সর্ববৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু

প্রকাশের সময় : 2020-01-29 14:32:30 | প্রকাশক : Administration
সর্ববৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু

রশিদ মামুনঃ তিন বছর নয় মাস ২৩ দিন পেরিয়ে ১৩ জানুয়ারি ২০২০। প্রায় ১০ হাজার চীনা ও বাংলাদেশী শ্রমিক ও প্রকৌশলীর দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম। দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নতুন এক ইতিহাসের সূচনা হলো। দেশের ইতিহাসে প্রথম মেগা পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন শুরু করেছে বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সিনক্রোনাইজিংয়ের পর কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে।

শুরুতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করেছে। ২৭ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রটি প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট পূর্ণ ক্ষমতায় চালাচ্ছে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটির সমান দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরু করবে আগামী মে মাসে। দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা কেন্দ্রটির বাংলাদেশ এবং চীন সমান অংশীদার। চীনের এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। কেন্দ্রটি দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র যা উৎপাদন শুরু করল।

পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের একজন প্রকৌশলী জানান, ঠিক বেলা ১১টায় আমরা কেন্দ্রটি গ্রিডের সঙ্গে সিনক্রোনাইজিং করেছি। শুরুতে ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও আস্তে আস্তে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা সারাদিনই ১২০ মেগাওয়াট উৎপাদন করেছি। এর মধ্যে কেন্দ্রটির নিজস্ব ব্যবহার বাদে ১০০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, চাইলেই এই পর্যায়ে একবারে উৎপাদন করা যায় না। ধীরে ধীরে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হয়।

সরকার যেসব মেগাপ্রকল্প নির্মাণ করছে তার মধ্যে পায়রা অন্যতম। সরকারের অগ্রাধিকার ১০ মেগাপ্রকল্পের বাইরে থাকলেও পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রকে সুপার ফাস্ট তকমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসায় অন্তত এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন কমানো যাবে। এতে বিদ্যুত খাতে বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে ফার্নেস তেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত ১৩ দশমিক ৬২ টাকা এবং ডিজেলে ২৭ দশমিক ২১ টাকায় উৎপাদন করা হয়। এর বিপরীতে পায়রার উৎপাদন খরচ থাকবে সাড়ে ছয় টাকার নিচে। ফলে প্রতি বছর বিদ্যুত খাতে বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সরকার প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের সঙ্গে ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয়। এজন্য বিদ্যুত উৎপাদনে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগের প্রথম বাস্তবায়ন হলো পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে মধ্যভাগের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যুত সঞ্চালনে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। পায়রা-রামপাল-রূপপুরের বিদ্যুত নেয়া হবে গোপালগঞ্জে। সেখান থেকে ঢাকাতে বিদ্যুত সঞ্চালন করা হবে। জিরো লোডশেডিং আওয়ার বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য এই মেগাপ্রকল্পটির কাজ শুরু করেছে।

বিগত ২০১৪ সালের ৯ জুন চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট এ্যান্ড ইমপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)-এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) বাংলাদেশে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করে। এরপর সমঝোতা স্মারক, যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন আর দরপত্র আহ্বানের পর ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ কেন্দ্রটির নির্মাণ শুরু হয়। চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান এনইপিসি কেন্দ্রটির ঠিকাদার নিযুক্ত হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির আর্থিক সংস্থানের আগেই ঠিকাদারকে ২০ ভাগ অর্থ ব্যয়ের শর্ত দেয়া হয়। এতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি সই’র পরের দিন থেকেই কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে এনইপিসি। যাতে কেন্দ্রটির কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রের অনেক আগে উদ্যোগ নিয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র। কেন্দ্রটি নির্মাণে বিসিপিসিএল সর্বাধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এছাড়া একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীন কোন কোন ক্ষেত্রে কয়লাচালিত কেন্দ্রে উন্মুক্ত অবস্থায় কয়লা রেখে দিলেও পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র কয়লা রাখার জন্য যে কোল ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে তা পুরোপুরি ঢাকনা যুক্ত। জাহাজ থেকে কয়লা উঠার সময়ও ঢাকনাযুক্ত কনভেয়ার বেল্টে আনা হবে।

প্রতিটি এক লাখ ৮০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার চারটি কোল ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। যা দিয়ে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৫৭ দিনের কয়লা মজুদ রাখতে পারবে। নির্গত গ্যাস ধরতে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজার ইউনিট (এফজিডি) নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রটির ৯৬ ভাগ ফ্লু গ্যাস ধরা হবে। বিদ্যুত উৎপাদনের পর ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ছাই ‘এ্যাশ হপারে’ ধরা হবে। এর বাইরেও কেন্দ্রটির ২২০ মিটার উচ্চতার চিমনি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৭৫ তলা ভবনের সমান উঁচু চিমনি দিয়ে বাতাসের নির্দিষ্ট স্তরে ধোঁয়া ছাড়ার ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যেই থাকবে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com