প্রবাসীদের রেমিটেন্সে সুবাতাস অব্যাহত প্রণোদনা দিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
প্রকাশের সময় : 2019-11-21 11:59:39 | প্রকাশক : Administration
সিমেক ডেস্কঃ সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। এই অংক এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। আর গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে বেড়েছে ৩২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
প্রতি বছর দুই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। আগষ্টে কোরবানির ঈদের পর ধারণা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি। সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অক্টোবর মাসে পাঠিয়েছেন ১৬৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এর আগে গত মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল জুলাই মাসে; ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে। সাধারণত ঈদের পর প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠান। কিন্তু এবার দুই ঈদের পরও রেমিটেন্স বেড়েছে। প্রণোদনা দেওয়ার কারণে রেমিটেন্স বাড়ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সে সব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন; বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। বাংলাদেশে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, “অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এখন রেমিটেন্স। গত কয়েক বছর ধরেই রেমিটেন্সে সুবাতাস বইছে। রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখছেন।“
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আহরণ করে ভারত। যার পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন ডলার। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা, এরা বছরে ৬৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স অর্জন করে। অথচ আমরা বছরে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করি। রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের আরও নজর দিতে হবে। তবে বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে করে এবার ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছি।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ঐ ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে; তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।
রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। - সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম