ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার; রাত ১০ : ৩০

প্রকাশের সময় : 2019-09-26 12:19:24 | প্রকাশক : Administration
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার; রাত ১০ : ৩০

সিমেক ডেস্কঃ এক কাপ চা আর সাথে একটা গোল্ডমেরি বিস্কুট। ফেসবুকিং করছিলাম এমন সময় একজন; ভাইয়া! ও ভাইয়া !! ও ভাইয়া !!! মাথা তুলতেই দেখি, চোখের সামনে এই শাপলা ফুল। কিছু বলবা? ও ভাইয়া কয়ডা টেকা দেন না, আইজ আমি বেশি সুবিধা করতে পারি নাই। মাত্র ১৫ টেকা হইসে, আপনে কিছু দিলে রাইতের খাবারডা হইত।

১০০ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বললাম, যাও এখন, পেট ভরে খেয়ে নিও। ভাবলাম মেয়েটা চলে যাবে। আবার মোবাইলে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা, কিন্তু আর মনযোগ আসছে না। হোম পেইজটাতে ঘুরাঘুরি করতে শুরু করলাম, বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল। মেয়েটার কথা মনেই নেই আর। এরকম কত মানুষ আসে ভিক্ষা চাইতে, মনে রেখেই বা কি লাভ?

হঠাৎ মাথা উঁচিয়ে দেখি, মেয়েটা ঠিক আমার থেকে ২০ হাত দূরে হুইল চেয়ারটাতে বসে আমার দিকে গদগদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না; এমন করে তাকিয়ে আছে কেন? প্রথমে ভাবলাম ভুল দেখছি, পরে আবার ভালো মত দেখলাম যে ও আসলে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। পরে মেয়েটাকে ডাকলাম কাছে ।

এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কিছু বলবা? ভাইয়া একটা সত্যি কথা কমু, আমাকে না কেউ জীবনে ১০০ টেকা একসাথে দেয় নাই। আমি আপনার কথা জীবনেও ভুলুম না।

আরে ঠিক আছে। কিছু খেয়ে নিও কেমন? এখন যাও। তারপরও তাকিয়ে আছে। যাচ্ছে না মেয়েটা। খুব অদ্ভুত লাগছে। একটু আগে দূর থেকে তাকিয়ে ছিল, আর এখন ঠিক ২ হাত সামনে থেকে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আবার প্রশ্ন করলাম, অনেক রাত হয়ে গেছে, আর তোমার তো রাতে খাবারের টাকাও দিলাম, এখন যাও। দাঁড়িয়ে আছো কেন এখনো, কিছু বলবা আরও?

যামু তো ভাইয়া। এমন করেন ক্যান? ভাইয়া মনডা না খুবই খারাপ। আমার কোন বন্ধু বান্ধবী নাই। গরীব বলে আমার কেউ বন্ধু বান্ধবী হইতে চায় না। আপনি তো মেলা বড়লোক, তাই সাহস পাইতেসি না কইতে? কমু ভাইয়া? আচ্ছা কইয়াই ফালাই, আপনি কি আমার বন্ধু হবেন ভাইয়া? আপনার থেকা আমার কোন চাওয়া পাওয়া নাই। শুধু এখানে আড্ডা দিতে আসলে, আমার সঙ্গে একটু আড্ডা দিবেন আর কি। আর আমি সবাইরে কমু, আমার একটা বন্ধু হইসে। আপনি তো মেলা সুন্দর। পোলারা সুন্দর হওয়ান ভালো না।

আমি মুগ্ধ হয়ে ওর কথাগুলো শুনছিলাম। মেয়েটা অনেক অদ্ভুত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলছিল। আর বলেই যাচ্ছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না।

দেখবেন কোনদিন কোন এক মাইয়া আপনার প্রেমে পইরা হাবুডুবু খাইবো আর উঠতে পারবো না। বলেই এবার হাসা শুরু করে দিল। অনেক উচ্চশব্দের সে হাসি। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হবে, আমি নিশ্চিত। আমি এবার অবাক হয়েই শুধু দেখছি এখন মেয়েটাকে। কি ভাইয়া বন্ধু হইবেন আমার? নাকি গরিব কালা আর ল্যাংড়া দেইখা করবেন না? আমি কিন্তু প্রতিদিন আসি এইখানে। মাঝে মধ্যে আইসেন, দেখা হইব। আপনারে খুবভালা লাগসে। আপনি অনেক ভালা মানুষ। আমরা গরিব মানুষ কিন্তু মিছা কইনা।

মেয়েটার কথার কি উত্তর দিব, ভেবেই পাচ্ছিলাম না। চুপ করে ভাবতে বসলাম, কি উত্তর দেয়া যায়। এমন সময় আবার, ভাইয়া ও ভাইয়া, আমি যামু গা। মেলা রাইত হইসে। যাওয়ার আগে একটা আবদার রাখবেন? কি বলো? আমার একটা ছবি তুইলা দিবেন?

একটা ছবি তুললাম। প্রথম ছবিটা। ছবি দেখে বলে, একটা কইলাম দেইখা একটাই তুললেন? আমি একটু হাসি। আরেকটা তুলেন। হাসিমুখের আরেকটা ছবি তুললাম। ২য় ছবিটা। ছবি দেখে বলে, দেখসেন, কোন মেকাপ করি নাই, তাও কত সুন্দর আইসে আমার ছবি? ছবি গুলা রাইখা দিয়েন ভাইয়া। তাইলে আমার কথা ভুইলবেন না। দেখলেই মনে পরবো আমারে। নাইলে ভুইলা যাইবেন। ভাইয়া ভালা থাইকেন, আমার যাওনের টাইম হইসে। বলেই মেয়েটা চলে গেল।

যে যাওয়ার সে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে একরাশ মুগ্ধতা। মেয়েটা আহামরি তেমন কিছুই না। নিতান্তই একজন ভিক্ষুক। কিন্তু তাতে কি? শিখিয়ে দিয়ে গেল অনেক কিছু। বাসায় এসে ছবিগুলো দেখছিলাম। ২য় ছবিটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। মুগ্ধতা সরাতে পারছিলাম না। ওর পা জোড়া কোনভাবেই ফ্রেমে আটকে রাখতে পারে নি ওকে।

ও হাসবে! ও হাসবে!! ও আবার হাসবে!!! এটি একটি উচ্চ বর্গীয় হাসি। যে হাসির দেখা মেলে কেবল ওই ভালোবাসার ডিব্বায়। একটু আদর মাখালেই যেখানে ফুটে উঠে সুখের পদ্ম। যে হাসি নিযুত কোটি তারাকে আলোহীন করে দেয় এক ফোটা ইশারার মাধ্যমে। যে হাসিতে মমতারা চোখে এসে মায়ার চাষ শুরু করে দেয়। মায়াবী কালোরাত পূর্ণিমার যৌবনে পা ফেলতে চায়।

ওর হাসিতে কোন লোভ, লালসা, ভয়, কৃত্তিমতা ছিল না। ছিল এক আবেগ, ছিল তার করুণ জীবনের বাস্তব চিত্র। ছিল হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বলতে না পারা ভাঙা সত্য গুলো। ছিল অনেক কিছু পাওয়ার তীব্র বাসনা, ছিল মানুষের জীবনমানের বৈষম্যের কড়া একটা তুলনা।

সামান্য কয়েকটা টাকায় যাদের মুখ অনিবার্য খুশিতে ভরাডুবি দেয়, সেখানে বাস্তবতা গলা নামিয়ে মৃদু স্বরে বলে, এজন্যই ওরা গরিব। কারণ ব্যস্ততার এই পৃথিবীতে গরিবরা ছাড়া কেউ শুকরিয়া আদায় করে না। এরাও মানুষ, হয়ত গরিব! তবে এদেরও ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে একটু মন খুলে কথা বলতে চাওয়ার। ইচ্ছে করে, নিজেকে মেলে ধরতে ওই দূরের আকাশে সবার সাথে ঘুড়ি উড়াতে। ইচ্ছে করে সত্য স্বপ্ন কাটার। চাঁদের বুড়ির গল্প শোনার। ইচ্ছে করে ওদের জীবনের করুণ গল্পগুলো বলার।

ওরাও চায়। তবে ওদের চাওয়া পাওয়াগুলো খুবই সামান্য। ওরা চায়, শুধু দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে, ওরা চায় একটু ভালো ব্যবহার পেতে। ওরা চায় কেউ ওদের জীবনের গল্পগুলো শুনুক। ওরা চায় আমরা ওদের আমাদের মতই মানুষ ভাবি।

হ্যাঁ! আমি ঠিক করেছি, মেয়েটাকে আমার বন্ধু বানাবো। একজন সত্যিকারের বন্ধু। ওর জীবনের গল্প শোনার বন্ধু। ওর একবেলা না খেয়ে থাকার কষ্ট বোঝার বন্ধু। ওর মন ভালো করার বন্ধু। ওর অবসর সময়ে সময় মিলানোর বন্ধু। ওকে বোঝার বন্ধু।

আসুন না, স্রষ্টার এই ছিটকে পড়া উর্বর বীজগুলোকে পৃথিবীর বুকে গাছ হয়ে উঠতে দেই। বিশ্বাস করুন এরা একদম বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছড়াবে। আসুন না এদেরকে একটু চাষ করে, বাঁচার মত বাঁচতে দেই। এরা আমাদের সত্যের ভুবন প্রসব করবে। আসুন না সুন্দর একটা দেশ গড়ায় এদেরও অংশগ্রহণ করতে দেই। এরা না হয় ঢাল হয়েই দাঁড়াক, তলোয়ারটা আমরাই চালাবো।

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com