স্বপ্ন ও বাস্তবতা যেখানে মাখামাখি
প্রকাশের সময় : 2020-09-17 17:27:56 | প্রকাশক : Administration
শ্রাবণী হালদারঃ প্রমত্ত পদ্মার বুকে বাঙালির স্বপ্নের আরেক নাম ‘পদ্মা সেতু’। এ সেতু বাংলাদেশের মানুষের বহুদিনের আকাঙ্খার বিষয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের একটাই দাবি ছিল, পদ্মা সেতু। যার ফলে আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মান হবে আরো উন্নত। যা এ দেশের অর্থনীতিতেও রাখবে বিশেষ ভূমিকা। শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
এ কারণেই পদ্মাসেতুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে বহু বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। যেখানে পৃথিবীর মধ্যে উত্তাল নদীর তালিকার পদ্মার অবস্থান দ্বিতীয়, সেই পদ্মার বুকে সেতু স্থাপন করা কোনোভাবেই সহজ কাজ নয়। বরং এটি এদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতি সেকেন্ডে পদ্মানদীতে ১ লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ স্বপ্নকে সফল হতে বাধ্য করেছে। আর এই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কোনো সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করছে না বাংলাদেশ সরকার। যা এ দেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
পদ্মাসেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা, যা বাংলাদেশের ভিতরে সবচেয়ে বড় সেতু হিসেবে স্থান দখল করে নেবে। সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ যানবাহন যাতায়াতে সক্ষম হবে। আর ২০২৫ সালে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০ তে।
এ সেতুর অবস্থান মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট (মুন্সীগঞ্জ-শরীয়তপুর)। শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর এখনও জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন পদ্মার দু’পাড়ের ঘাট। যদিও স্বপ্নের এই সেতু যেদিন পুরোটা মাথা তুলে দাঁড়াবে; পারাপারের নৌকা, স্পিডবোট, লঞ্চ, ফেরির বাণিজ্য সেদিন থেকে চুকেবুকে যাবে। হয়তো সেদিন পদ্মার বুকে শোভা বাড়াবে স্বপ্নের এই সেতু।
নদীর এপার থেকে চোখ মেলে তাকালে সেদিনও মুগ্ধ করবে প্রকৃতির অপরূপ রূপ। বর্ষায় থই থই পদ্মার জল, আঁকাবাঁকা নদীর গতিধারা করবে আকর্ষণ। শরতের উজ্জ্বল আকাশ, নীলিমা, নদীতীরে ফোঁটা কাশফুল কিংবা গান গেয়ে তরী বেয়ে চলে যাওয়া কোনো জেলেনৌকা, রূপোলি ইলিশ, পদ্মার ঢেউয়ে ঝিলমিল করা চাঁদের আলো সেদিনও একই রকম ভাবে মন কাড়বে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের।
আলোকচিত্রীর চোখ সেদিনও ঠিক একইভাবে আটকে যাবে ফ্রেমের পর ফ্রেমে। তবে সেতুর ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যেতে যেতে হাহাকারের সুর আওড়াবে কোনো কবিমন। উচ্চারণ করবে, ‘মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ অনিবার্য বিষয়কে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্ট সোনার ফসল, তার কর্ম।’ - ভোরের কাগজ