পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা মোমেনা
প্রকাশের সময় : 2020-09-03 17:49:37 | প্রকাশক : Administration
সৈয়দ মামুনূর রশীদঃ মোমেনা বেগম একজন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা। চট্টগ্রাম নগরীর নেভিগেট এলাকায় একটি স্বনামধন্য স্কুলগেট থেকে তার ব্যবসার সূত্রপাত। এর আগে তিনি একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কিউসি পদে চাকরি করতেন।
কুমিল্লার মুরাদনগর গাঙ্গেরকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে বেড়াতে আসেন তিনি। এখানে একজন মহিলার সহযোগিতায় ইয়াংওয়ান গ্রুপের একটি গার্মেন্টে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন।
২০০৩ সালে ইয়াংওয়ানেরই এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০০৪ সালে তার প্রথম ছেলের জন্ম হয়। কর্মদক্ষতার কারণে সুপারভাইজার পদে পদোন্নতি পান। কিন্তু ছেলের দেখাশোনার জন্য তিনি চাকরি ছাড়েন। চাকরি ছাড়লেও মোমেনা ভাবতে থাকেন, ছেলে-সংসার সামলিয়ে কিছু করা যায় কিনা।
এদিকে ভাড়া বাসার পাশে স্কুলগেটে মায়েরা জড়ো হন। আড্ডা দেন। তিনি ঠিক করলেন স্কুলগেটে অপেক্ষমাণ মায়েদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস তৈরি করে বিক্রি করবেন। এমন ভাবনা থেকে তিনি মেয়েদের ইনার গার্মেন্টস, বেবি আইটেম নিয়ে আশপাশ এলাকায় বেচাকেনা শুরু করেন।
২০০৫ সালে বেসরকারি সংস্থা ঘাসফুল থেকে তাকে প্রথমে পনেরো হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়। ঋণ পেয়ে মোমেনা টেরিবাজার পাইকারি দোকান থেকে কোয়ালিটিসম্পন্ন মেয়েদের ইনার গার্মেন্ট পণ্য সামগ্রী, নানারকম বেবি আইটেমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এনে স্কুলগেটে অপেক্ষমাণ মায়েদের কাছে বিক্রি করেন।
স্কুল-গেটে অপেক্ষমাণ ‘মা’ এবং নেভি কলোনির স্থানীয় নারীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি। এলাকায় পরিচিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাবিক্রিও বাড়তে থাকে। এরপরই আমার ব্যবসায়িক ধারণায় নতুন মোড় নেয়। ২০০৯ সালে স্কুল-গেটের কাছেই ‘এম.টি. ফ্যাশন’ নামে একটি শো-রুম দিই। এটি ভাবির দোকান নামে এলাকায় খ্যাতি পায়। ক্রেতাদের আন্তরিকতায় ব্যবসা এখন শুধু আয়-রোজগারের পথ নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলেছে।
চাকরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দোকানে একটি সেলাইমেশিন কিনে নিজেও কিছু কিছু পণ্য তৈরি করি। নারায়ণগঞ্জ থেকে এক্সপোর্ট কোয়ালিটিসম্পন্ন কাপড় ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে নিজস্ব ডিজাইন এবং ‘এম.টি. ফ্যাশন’ ব্র্যান্ডে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের ইনার গার্মেন্ট আইটেম, কাপড়ের ব্যাগ, কাঁথা এবং মেয়ে বাচ্চাদের জামা তৈরি করি। এসব উৎপাদিত পণ্য নিজের শো-রুম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন এলাকায়, শপিংমলে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নেই।
এভাবে পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকায় সেলাই মেশিন ও কর্মী সংখ্যাও বাড়াই। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে ভিন্ন ধরনের এক মার্কেটিং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি। স্বল্প আয়ের পরিবারের নারী, স্বল্প বেতনের গার্মেন্ট কর্মী, নারী হকার, এমনকি ভবঘুরে ভিক্ষুক নারীদের আমার মার্কেটিং নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। নেটওয়ার্কের আওতায় এসব মেয়েরা আমার উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন এলাকা কিংবা মার্কেটে বিক্রি করেন।
মাসশেষে অবিক্রিত মাল ও বকেয়া ফেরত দিয়ে প্রায় জনপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা রোজগার করেন। এভাবেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আয়-রোজগারের পথ শিখিয়ে অন্য নারীদেরও পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি মাত্র। ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা এলাকায় একখণ্ড জমি কিনে বাড়ি করেছি। আমার স্বামীরও আলাদা শোরুম ও সাপ্লাই ব্যবসা হয়েছে।
সৎ মায়ের সংসারে বড় হওয়া মোমেনা এভাবে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। দুই বোনকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১৫ সালে শো-রুমের কাছাকাছি ছোট্ট একটি কারখানা চালু করেন। পুরোদমে কারখানা চালু করার পর মোমেনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মোমেনা বেগম চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের একজন সদস্য। - যুগান্তর