বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
প্রকাশের সময় : 2020-01-29 15:00:36 | প্রকাশক : Administration
আসাদ লিমনঃ মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে জমিদার বাড়িটি এখনো সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির কারুকার্য দেখলে বোঝা যায় তৎকালীন জমিদাররা কতটুকু সৌন্দর্যপ্রিয় ও রুচিশীল ছিলেন।
জমিদার বাড়ির ৫ একর ৩২ শতাংশ জমিতে সুউচ্চ ভবন, দৃষ্টি নন্দন বিশাল দিঘী আর ধ্বংসাবশেষ পুকুর ঘাট আজো সৌন্দর্যের আভাস ফুটিয়ে তোলে। সুউচ্চ জমিদার বাড়ির প্রবেশ মুখে রয়েছে বিশাল দুটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বার পেরোলেই খোলা চত্তর ও ফুলের বাগান।
তারপরই রয়েছে জমিদার বাড়ির মূল ভবন। জমিদার বাড়ির আঙিনায় রয়েছে চারটি বিশাল ভবন, বন্দীশালা, গোলাঘর, রংমহল, দরবার হল, অন্দর মহল। আরো আছে অন্দর মহলের শানবাঁধানো চার ঘাট বিশিষ্ট একটি দিঘী। স্থানীয় জনশ্রুতিতে রয়েছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় থানাধীন বিনোদপুর ছিল বালিয়াটি জমিদারদের পূর্ব নিবাস।
মহেশরাম সাহা নামে জনৈক বৈশ বরেন্দ্র শ্রেণির ছোট্ট এক কিশোর নিতান্তই ভাগ্যের অন্বেষনে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি আসেন এবং জনৈক পানের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরি নেয়। পরবর্তীতে ঐ বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে শশুরের সাথে ব্যবসা করে প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী হন। মহেশ রামের ছেলে ঘনেশ রাম লবণের ব্যবসা করে আরো উন্নতি লাভ করেন।
ঘনেশরামের ঘরে গোবিন্দরামসহ চার ছেলে জন্মগ্রহণ করে। গোবিন্দরাম বালিয়াটিতে বিয়ে করে এখানেই বসবাস শুরু করেন। গোবিন্দরামের চার ছেলে যথাক্রমে আনন্দরাম, দধিরাম, পন্ডিতরাম ও গোপালরাম। এই চার ভাই প্রথমে একসাথে এবং পরে পৃথক পৃথকভাবে ব্যবসা শুরু করেন। উক্ত চার ভাই থেকেই বালিয়াটি গোলাবাড়ি, পূর্ব বাড়ি, পশ্চিমবাড়ি, মধ্যবাড়ি ও উত্তর বাড়ি নামে ৫টি জমিদার বাড়ির সৃষ্টি হয়।
আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে উক্ত চার ভাইয়ের মাধ্যমেই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। জমিদার বাবুরা বেশির ভাগ সময়ই রংমহলে কাটাতেন। রংমহলে তারা সুর, সরাব আর নর্তকীদের নৃত্যের ঝংকারে মগ্ন থাকতেন। বর্তমানে রংমহলের কক্ষটিতে শোভা পাচ্ছে জমিদারের ব্যবহার্য বিভিন্ন আসবাবপত্র। রংমহলে রাখা কাঁচের আয়না ও শ্বেত পাথরে দুটি গাভী খুব সহজেই সকলের দৃষ্টি কাড়ে।
১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর জমিদার বাড়িটি তাদের তত্বাবধায়নে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা এটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়। বর্তমানে প্রত্নতত্ব বিভাগ টিকিটের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রবেশের ব্যবস্থা করেছে। জমিদার বাড়িতে প্রতিনিয়তই দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসে। জমিদার বাড়িতে দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাড়িটিতে বিভিন্ন নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্রও নির্মাণ করা হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ খুব শীঘ্রই এটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করার চিন্তা করছেন। - পরিবর্তন ডট কম