দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু

প্রকাশের সময় : 2019-10-24 12:08:08 | প্রকাশক : Administration
দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু

সিমেক ডেস্কঃ ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে মাওয়া চৌরাস্তা থেকে সোজাসুজি দক্ষিণেই পদ্মাপার। পারঘেঁষা অংশটি আগের মতো আর মুক্ত প্রান্তরের মতো নয়। পাড় ঘেঁষেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়ার মূল সেতু ও নদীশাসনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রকল্প এলাকার জন্য তৈরি করা ছিমছাম পথে সাধারণের  প্রবেশ ‘সম্পূর্ণ নিষেধ’। আগে থেকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পথ চলতে হলো। গাড়িতে চলতে চলতে চোখে পড়ল পাড় ঘেঁষে কোথাও স্তূপ করে রাখা হয়েছে সেতুর ওপর গাড়ি চলার জন্য সবচেয়ে ওপরের কাঠামো তৈরির স্ল্যাব, কোথাও রাখা হয়েছে রেলপথে বসানোর জন্য সারি সারি স্ল্যাব।

পার থেকে পদ্মা নদীর দিকে সেতুর অ্যালাইনমেন্ট ধরে এগোতে গিয়ে মাটির ওপর ও নদীর ওপরে নির্মিত অবকাঠামো চোখ ধাঁধিয়ে দিল। ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসাতে হবে। এর মধ্যে ১৮টি খুঁটিতে স্প্যান বসানো হয়েছে ১৪টি। মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে সেতুর দুই হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। মাওয়ার পদ্মাপাড়ে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড দুই কিলোমিটার জুড়ে। পাইল তৈরি বহু আগেই শুরু হয়েছিল এখানে। এর কাছেই ‘ট্রাস ফ্যাব্রিকেশন ইয়ার্ড’, সেখানে সেতুর ওপর বসানোর কাঠামো ‘স্প্যান’ তৈরি হচ্ছে। স্প্যান হলো দুটি খুঁটির দূরত্বের মধ্যে বসানোর জন্য কাঠামো, যার মধ্য দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। চীন থেকে আনা মেম্বার ও জয়েন্ট একসঙ্গে জোড়া দিয়ে স্প্যানের কাঠামোর পূর্ণতা দেওয়া হচ্ছে। একটি স্প্যানে লাগে ১২৯টি মেম্বার। সেতুর ৪১টির মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরো পাঁচটি স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে। চীন থেকে ২৭টি স্প্যান মাওয়ায় পৌঁছেছে এরই মধ্যে।

সেতুটি হবে দোতলা। ওপরে সড়কপথ ও নিচে থাকবে রেলপথ। সড়কপথের ওপরের অংশ নির্মাণের জন্য স্ল্যাব তৈরি হচ্ছে পুরোদমে। এসব স্ল্যাব তৈরি করে রাখা হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। সড়কপথে দুই হাজার ৯৩১টি স্ল্যাব বসানো হবে, এর মধ্যে এক হাজার ৩৭০টি তৈরি শেষ হয়েছে। নিচে রেলপথে স্ল্যাব বসানো হবে দুই হাজার ৯৫৯টি, এর মধ্যে দুই হাজার ৮১৯টি তৈরি শেষ হয়েছে।

মাওয়া প্রকল্প এলাকা দেখার পর মাওয়ার এমবিইসি জেটিতে গেলে দেখা যায়, একের পর এক স্পিডবোটে প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা আসা-যাওয়া করছেন। জেটিতে নোঙর করা স্পিডবোটে চেপে পদ্মার বুক চিরে চলতে গিয়ে ঝিলিক দিচ্ছিল সেতুর স্প্যানগুলো। কোথাও ড্রেজারে মাটি তোলা হচ্ছিল। কোথাও ক্রেন ছিল সচল।

একটু ঘুরপথে প্রায় ২০ মিনিটে পৌঁছা গেল জাজিরায়। জাজিরায় ফকিরকান্দিতে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটিতে স্প্যানের ভেতরে সড়ক ও রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে সেতুর অংশের ওপরের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল স্প্যানের ভেতর সড়কপথ তৈরি হয়েছে। সড়কপথ নির্মাণের ৩৯টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। তার নিচে নিচে ৩২২টি রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে।

এভাবে সব স্প্যানের শেষ প্রক্রিয়া শেষ হলে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু করতে বাধা থাকবে না। বাংলাদেশ সেতু বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতির তথ্যানুসারে, এ প্রকল্পের মূল সেতুর বাস্তব কাজ হয়েছে ৮৩.৫০ শতাংশ। নদীশাসন কাজ এগিয়েছে ৬২.৫০ শতাংশ। ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন কাজের মধ্যে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩.৫০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, পদ্মা সেতু ২০২১ সালের জুন নাগাদ যান চলাচলের জন্য চালু করা সম্ভব হবে। এ সেতুর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন’ (কেইসি) ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি চালু করা হবে। কোনো যানবাহনকে টোল বুথে থামতে হবে না।

বড় ভূমিকম্পেও টলবে না পদ্মাসেতু। যদি কখনো রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, ঠিক তখনই যদি সেতুর খুঁটির নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, একই সময়ে যদি পুরো সেতু ট্রেন ও সড়কযানে পূর্ণ থাকে, ওই সময় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ওজনের আরো একটি জাহাজ সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দিলেও পদ্মা সেতুর কিছুই হবে না। - সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com