দুর্নীতি বিরোধী অভিযান; সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা
প্রকাশের সময় : 2019-11-06 19:32:06 | প্রকাশক : Administration
বভুরঞ্জন সরকারঃ আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী লী কুয়ান তার শাসনকালের গোড়া থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর এবং অনমনীয়। কোনো ধরনের অনিয়মকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, কঠোর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অগ্রসর না হলে, আইন বা ব্যবস্থা মেনে না চললে একটি দেশ উন্নত হতে পারে না, সভ্য হতে পারে না। সিঙ্গাপুরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই। লী তার সহযোগীদেরও এতোটুকু ছাড় দিতেন না। উপযুক্ত, দক্ষ, বিষয়অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তাদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দেয়া হতো। বিনিময়ে তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হতো শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে। লীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তেহ চেয়াং ওয়ানকে জাতীয় উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো।
তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। তেহর বিরুদ্ধে শেষ দিকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলে তিনি লীকে অনুরোধ করেছিলেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা বা দুর্নীতি দমন সংস্থা যেন একটু নমনীয়তা দেখায়। লী তার বন্ধু এবং সহকর্মী তেহকে বলেছিলেন, তদন্ত সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে সে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সিস্টেম ভেঙ্গে পড়বে। আর সিস্টেম একবার ভেঙ্গে পড়লে সিঙ্গাপুরও আর অগ্রসর হবে না। তেহ যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে একটি সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেছিলেন ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর।
নোটে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিজেই নিজের সর্বোচ্চ শাস্তি বেছে নেয়ার কথা লিখেছিলেন। প্রিয় সহযোদ্ধার এই পরিণতিতে বেদনাবিদ্ধ হলেও লী তার শোক বাণীতে বলেছিলেন, দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে মন্ত্রী হলেই কারও আইন, বিচার বা তদন্ত প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার অধিকার তৈরি হয় না। তেহর প্রতি তিনি নমনীয়তা দেখালে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তো। তাতে হয়তো তেহর জীবন কিছুটা দীর্ঘ হতো, কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়তো সিঙ্গাপুরের শাসন ব্যবস্থা। ব্যক্তির প্রতি আবেগ বা ভালোবাসা না দেখিয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিলেন বলেই লীর সিঙ্গাপুর একটি ছোট্ট দেশ হয়েও বড় দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে।
- ফেসবুক থেকে