চীন; এক অলৌকিক অর্থনীতির দেশ
প্রকাশের সময় : 2019-11-06 20:26:22 | প্রকাশক : Administration
সিমেক ডেস্কঃ এক সময়কার অতিদরিদ্র ও পশ্চাৎপদ দেশ চীন ৭০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এক অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে গৃহযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট নেতা চেয়ারম্যান মাও জেদং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর পর থেকে গত সাত দশকে দেশটিতে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটেছে। নজিরবিহীন সম্পদ অর্জন করেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। চীন আজ শুধু এশিয়া মহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেও পরাক্রমশালী এক রাষ্ট্র।
কমিউনিস্ট পার্টি যখন চীনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে তখন দেশটি খুবই গরিব ছিল। ব্যবসা করার জন্য তাদের কোনো অংশীদার ছিল না, কারো সঙ্গে ছিল না কূটনৈতিক সম্পর্ক, তারা শুধু তাদের নিজেদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল। ১৯৭৬ সালে মাও জে দংয়ের মৃত্যুর পর দেং শিয়াওপিংয়ের শাসনামলে চীনের বিভিন্ন খাতে সংস্কারকাজ আরো বিস্তৃত হতে শুরু করে। নতুন করে গড়ে উঠতে শুরু করে দেশটির অর্থনীতি। কৃষকদের তাদের নিজেদের জমি চাষাবাদের অধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটতে ও খাদ্যের ঘাটতিও কমে আসতে শুরু করে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য চীনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
১৯৭৯ সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে গড়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক। সস্তা শ্রম ও অল্প খরচের কথা বিবেচনায়রেখেই যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অর্থ ঢালতে শুরু করে।
১৯৭০-এর দশকের শেষ দিক থেকে তার পরের সময়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক ইতিহাসে চীনের অর্থনীতি এক অলৌকিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এরপর ১৯৯০ এর পুরো দশক ধরেই চীনে খুব দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় ২০০১ সালে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব বাধা ও শুল্ক ছিল সেগুলোও ক্রমে হ্রাস পেতে শুরু করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যায় যে বিশ্বের সর্বত্র চীনের পণ্য ছড়িয়ে পড়েছে। চীন যেন সারা বিশ্বের জন্য একটি ওয়ার্কশপ বা কারখানায় পরিণত হয়।
১৯৭৮ সালে চীনের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি ইউএস ডলার, যা ছিল বিশ্ববাণিজ্য থেকে মাত্র ১ শতাংশরও কম। ১৯৮৫ সালের মধ্যে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যায় এবং তার দুই দশকেরও কম সময় পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। পণ্য রপ্তানির বিচারে চীন পরিণত হয় বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হিসেবে।
অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে চীনে কোটি কোটি মানুষের সম্পদও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সময়কালের মধ্যে চীনে ৮৫ কোটিরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে দেশটিতে চরম দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। একই সঙ্গে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনে যে কর্মশক্তি আছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ২৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করবে, যা হবে আজকের জার্মানি। তারপরও অর্থনৈতিক এই সাফল্যের সুফল ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনে সব মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। ধনকুবেরের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও তার পাশাপাশি দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনে প্রবৃদ্ধির হার যদি ৫ থেকে ৬ শতাংশেও এসে দাঁড়ায়, তবুও বিশ্বের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যে দেশটি সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করবে। -সূত্রঃ বিবিসি