেই মানুষ খুঁতখুঁতে। খুঁত সবার মধ্যেই থাকে। কিন্তু মানুষ খুঁতকানা। কখনোই নিজের খুঁত দেখতে পায় না। দেখতে পায় অন্যের খুঁত।

সব সময় দেখতে পায়। চশমা ছাড়া যে মানুষ কিচ্ছু দেখতে পায় না, সেও অন্যের খুঁত দেখে চশমা ছাড়াই। খুব পরিস্কার ভাবেই দেখে। খুঁত দেখতে চশমা লাগে না। লাগে খুঁতখুঁতা খাসিলত। এই খাসিলত নিয়ে সমাজকে সুন্দর করা যায় না। সমাজকে সুন্দর করার জন্যে খুঁতখুঁতা খাসিলত জরুরী না। জরুরী সৎ হওয়া; জরুরী নিরপেক্ষ হওয়া। জীবনকে খুব বেশী গুরুত্ব দিতে যেয়ে, নিজেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ করতে যেয়ে মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারে না। উদার হতে পারে না। ভীমরতিতে পড়ে তালগোল পাকিয়ে বড় বেশী স্বার্থপর হয়ে যায়।

রুমীন ফারহানাও হয়েছেন। হালের খুব পরিচিত রাজনীতিক এই ফারহানা সংসদে যোগ দেয়ার সময় যুক্তি খোঁজার নামে কত তালবাহানা করলেন। গলা ফাটিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন সংসদ অবৈধ কিন্তু তিনি অবৈধ নন। তিনি যোগ দিয়েছেন নিজের জন্যে নয়। কেবলমাত্র অবৈধ সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে। কপাল খারাপ। এবার সাংসদ নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন। সাংসদ হিসেবে রাজউকের প্লট চেয়ে প্রমাণ করেছেন সরকার হারাম; কিন্তু সরকারী সুযোগ সুবিধায় সেই রকম আরাম।

বিষয়টি জানাজানি হওয়াতে মিনমিন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে আগের মত নিজের গলা আর ফাটাতে পারেননি। যুক্তি থাকলে না ফাটাবেন। এখানে তো যুক্তি নেই; আছে স্বার্থ। আরাম আয়েশের স্বার্থ। সাংসদ হিসেবে ন্যায্যত তিনি প্লট পান। কিন্তু দলীয় আদর্শের কারণে এবং নীতির প্রশ্নে তিনি এইটুকু স্বার্থের মায়া ত্যাগ করলেই পারতেন। তুচ্ছ জ্ঞান করলেই হতো। ছোট্ট এই জীবনে তুচ্ছ এই প্লট না হলেও চলতো। মানুষের জীবন আসলেই তো তুচ্ছ। খুবই তুচ্ছ; যেখানে নিজের বলতে কিছুই নেই! যা আছে প্রায় সবই তো অন্যের দান। জন্মের কথা বলবেন? সেটা অন্যের দান। নিজের নাম কিংবা জীবনে অর্জিত শিক্ষা? সবই অন্যের দেয়া। আর শেষ যাত্রা। অন্যকে ছাড়া এটা একেবারেই অসম্ভব।

অসম্ভবের শেষ নেই। মানুষকে রোজগার করতে হয় অন্যের টাকা হাতরিয়ে। বড় কষ্ট করে শরীর এবং মেধা খাটিয়ে কাজটি করতে হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে করতে হয়। মানুষ সহ মোট ৮৪ লক্ষ প্রাণীর বাস এই পৃথিবীতে। শুধু মানুষই কেবল এমনি অমানুষিক পরিশ্রম করে আয় রোজগার করে। বাকী প্রাণীরা কিন্তু রোজগার করেও না; আবার অনাহারেও মরে না। অনাহারে মরে কেবল মানুষ। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তের কেউ না কেউ নিত্যদিন অনাহারে মরে। ধুকে ধুকে মরে।

অসহায়ের মত মরে প্রমাণ করে মানুষ আসলেই বোকা। সারাটা জীবন ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে যায়। তবুও আশা পূরণ হয় না। মানুষ আশায় থাকে; ভালবাসায় পড়ে। ভালবাসার পেছনে ঘোরে। ঘুরতে ঘুরতে মরে। কেননা ভালবাসার পিছনে মানুষ ঘুরলেও মৃত্যু ঘোরে মানুষের পিছনে। ভালবাসা এবং মৃত্যু দুটো খুবই নির্মম এবং নির্দয় আচরণ করে মানুষের সাথে। দুটোই না জানিয়ে চলে আসে। আসে নিতে। সবর্স্ব কেড়ে নিতে। এবং নিয়েও যায়। একজন নিয়ে যায় মন, অন্যজন জীবন!

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com