মানুষের কলকাকলীতে আবার ভরে উঠুক আমাদের পৃথিবী!!

প্রকাশের সময় : 2020-09-03 17:02:33 | প্রকাশক : Administration
মানুষের কলকাকলীতে আবার ভরে উঠুক আমাদের পৃথিবী!!

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীনঃ বৃষ্টি, বাদল কিংবা ঝড়, তুফান; যখনই আসে, বলে কয়ে আসে। টর্নেডো বলে কয়ে আসে না। কথা নেই, বার্তা নেই; হুট করে এসে চারদিক লন্ডভন্ড করে দেয়। করোনাও অনেকটা টর্নেডোর মত। হুট করে না আসলেও কেমন যেন সবকিছু লন্ডভন্ড করে মহামারী বাঁধিয়ে দিল। কাউকে বুঝতে দিল না। ভাবতেও দিল না। ঠিকমত বিশ্বাস করে ওঠার আগেই পুরো পৃথিবী স্তব্দ করে দিল। নিস্তব্দ করে দিল জনপদ। হঠাৎ করেই বদলে গেল সবকিছু! বদলে গেল সমাজ, রাষ্ট্র তথা চেনাজানা আমাদের প্রিয় বিশ্ব!

বিশ্বের উন্নত জনপদগুলো বদলাতে শুরু করে প্রথমেই। ওরা আক্রান্ত হয় আগে, বদলায়ও আগে। একটা “মুই কি হনুরে” মার্কা হামভরা ভাব নিয়ে চলা বিশ্বের মোড়লরাষ্ট্রগুলো হঠাৎ পুতিয়ে যায়। নেতিয়ে পড়ে। কদিন আগেও বোরকা পড়া নিয়ে মুসলিম মেয়েদের মশকরা করা চীন, ফ্রান্স নিজেরাই পিপিইর নামে বোরকা ধরেছে। কেবল মেয়েরা নয়, পুরুষরাও বোরকা পড়া শুরু করেছে। হিজাবে মুখ ঢাকতে বারণ করা রাষ্ট্র সবাইকে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ছেড়েছে।

কি ছেলে কি মেয়ে; সরকারী আইন। মাস্ক ছাড়া কেউই বাইরে বেরুতে পারবে না। আজাইরা ঘোরাঘুরি করা যাবে না। গাদাগাদি আর গায়ে গায়ে লাগালাগি করে হাঁটা যাবে না। ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলতে হবে। প্রকাশ্য মাখামাখির চরম পর্যায়ে ছিল ওরা। রক্ষণশীল সমাজ যাকে বলে অসভ্যতা। বলা হলো, মাখামাখি করে নোংরামি করার দিন শেষ। এতে কাজ হলো বেশ। বদলে যেতে শুরু করলো ওরা। করোনা কী না পারে! সরকারের এক আদেশে সবাই বদলে গেল।

আমার শোনিমও বদলে গেল। প্রথম দিকে বোঝা যায়নি। অনলাইন গেইম নিয়ে ভালই কাটছিল শোনিমের। স্কুল বন্ধ, পড়াশুনা নেই। আছে শুধু হা করে মনিটরে তাকিয়ে থাকা। একা একাই তাকিয়ে থাকতো আর কী সব দেখে দেখে জোরে জোরে হেসে উঠতো। ব্যায়াম করতো ঘরের মেঝেতে শুয়ে বসে। এভাবে আর কতদিন! তাই ঝিমুনি ধরলো। ঝিমোয় বসে বসে আর শুয়ে শুয়ে। আমি দিব্বি লক্ষ্য করলাম শোনিম বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছিলাম আমিও। রাতভর সজাগ থেকে দিনভর ঘুমাই। আর থাকি অনলাইনে। দুনিয়াশুদ্ধ লোকজনের সাথে যোগাযোগ করি। কার কি অবস্থা জানার চেষ্টা করি। আর বিনামূল্যে শুধু জ্ঞান বিলাই। কঠিন জ্ঞান। ভাল ভাল যেসব কাজ নিজে করিনা, ভুলেও করিনা; অন্যকে তাই করতে বলি। ব্যায়ামের কথাও বলি। নিজেও যে কখনো করিনি, তাও নয়। একদিন করেছিলাম। মিনিট তিনেক করেছিলাম। জুতসই না হওয়ায় আর করিনি।

তবে বদলায়নি আমার শোনিমের মা। একটুও বদলায়নি। তার সবকিছু আগের মতই চলছিল। তার যেমনি বদল নেই, তেমনি কোন নিস্তারও নেই। ঘর সংসার, স্বামী সন্তানের দেখভাল থেকে তার মুক্তি নেই। সবকিছু আগের মতই। কমেনি কিছুই বরং বেড়েছে সবই। সারাক্ষণ মাথায় একটাই চিন্তা। আমাদের তিনজনার খাবার জোগাড় করতে হবে। একসঙ্গে বাজার করে যা রাখা হয়েছিল ১৫ দিনেই সব শেষের পথে। এ জন্যে কদিন ধরেই তার মন খুব খারাপ। চাইলেও হাসতে পারে না। তবে ১৬তম দিনে মহাকান্ড ঘটলো। তার মুখে হাসি ছড়ালো। খুশীমনে ঘোষণা দিল, আজকে হবে। রাতের ম্যানুতে গোশত হবে।

টানা কদিনের কঠিন গরমের পরে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি যেমনি স্বস্তি দেয়, শোনিমের আম্মুও তেমনি স্বস্তিদায়ক খবর দিল। ‘ওয়াও’ বলে শোনিমকে নিয়ে চিৎকার দিলাম। শোনিমের চিৎকারটা তেমন জোরালো হলো না। জোরালো হলো আমারটা। দৌঁড়ে কিচেনে গেলাম। কিচেনের বেসিনে গরুর মাংশ রাখা। পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখলাম। ছেলেবেলায় একসাথে কোরবানীর সব গোশত বাসায় নিয়ে আসার পর পাতিলের পাশে বসে চোখ বড়বড় করে কাঁচা মাংশ দেখতাম। আজকেও তাই দেখলাম।

চোখ বড় বড় করে দেখলাম। কাঁচা মাংশ; কিন্তু দেখতেও অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। গত কদিনে মাংশ খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এমনিতেও যে খুব একটা খাই সেটাও নয়। তবে ঘরে থাকার পরে না খাওয়া, আর না থাকার কারণে খেতে না পাওয়া এক জিনিস নয়। আমরা কদিন ধরে কম করে খাওয়া শুরু করেছিলাম। ঘরে মজুদ কাঁচা দ্রব্যের টান পড়ায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। আমরা তিনজনায় বাধ্য হয়েই তিনবেলার খাবার দুবেলায় নামিয়ে এনেছিলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠি দেরী করে যেন ব্রেকফাস্ট খেতে না হয়। জোহর পড়ে বেলা তিনটের দিকে পানিতে নুডুলস ভিজিয়ে খেতে বসি। সকাল কাম দূপুরের খাবার। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মুখে খাবারের রুচী বেড়ে গেছে। কিন্তু কাল কী খাবো এই ভাবনায় খুব বেশী পরিমাণে খাই না। হিসেব করে খাই। বেশী খাই পানি। ঢকঢক করে দুকাপ পানি একবারে খেয়ে নেই। আর আল্লাহকে ডাকি। অন্তত সাপ্লাইয়ের পানিটা যেন বন্ধ না হয়।

পানি বন্ধ হলে মহাবিপদ হয়ে যাবে। নির্ঘাত মৃত্যু হবে। যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার শেষ অস্ত্রটাও আর থাকবে না। তাই পানিটা দরকার। বেঁচে থাকার মত খাবার যথেষ্ট আছে। চাল আছে, ডাল আছে। আর আছে পর্যাপ্ত লবন। তেল পেঁয়াজ তেমন নেই। লাগবেও না। ভাতের সাথে ডালসেদ্ধ হলেও ঢের টিকে থাকা যাবে। শোনিম খুব শক্ত। ও আমাকে সাহস দেয়। শক্তি দেয়। দেয় বেঁচে থাকার প্রেরণা। গত কয়টা দিনের হিসেবী জীবন আমাকে এবং আমাদেরকে সত্যি বদলে দিয়েছে।

রাতের ডাইনিং টেবিল। বাপবেটার দুই প্লেটে দুটো গোশতের স্ট্যাক রাখা। কাঁচা অবস্থায় স্ট্যাক দুটো যতটুকু মোটাসোটা ছিল; ভাজার পর একেবারেই তেমনটি নেই। শুকিয়ে গেছে। আস্ত ইলিশ মাছের শুকনো শুটকী দেখতে যেমন, ঠিক তেমন। তবে শোনিম তাতেই খুশী। আফটার অল বিফস্ট্যাক। সাথে দুটো করে এসপারাগাস ভেঁজে রাখা। আমার চক্ষু এসপারাগাসের দিকে। ওটা তো ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। আবার আসলো কোত্থেকে!

নিজের প্লেটে এসপারাগাস নিতে নিতে বললো, ফ্রিজের তলায় পাওয়া গেছে। এসপারাগাস নিলেও বিফস্ট্যাক নিল না শোনিমের আম্মু। স্ট্যাক ভাল লাগে না বলে আমাদেরকে খাবার শেষ করার তাগিদ দিল। অভিনয়! মিথ্যে মিথ্যে অভিনয়! বিফস্ট্যাক আর থাকলে তো নেবে? অথচ এমনভাবে অভিনয়টা করলো যেন এর চেয়ে সত্যি কথা দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই। বাইশটা বছরে মানুষটি একটুও বদলালো না। ঘরের কর্ত্রীরা বোধহয় এমনই হয়। দুনিয়া বদলে যায়; তারা কখনোই বদলায় না।

বদলায়নি আমাদের দেশীয় আতেলগুলোও। জঘন্যতম ফাজলামো করেছে গেল ক’টা মাস। মানুষকে আতঙ্কে রেখে মেরে ফেলার যাবতীয় কাজ করেছে। দলবেঁধে করেছে। কেউ পেপারে করেছে। কেউবা টিভিতে। করোনায় ঘরে আরামে থাকতে থাকতে একেকটা তেলের বাটির মত দেখতে হয়েছে। কেবল হয়নি এদের একটা আশঙ্কারও বাস্তবায়ন। এদের মত শকুনের দোয়ায় দেশের হাজার হাজার মানুষ মরেনি। মরবে কেন? আমরা তো নিশ্চিত, চকচক করলেই যেমনি সোনা হয় না; তেমনি খক খক করলেই করোনা হয় না।

করোনা প্রমাণ করেছে আতেলগুলো ভূয়া। এরা করোনা দিয়ে না পেরে আফ্রিকা থেকে পঙ্গপাল আনার চেষ্টা করেছে। পারেনি। এরা করোনায়ও বদলায়নি। বদলাবেও না কোনদিন। জানি না আমাদের পাঠক বদলেছে কি না। কয়টা মাস সম্মানিত সকল পাঠকদের খুব মিস করেছি আমরা। ভাবিনি আবার পাঠকের সাথে দেখা হবে। আবার বের হবে আমাদের নিয়মিত আয়োজন সাপ্তাহিক সিমেক। আজ আবার পত্রিকাটি বের করতে পেরে আমরা মহাখুশী।

যদিও পৃথিবী আগের আদলে ফিরে আসেনি। কিন্তু ফিরে আসার আলামত দেখা যাচ্ছে এতেই খুশী। আমার বিশ্বাস আমাদের পাঠককুলও খুশী। আর তাই খুশীমনে কায়োমনো বাক্যে একটাই কামনা; করোনামুক্ত হোক আমাদের এই ধরা। ভাল থাকুক আমাদের সকল পাঠক। ভাল থাকুক তাদের আঙিনা। আবার কোলাহলে ভরে উঠুক আমাদের পৃথিবী!! ঠিক কমাস আগের অসম্ভব রঙিন এবং ব্যস্তময় সেই সুন্দর পৃথিবীটির মতই!!!

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com