উড়ালসেতু পাল্টে দিয়েছে রাজধানীকে
প্রকাশের সময় : 2019-12-04 10:33:36 | প্রকাশক : Administration
আমির হোসেনঃ সময় এগিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। পাল্টে যাচ্ছে পৃথিবী। তার সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতি অগ্রগতিতে এগুচ্ছে দেশ। পাল্টাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ। দিন দিন বেশ ভালো উন্নয়ন হচ্ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে নগরী। ইতোমধ্যে রাজধানীতে অনেক গুলো উড়ালসেতু হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। বিশ্বের পাল্টে যাওয়া শহর গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
আমাদের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার ভবিষ্যত রোডপ্ল্যান দেখলে বিস্ময় তৈরি হবে। বর্তমানে রাজধানীর মধ্যে যানজট দূর করার জন্য কয়েকটি ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতু তৈরি করা হয়েছে। যার সৃষ্টির সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ছুটছে। রাস্তায় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে যানবাহন। কিন্তু গাড়ি বৃদ্ধির অনুপাতে সরণির বিস্তৃতি না বৃদ্ধি হওয়ায় খুবই কমে যাচ্ছে বাহনের গতি। যার ফলে ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতু হয়ে উঠছে এ নগরীর নির্ভরযোগ্য বিকল্প এক মাধ্যম। কর্মক্ষেত্রে যথাসময়ে পৌঁছাতে এবং সময় বাঁচাতে উড়ালসেতু রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
মহাখালী উড়ালসেতুঃ রাজধানী ঢাকায় সর্বপ্রথম খিলগাঁও উড়ালসেতুর তৈরির কাজ শুরু করলেও মহাখালী উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ আগে সম্পূর্ণ হয় এবং খিলগাঁও উড়ালসেতুর আগেই উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যে কারণেমহাখালী উড়ালসেতুকেই দেশের প্রথম উড়ালসেতু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়। শেষ বিকেলের লালিমাময় আকাশ দেখতে বা সন্ধ্যাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য কিংবা পথিকের উদাসী সময় কাটানোর জন্য মহাখালী উড়ালসেতুর ফুটপাতদ্বয় একেবারেই মন্দ নয়।
খিলগাঁও উড়ালসেতুঃ রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ত একটি এলাকা খিলগাঁওয়ে এই উড়ালসেতু তৈরি করা হয়। এটি একদিকে রাজারবাগকে সংযুক্ত করেছে অন্যদিকে মালিবাগকে এবং তৃতীয় দিকে সায়েদাবাদকে। আরেকটি লুপ মাদারটেক, কদমতলী, বাসাবো ও সিপাহীবাগকেও যুক্ত করেছে উড়ালসেতুর সাথে। এটি নির্মাণের ফলে খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ের যানজটের পরিমাণ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। সকালের প্রাতভ্রমণ অথবা গোধূলি লগ্নে এই উড়ালসেতুর ফুটপাতে অনেকেই হাঁটতে আসেন।
বিজয় সরণি উড়ালসেতুঃ ঢাকার বিজয় সরণিতে বহুল আলোচিত র্যাংগস ভবন ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করার মাধ্যমে বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়। তেজগাঁও রেলক্রসিং থেকে যানবাহনকে মুক্ত করতে এবং ঢাকার পূর্ব দিকের সাথে কেন্দ্রের যোগাযোগ স্থাপন করতে এই উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়। সোডিয়াম বাতির আলোতে সজ্জিত সম্পূর্ণ উড়ালসেতুটি বিজয় সরণির সাথে গুলশান, তিব্বত এবং সাত রাস্তাকে সংযোগ স্থাপন করেছে।
কুড়িল উড়ালসেতুঃ রাজধানীর কুড়িল উড়ালসেতু চারটি লুপের সমন্বয়ে নির্মিত দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ঝলমলে আলোতে কুড়িল উড়ালসেতুর সৌন্দর্য আরও বাড়ে। অনন্য হয়ে ওঠে এর পরিবেশ। স্থানীয় অনেক মানুষ সন্ধ্যাকালীন অবকাশে কিছু মুহূর্ত পার করার জন্য এখানে এসে থাকেন। ৩.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কুড়িল উড়ালসেতুর চারটি লুপ দিয়েই ওঠা-নামা করা যায়। এই লুপগুলো হলো বনানী, কুড়িল, খিলক্ষেত ও পূর্বাচল প্রান্তে।
মেয়র হানিফ উড়ালসেতুঃ প্রায় ১১.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উড়ালসেতু। একশ’ বছর আয়ুর এ উড়ালসেতুর কারণে উপকৃত হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৩০টি জেলার জনগণ। উড়ালসেতুটির লেন সংখ্যা ৪টি এবং এতে প্রবেশের জন্য পথ রয়েছে ৬টি। মোট ওঠা-নামার পথ রয়েছে ১৩টি। ফ্লাইওভারটির ডিজাইন করেছে কানাডিয়ান কোম্পানি লি কানাডা।
জিল্লুর রহমান উড়ালসেতুঃ রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থায় অসাধারণ পরিবর্তন এসেছে জিল্লুর রহমান উড়ালসেতুর মাধ্যমে। পূর্বে মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট যাতায়াত করতে একজন যাত্রীর ন্যূনতম দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগত। আর উড়ালসেতু দিয়ে একই দূরত্ব যেতে সময় লাগছে মাত্র ২০-২৫ মিনিট।
মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসেতুঃ অনেক প্রতীক্ষিত মগবাজার-মৌচাক উড়ালসেতু ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবরে পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। বিভিন্ন অংশ দিয়ে উড়ালসেতুতে ওঠানামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা, বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে র্যাম্প রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। এই উড়ালসেতু চালুর মাধ্যমে যানজটের দূর্ভোগ থেকে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণ বাঁচলো। অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা সহজ হচ্ছে।