সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন
প্রকাশের সময় : 2019-12-18 11:43:07 | প্রকাশক : Administration
সেরাজুল ইসলাম সিরাজঃ আগে কখনও সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া হয়নি। গল্প শুনে এবং খবর পড়ে সেন্টমার্টিনের একটি ছবি মানসপটে গেঁথে ছিল। কল্পনার জগৎজুড়ে ছিল ছিমছাম গোছানো একটি শহর। ৬ এপ্রিল (বুধবার) আমাদের বহনকারী জাহাজটি তখন সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি। দূর থেকে দু’চোখ ভরে দেখছিলাম সেই অপরূপ সৌন্দর্য। সারি সারি নারিকেল গাছ, কিছু ঝাউগাছ ও কেওড়া। নীলাভ পানি মনকে উদ্বেলিত করে তুলছিল। জাহাজের অনেকেই তখন মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত।
যতই তীরের কাছাকাছি আসছিলাম ততোই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ভাটার টান থাকায় বিচটিও তখন অনেক বিস্তৃত। আর শুকনো বালির উপর সূর্যের আলো অন্যরকম একটি ভালোলাগায় শিহরিত হচ্ছিলাম। উত্তেজনায় ছটফট করছিলাম নীল জলে পা ভেজানোর জন্য। কিন্তু এখানে কিছুটা বিপত্তি দেখা দিল। সরাসরি জেটিতে নামার কোনই সুযোগ নেই। দু’শ গজ দূরে জেটির সিঁড়িতে যেতে হবে ট্রলারে করে। ট্রলারে ওঠাও এক রকমের যুদ্ধই বলা চলে। জাহাজের গায়ে লাগানো ট্রলারটি বিশাল বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় সব সময়েই দুলছিল দোলনার মতো। জনা তিনেক ব্যক্তি মোটা লাইলনের রশি দিয়ে প্যাচ দিয়েও দুলুনি থামাতে পারছিল না।
এ রকম জেটি আর কোথাও দেখিনি আমি। মাঝনদীতে গিয়ে আটকে থাকা ব্রীজের মতো। এক মাথা ডাঙ্গায় আরেক মাথা সাগরের পানিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। ভয়ঙ্কর কসরত করে নামতে হলো ডাঙ্গায়। কারো সাহায্য ছাড়া নতুন কারো পক্ষে এতে ওঠা-নামা কোনভাবেই সম্ভব নয়। মাঝির হাত ধরেই একে একে ওয়াকওয়েতে নামছিলেন যাত্রীরা।
স্থানীয়রা অবশ্য ব্যাঙের মতো হাতে ভর দিয়ে লাফিয়ে নামছিলেন। কেউ একজন নামতে বিলম্ব হচ্ছিল। ট্রলারে থাকা যুবকটি বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠেন, তাড়াতাড়ি করেন। ট্রলারে করে লোকজন যখন নামছিলেন, জাহাজটি তখন জেটির শেষ মাথায় নোঙ্গর করা। জাহাজ জেটির মধ্যে ব্যবধান ৩ ফুট। জাহাজ যাতে জেটিতে ধাক্কা দিতে না পারে সে জন্য জেটির পাশে বিদ্যুতের খুঁটির মতো মোটা গাছ দিয়ে বেড়া তৈরি করা হয়েছে।
অনেক কসরত করে জেটিতে নামার পর মনের মধ্যে প্রশান্তির আবহ ছড়িয়ে যাবে। পূর্বে যতদূর চোখ যায় শুধু নীল পানি আর পানি। পশ্চিমে মানসপটে আকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ। যাকে অনেকে আদর করে নারিকেল জিনজিরা বলে ডাকেন। অনেকেই তখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার উপদলে ভাগ হয়ে গ্রুপ ছবি তুলছিলেন।
পেছন থেকে সহকর্মী মবিনুল ইসলাম তাড়া দিলেন, চলেন দ্রুত রুমে যাই ব্যাগেজ রেখে বেড়িয়ে পড়তে হবে। কথা ছিল বিকেলে ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়ার। সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন। জেটি থেকে লম্বা একটি ফুটব্রিজ পশ্চিমে সেন্টমার্টিন বাজারের প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। জেটি ধরেই হাঁটছিলাম তখন পর্যন্ত মানসপটে আঁকা সেন্টমার্টিন হুবহু মিলে যাচ্ছিল। সবকিছুই ছবির মতো মনে হচ্ছিল। কিন্তু বাজারের কাছাকাছি আসতেই প্রথম নজরে আসে ময়লার ভাগাড়। পেছনে থাকা কয়েকজন বিদেশি পর্যটকের দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম তাদের অভিব্যক্তি কেমন। মনে মনে লজ্জাও পাচ্ছিলাম, এরা দেশে ফিরে গিয়ে কি বলবে বাংলাদেশ সম্পর্কে!
বাজারে প্রবেশ দ্বারে হাতের বামে প্রথমেই পড়বে টিকিট কাউন্টার ও যাত্রী ছাউনী। টং ঘর টাইপের ঘরটি কংক্রিটের পিলারের উপর নির্মিত। নীচের ফাঁকা স্থানে পুরোপুরি ময়লার ভাগাড়। সেই ময়লা ছড়িয়ে রয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। ময়লার বেশি অংশই হচ্ছে বিস্কিট ও পলিথিন কাগজ। বাজারের বর্জও রয়েছে।
স্বপ্ন ভঙ্গের শুরু এখান থেকেই। এরপর যতই পা বাড়াচ্ছিলাম ততই যন্ত্রণা বাড়ছিল, আট বর্গ কিলোমিটার এ দ্বীপটিতে। - স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম