একজন জনতার মুক্তিযোদ্ধা নেতা
প্রকাশের সময় : 2019-11-21 11:58:19 | প্রকাশক : Administration
প্রভাষ আমিনঃ সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির রাজনীতি করতেন। রাজনীতির মারপ্যাচে তার শেষ জীবন কাটাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘদিন ভুগছিলেন ক্যান্সারে। ৪ নভেম্বর দুপুরে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। কিন্তু এসব পরিচয় নয়, সাদেক হোসেন খোকাকে আমি গভীরভাবে ভালোবাসি। কারণ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যে ক্র্যাক প্লাটুনের যুদ্ধের গল্প রূপকথাকেও হার মানায়, খোকা ভাই ছিলেন তাদের একজন।
নাসির উদ্দিন ইউসুফঃ সাদেক হোসেন খোকা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে তিনি সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে আদর্শিক রাজনীতিতে আমার সঙ্গে তার দ্বিমত ছিলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের সংযোগ ছিলো। খোকা ঢাকা শহরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের বড় সত্য এটাই। যে যাই বলুক না কেনো, এই সত্য অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের যোগাযোগ ছিলো। আমাদের দেখা হয়েছে। আমি, মায়া, খোকা, আজিজ আমরা যে কয়জন নেতৃস্থানীয় ছিলাম,তাদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ হয়েছে, আগরতলার মেলাঘরে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ছিলাম ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা। খোকা ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা না হলেও ঢাকার অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রতীক ইজাজঃ সাদেক হোসেন খোকা। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র। জীবনের প্রথম সাংবাদিকতায় ইউটিলিটি বিট ছিলো আমার। নগর ভবনে নিয়মিত যেতে হতো। তখনই মেয়র হিসেবে তাকে পাই। আমরা বলতাম খোকা ভাই। নেতা হিসেবে স্থানীয় মানুষের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। আমি দেখেছি, শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় খোকা ভাই যখন পূজা মন্ডপে যেতেন, হিন্দু দোকানীরা দোকান ফেলে ‘খোকা ভাই’ বলে রাস্তায় নেমে আসতেন। এমনতর অসংখ্য উদাহরণ আছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। হাসিমুখ ছিলেন। মেয়র হিসেবে একেবারেই কম কাজ করেননি নগরীর জন্য। তার ও হানিফ ভাইয়ের (আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র) পর থেকে এ নগরীতে মেয়রদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। মেয়র নির্বাচন উৎসব হারিয়েছে। খোকা ভাই, আপনার জন্য শ্রদ্ধা। অসীম ভালবাসা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনাকে স্যালুট। ওপারে ভালো থাকবেন। আপনার ভালো কাজ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে বহুদিন।
শেখ মিরাজুল ইসলামঃ সাদেক হোসেন খোকার সময় দেশে একধরনের রাজনীতি ছিলো। এখন রাজনীতি অন্য ধরনের। সবকিছু ছাপিয়ে তার বীর মুক্তিযাদ্ধা পরিচয় টিকে থাকবে। রাজনীতির কারণে রাজনীতি করার কারণটি সেখানে গৌণ। অন্তত কেউ বলবে না তিনি দেশদ্রোহী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিপক্ষে ছিলেন। এই কারণে তার রাজনৈতিক জোটে জামায়াত ছিলো, যেভাবে এখন রাজনীতিতে টিকে থাকতে নতুন চেহারায় আওয়ামী লীগের ভিতর জামায়াত বেঁচে আছে। এগুলো রাজনৈতিক সমীকরণ। একে দেশপ্রেমের ব্যারোমিটার বা অন্য কোনো যন্ত্র বা ফিল্টার দিয়ে মাপা যায় না। কারও ক্ষেত্রে তা পরিমাপ করা গেলেও সাদেক হোসেন খোকার গায়ে এই অপবাদ টিকবে না। খোকার দেশপ্রেম ছিলো আসলেই দেশপ্রেম। বিএনপি আগামীতে আরেকটা সাহসী খোকা পাবে না।