৯৬ বছর ধরে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়
প্রকাশের সময় : 2020-09-03 17:47:05 | প্রকাশক : Administration
মোঃ শেফাউল করিমঃ ১৯২৪ সালের কথা। হঠাৎ খাদ্যাভাব দেখা দিলো ঢাকায়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন না খেয়ে থাকছে হাজার হাজার লোক। মানুষের এমন আহাজারি দেখে নবাবপুরের স্থানীয় জমিদারের তিন ছেলে ক্ষুধার্ত মানুষের যন্ত্রণা অনুভব করলেন। সামর্থ্য অনুযায়ী ভার নিলেন ১২৫ জন মানুষের। প্রতিদিন এই মানুষগুলোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন তারা। পিতার নামে করলেন মদনমোহন অন্নছত্র ট্রাস্ট।
এরপর থেকে এক-দুই দিন নয়, টানা ৯৬ বছর ধরে অভূক্ত মানুষের এই খাবারের ব্যবস্থা চলে আসছে। নবাবপুরের স্থানীয় জমিদার মদনমোহন পালের তিন ছেলে হলেন- রজনীকান্ত পাল, মুরলীমোহন পাল আর প্রিয়নাথ। এখানে ধর্ম-জাত-পাতের কোনো ভেদাভেদ নেই। ক্ষুধার্ত অবস্থায় যিনি আসবেন, তিনিই খেতে পাবেন।
ট্রাস্টের ব্যবস্থাপক পরিমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, মানুষের কষ্ট দেখে তখন তাদের খুব খারাপ লাগে। তাই পিতার নামে মদনমোহন পাল অন্নছত্র ট্রাস্ট এস্টেট গঠন করলেন। নিজেদের ৯টা বাড়ি লিখে দিলেন এই ট্রাস্টের নামে। ওই ৯টা বাড়ি এখন মার্কেট। সেই আয় দিয়েই চলে ট্রাস্ট।
প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে রান্না শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় খাবার বিতরণ। উঁচু, নিচু, ধর্ম, জাতপাত ভুলে সবাই এক হয়ে যান এখানে। কেউ বসে খাচ্ছেন, কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে খাবার শেষ হয়ে গেলে, আবার নতুন করে রান্না হয়।
১২৫ জন দিয়ে অন্নছত্র শুরু হলেও এখন রোজ দুপুরে প্রায় আড়াইশ’ জনের রান্না হয়। প্রতিদিন ৩৫ কেজি চাল ১ মণ সবজি আর ৫ কেজি ডাল রান্না করেন তিনি। ট্রাস্টের শুরু থেকে এই তিনটি পদই রান্না হয়ে আসছে। অন্নছত্রের একজন নিয়মিত মেহমান মো: রফিক মিয়া (৭০) জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এখানে খাবার খেয়ে আসছেন। এখানে খাবার এবং এখানকার সেবকদের ব্যবহার অনেক ভালো। সবাইকে ভালোভাবে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এখানে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকম খাবার রান্না হয়। যেমন পায়েস, সেমাই, পোলাও, বিরানি- সেগুলো আমাদের খাওয়ানো হয়। - মানবজমিন