শোনো মেয়ে তোমাকেই বলছি!
প্রকাশের সময় : 2020-10-01 11:35:19 | প্রকাশক : Administration
তাপিতা সাথীঃ কথায় আছে ছোট ছিলাম, ভালো ছিলাম। ছোট বেলায় সত্যিই কি খুব ভালো ছিলাম? মেয়ে হয়ে জন্মে খুব ভালো থাকাটা কি এতোটাই সহজ! মোটেই না। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ যখন মায়ের পেটে ভ্রুন হয়ে ঢোকে, সেই থেকেই তার যুদ্ধের শুরুটা হয়ে যায়। আর এই যুদ্ধ চলে মৃত্যু পর্যন্ত। এরপর আরেক জীবনের শুরু। সেখানে পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার হিসেব-নিকেষ শুরু।
দুনিয়াতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা সহজ ব্যপার নয়। আর মেয়ে হয়ে জন্মালেতো কথাই নেই। কারণ আমাদের সমাজে ছেলে মানুষের চরিত্রটা বলতে পারেন চুইংগামের মত। যতই কুকর্ম করে বেড়াক কোন সমস্যা নেই। আর মেয়ে মানুষের চরিত্রটা কঁচু পাতার পানির মত। একজন ছেলে মানুষের সাথে কথা বললেই যেন সব শেষ! তবে আমাদের দেশের মেয়েদের চরিত্রও এখন চুইংগামের মত হওয়া শুরু করেছে। তারা এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে।
আশেপাশে অনেক শিক্ষিত ফ্যামিলিতে দেখেছি, তাদের মেন্টালিটি মীনা কার্টুনের দাদির মত। ছেলেদের বেশি খাবার দিতে হবে, আর মেয়েদের কম। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই এরকম চিন্তা ভাবনা। তবে এখন নারী শিক্ষার প্রসারতার কারনে চিন্তা ভাবনার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। শিক্ষার প্রসারতা দেশের মায়েদের কিছুটা হলেও বুদ্ধির বিকাশ সাধন করতে পেরেছে। তাদের অপূরনীয় স্বপ্নগুলোর বীজ মেয়ে শিশুদের মধ্যে বপন করে স্বপ্নপূরনের স্বাদ গ্রহন করতে শুরু করেছেন।
একটা মেয়েকে জন্মের পর থেকেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এখনো এদেশে একজন মা ২ বছরের মেয়ে শিশুকে কোন একজন পুরুষ মানুষের কোলে দিতে ভয় পায়! আমি আগেই বলে নিচ্ছি, পৃথিবীর সকল চরিত্রবান পুরুষ এবং মহিলাদের আমার পক্ষ থেকে স্যালুট। আমাদের সমাজে ভদ্র লোকের বেশ ধরা মানুষের অভাব নেই। যাদের কাছ থেকে বাচ্চা মেয়ে শিশুটাও রেহাই পায়না, তারা দয়া করে মানসিক ডাক্তারের শরনাপন্ন হন। নতুবা আপনাদের জন্য সরকারি লাইসেন্সকৃত যে পতিতালয় আছে ওখানে পার্মানেন্টভাবে থেকে যান। কারন সুস্থ সমাজে আপনাদের থাকার কোন অধিকার নেই। দেশের আইন ও মিডিয়া এখন খুব শক্তিশালী। একটা মেয়ে স্কুল জীবন থেকেই নানা ধরনের প্রতিকূলতার শিকার হতে শুরু করে। পাড়াতো ভাই, কাজিন, ক্লাশমেট, কাজের ছেলে আরো নানা ধরনের লোকজনের কাছ থেকে খারাপ ইংগিত পাওয়া শুরু করে। আর সবথেকে ঘৃনিত বিষয় হলো এই তালিকায় শিক্ষাগুরুরাও বাদ থাকেনা! এজন্যই বলতে হয় চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। বাসে যেসব মেয়েরা চলাফেরা করেন তারা বলতে পারবেন পুরুষ মানুষ কত প্রকার এবং কি কি।
যখন বাসে কোন পুরুষ মানুষ মহিলা মানুষের পাশে বসে আপ্রান চেষ্টা করেন কোনভাবেই তার শরীরের কোন একটা অংশ যেন মেয়ে মানুষটার গায়ে না লাগে। তখন মেয়েটার মনে অদ্ভুদভাবে ঔ পুরুষ মানুষটা সম্পর্কে ভালো একটা ধারনা চলে আসে। কিছু পুরুষ মানুষ আছে যারা পাশের সিটে বসা মেয়ে মানুষটাকে গায়ে লেগে ঠেলতে ঠেলতে পারেনা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।
সেই পিছনের সিট হতে গাড়ি থেকে নামার জন্য আসতে থাকা মেয়েটাকে কোন কোন পুরুষ খুব কষ্টে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও সাইড দেয়। আর কতগুলো পুরুষ কারেন্টের খুঁটির মত এক জায়গায়ই লেগে থাকে। কারন ঐ মেয়েটা নামার সময় যদি একটু গায়ে লাগে, এটাই ওদের শান্তি। ঐ সকল ছেচড়া মার্কা ব্যক্তিত্ববিহীন পুরুষগুলোর জন্য খুব লজ্জা হয়, খুব। এরা মনুষ্যত্ববিহীন অমানুষ। আর যারা মেয়ে মানুষদের সম্মানের চোখে দেখেন, তারা হলেন দেশ ও জাতীর সু-সন্তান।
তবে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী মহিলা হওয়ায়, নারী জাতী একটু নড়ে-চড়ে উঠতে শিখেছে বটে। এখন বাসের মধ্যে পাশে বসে ঘেষতে থাকা পুরুষটাকে মুখের ওপর বলতে পারে, সরে বসেন। বাসে উঠতে গেলে হেলপারকে বলতে পারে, ধরে উঠানো লাগবেনা। তবে এখনও অনেক মেয়েরাই আছে, যারা ঐ খারাপ পুরুষগুলোর ধাক্কা খেয়ে মুখ বুজে সহ্য করতে থাকে। এটা মোটেই ঠিক নয়। এদেশে এখন মেয়ের মা-বাবারা চুপ করে থাকেনা। আদালতে যায় ধর্ষিতা মেয়ের বিচার চাইতে। সমাজের এই নোংড়া আবর্জনাগুলোকে এখনই বিতারিত করতে হবে।
শোন মেয়ে তোমাকেই বলছি- নিজেকে বুঝতে শেখো, প্রতিবাদ করতে শেখো এবং চিন্তা চেতনার বিকাশ সাধন করো। আজ তুমি মুখ না খুললে তোমাদের পরবর্তী নারী প্রজন্ম পৃথিবীর বুকে মুক্ত বাতাশে নিঃস্বাস নিতে পারবেনা। যৌন হয়রানি হলো প্রচন্ড মাত্রার ঘৃনীত কাজ। আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত চলছে নারীর প্রতি হয়রানি। আমাদের এই নিরবতাই অপরাধকে উৎসাহ দেয়। আর প্রশ্রয় নয়, প্রতিবাদের ঝড় তুলুন। যারা হয়রানি করে, ওদের জন্য নারীর আগুন ভরা চোখের চাহনীই যথেষ্ট!!!