সুন্নাতের আলোকে স্বাস্থ্য (১)

প্রকাশের সময় : 2020-02-26 10:50:31 | প্রকাশক : Administration

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম।” - সূরা আল মায়িদাহ, আয়াত-০৩

“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ এমন ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি আশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” - সূরা আল আহযাব, আয়াত-২১

“আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তা হচ্ছে আল্লাহর কোরআন এবং আমার সুন্নাত। যতদিন তোমরা এই দুইটিকে আকড়ে ধরে রাখবে ততদিন তোমরা গোমরা (পথভ্রষ্ট) হবে না।”

- আল্লাহর রাসূলের বিদায় হজ্বের ভাষন তাওহীদের পর সুস্থ্যতা শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর একত্ত্ববাদের বাণীর (ঈমান) পর তোমাদের সুস্থতার সমতুল্য আর কোন জিনিস দেয়া হয়নি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে সুস্থতা প্রার্থনা কর।” - মুসনাদে আহমাদ

আরবি ক্যালেন্ডারে রাত আগে আসে, দিন পরে আসে। সূর্য ডোবার পরেই শুরু হয় পরের দিনের রাত্র। সূর্য ডোবার পরেই হয় মাগরিব। আর মাগরিবের নামাজের পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। সামনে খাবার রেখে ক্ষুধার্ত অবস্থায় নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক বর্ণিতঃ            রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, খাবার সামনে উপস্থিত করা হলে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেলেও নামাজ পড়ার পূর্বে খাবার দিয়ে শুরু কর। খাবার রেখে নামাজের জন্য ব্যস্ত হয়ো না। - মুসলিম শরীফ।

ইসলামে রাতের খাবারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “তোমরা অবশ্যই রাতের খাবার খাবে, তা একমুঠ খেজুর হলেও।” - তিরমিজি

মাগরিবের সময় হচ্ছে রাতের খাবারের সময় । বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার খেতে হবে। এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে রাসূলে কারীম (সাঃ) নিজ বাসগৃহে গিয়ে ঘুমিয়ে যেতেন। ঘুমের পূর্বে স্ত্রী ও সন্তানেদর সাথে উপদেশমূলক গল্প অথবা কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলা সুন্নাত।

রাসূল (সাঃ) দীর্ঘ রাত্রি পর্যন্ত কিসসা কাহিনীর মজলিশ হয়, সেগুলোতে যেতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এশার নামাজের পূর্বে ঘুমাইতেও নিষেধ করেছেন।

আল-আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রাতের (নফল) নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তিনি রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন, তারপর ওঠে তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়াতেন। রাত শেষ হয়ে আসলে তিনি বিতর নামাজ পড়ে শয্যা গ্রহণ করতেন এবং আগ্রহ হলে স্ত্রীর নিকট এসে প্রয়োজন মেটাতেন। অত:পর আযান শোনামাত্র তিনি উঠে পড়তেন এবং নাপাক অবস্থায় থাকলে গোসল করতেন, অন্যথায় উযু করে নামাজের জন্য বের হতেন । - তিরমিজি

সুন্নাত এবং নফল নামাজ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ঘরে পড়তেন। ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করতেন।

ফজরের নামাজের পর মসজিদে সাহাবিদের নিয়ে কিছু সময় কাটাতেন। ফজরের নামাজের পর ঘুমানো, এমনকি রমজানেও আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত ছিল না। বিঃ দ্রঃ- ফজর ও ফরজ দুইটি আলাদা শব্দ।

হযরত খাওয়াত ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ দিনের প্রথমভাগে (সকাল বেলা) ঘুমানো দোষনীয়, মধ্যভাগে (দূপুরে) ঘুমানো স্বভাবজাত এবং শেষভাগে ঘুমানো (আছেরর পর) নির্বুদ্ধিতা । টিপসঃ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হলে, অবশ্যই আপনাকে রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাইতে যেতে হবে। আর ফজরের নামাজের পর আপনি সকাল বেলা একটু হাঁটুন অথবা বাগানের ফুল গাছে পানি দেন অথবা নাস্তা তৈরিতে লেগে যান অথবা ঘর গোছানো অথবা ছাদে সকালের হালকা রোদে সূর্যস্নান (১০-১৫ মিনিট) করুন।।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দূপুরের খাবার খেয়ে কাইলুল্লাহ করতেন। তারপর জোহরের নামাজ আদায় করতেন। তবে শুক্রবার ব্যতিক্রম। সাহাবীগণ জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যেতেন। তারপর জুমার নামাজ আদায় করে খাওয়ার পর কাইলুল্লাহ করতেন। জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

আমাদের সময়ে জোহর বা জুমার ওয়াক্ত শুরু হয় ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টা ১৬ মিনিট। যতদূর জানা যায়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করতেন।

কাইলুল্লাহ এবং ঘুম এক কথা নয়। কাইলুল্লাহ (Nap) অর্থাৎ স্বল্প সময়ের হালকা ঘুম। এটা ১৫ থেকে ২০ মিনিট। আপনি যদি ৩০ মিনিট অতিক্রম করেন, তাহলে আপনি গভীর ঘুমে প্রবেশ করে যাবেন। আর গভীর ঘুমে প্রবেশ করলে সাইকেল (ঈুপষব) পুরো করে না উঠে আসলে আপনি হবেন ক্লান্ত, শ্রান্ত, অবসন্ন ।

টিপসঃ দূপুরে আহারের পর টেবিলে মাথা রেখে বা চেয়ারে হেলান দিয়ে বা সোফাতে শুয়ে কাইলুল্লাহ করা যেতে পারে। বিছানাতে শুয়ে কাইলুল্লাহ করতে গেলে গভীর ঘুমে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি আসরের পর নিদ্রা গেল সে তার আকল বুদ্ধি ভোঁতা করে ফেলল। সে যেন তার আকল বুদ্ধি ভোঁতা হওয়ার জন্য নিজেকে ব্যতীত আর কাউকে দায়ী না করে। - জামে সগীর

রমজান মাসে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইফতারি এবং রাতের খাবার আলাদা ছিলো না। ইফতারি এবং রাতের খাবার একসাথে খেয়ে নিতেন।

আর আমরা ইফতারিতে হরেক রকম খাবার খাই এবং তারাবি নামাজের পর রাতের খাবার খাই। এতে বেশি সমস্যায় পড়েন ডায়াবেটিসের  রোগীরা। তারা ইফতারির সময় ডায়াবেটিসের ঔষধগুলো নেন। ইফতারি হালকা করেন তদুপরি তারাবি নামাজে দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো এবং উঠাবসার কারণে তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমান কমে যাওয়ায় একটা ঝুঁকি থাকে। তাই আমি বলব, ইফতারির পর মাগরিবের নামাজ পড়েই রাতের খাবার খেয়ে নিন। সবার জন্য এটাই উত্তম। ডায়াবেটিকস এবং নন- ডায়াবেটিকস উভয়ের জন্যই উত্তম।

তাছাড়া খাওয়া এবং ঘুমাতে যাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা ব্যবধান থাকা উচিত। এটাই ছিলো আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাত। যাহা আজ উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের অভ্যাস। উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেন এবং দূপুরে আহার ১২-১টা মধ্যে করেন এবং খাওয়ার পর অনেকেই কাইলুল্লাহ করেন। আমাদের সম্পদ ওরা করেছে চুরি, আমাদের করেছে ভিখারী। একটু মজা করলাম।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর দৈনন্দিন জীবন এমন একটা ছন্দে ঘুরতো, যে ছন্দে কোন একটা জায়গায় যদি আপনি সরে দাঁড়ান তবে ঐ ছন্দে আর আপনি ঢুকতে পারবেন না। যেমন ধরুন, দূপুরে খাওয়ার পর আপনি একটা লম্বা ঘুম দিলেন, তাহলে রাতে আপনি আগে আগে ঘুমাতে পারবেন না। আর রাতে আগে আগে ঘুমাতে না পারলে আপনি আগে আগে ঘুম থেকে ওঠতে পারবেন না। আর শেষ রাতে তাহাজ্জুদতো একেবারেই অসম্ভব।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দৈনন্দিন জীবন বিশেষ করে আহার ও নিদ্রা, দিন ও রাতের আবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর এর সাথে তাল মিলিয়ে না চলা অনেক রোগের উপাদান।  বিভিন্ন রোগে করণীয় ও বর্জনীয় কাজ  নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ ডাঃ মোঃ শামছুল হুদা

সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা।

(লিখাটি লিখতে গিয়ে আমি সাবধানতা অবলম্বন করেছি এবং অনেক উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় বইয়ের সাহায্য নিয়েছি। তারপরও এর বিপরীতে যদি কেউ কিছু পেয়ে থাকেন আমাকে জানাবেন। মেসেজ করুন দয়া করে ০১৮১৯-১৪৮৯৭৩)।

হাঁপানীঃ

বর্জনীয়ঃ বিড়ি-সিগারেট, ঠান্ডা খাওয়া, ঠান্ডা লাগানো, ধূলা বালি -- বিশেষ করে ঘরের ধুলা বালি বেশী ক্ষতিকর, কুকুর, বিড়াল এবং অন্যান্য জীব জন্তুর সংস্পর্শ, কার্পেট, ফুলের রেনু। যে খাবারে আপনার শ্বাস কষ্ট বাড়ে সে খাবার যেমনঃ গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, গজার মাছ, পুটি মাছ, বোয়াল মাছ এবং চিংড়ি মাছ। পুই শাক, কচু, কুমড়া, আনারস, কলা (যার যে খাবারে সমস্যা হবে, সে সে খাবার খাবে না)

করণীয়ঃ এড়িয়ে চলুন- ধোয়া, ধূলা, বালি, অন্ধকার স্যাঁত স্যাঁতে স্থান ।

আপনার কক্ষ, তোষক, বিছানা চাদর হতে হবে পরিস্কার শুস্ক এবং ধুলাবালি মুক্ত । তোষক, বালিশ এবং কম্বলে পলিথিনের কভার লাগাবেন।

উচ্চরক্তচাপ / হৃদরোগ

হৃদরোগের বড় দুশমন ধুমপান, জর্দা, সাদাপাতা। এগুলোতে রক্তচাপ বাড়ে, রক্তনালী সরু হয়ে যায় এবং হৎপিন্ড দূর্বল হয়, মানুষের আয়ু কমে যায়।

বর্জনীয়ঃ পাতে লবন, দুধ ও দুধের খাবার। এছাড়া সর, ঘি, মাখন, চর্বি (গরু, খাসী, চিংড়ি, হাঁস, নারিকেল, ডিমের কুসুম, মগজ, কলিজা, পূর্দা, হাড়ের ভিতেরর তৈলাক্ত অংশ)। জন্তুর তেল ক্ষতিকারক, কিন্তু মাছের তেলে ক্ষতি করে না।

করণীয়ঃ মাছ, দেশি মুরগি, সবজী-তরকারী, পাতলা চা, রুটি, ফলমুল, পরিমিত পরিমান ভাত খেতে অসুবিধা নেই। বাড়তি ওজন অবশ্যই কমাবেন তাতে হৃৎপিন্ডের কাজের বোঝা কমবে। নির্ধারিত সময়ে আপনার চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিবেন। হৃদরোগ মাঝে মাঝে চেক-আপ করানো নিরাপদ।

৩ গাউট

বাড়তি ওজন কমাতে হবে।

বর্জনীয়ঃ

অ্যালকোহল

মিষ্টি জাতীয় ড্রিংক

রেড মিট (গরু, খাসি, হাঁসের মাংস)

সামুদ্রিক খাদ্য (সামুদ্রিক মাছ) এবং চিংড়ি।

৪ চর্বি কমানো / বহুমুত্র

বাড়তি চর্বি হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, কোমর ও হাটু ইত্যাদির জন্য বোঝা । চর্বি না কমালে ডায়াবেটিস, হৃৎপিন্ড, অস্তিবাত এবং ফুসফুসের রোগ ভালো হবে না।

যেসব খাবারে গায়ে চর্বি হয়, সেগুলো বাদ দিন। যেসব খাবারে ওজন খুব কম বাড়ে অথচ স্বাস্থের জন্য ভালো, সেগুলো খাবেন।

বর্জনীয়ঃ  যে কোন মিঠা খাবার, সর, ঘি মাখন, চর্বি, তৈলাক্ত মাছ, আচার, চাটনি, গরু, খাসী, ঘন ডাল, তেল/ঘিয়ে ভাজা, ভূনা, মুড়ি, চিড়া, খই, পিঠা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, চিনিওয়ালা কোল্ড ড্রিংক, দাওয়াত খাওয়া।

করণীয়ঃ খাওয়ার শুরুতেই শাক-তরকারীর লাবড়া বা ঝোল (৩ বেলা ৩ বাটি), শশা, ক্ষীরা, টমেটো সালাদ (৩ বেলা), পাতলা স্যুপ, কম তেলের মাছ ও মুরগীর সুরুয়া বা ঝোল, Diet Drinks, লাল চা।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com