করোনা সময়ের বীর যোদ্ধা; করোনযোদ্ধা
প্রকাশের সময় : 2020-10-01 11:45:52 | প্রকাশক : Administration
আবুল বাশার নূরুঃ তিনি নিজেই হৃদরোগী। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে নিজের জীবন সংকটে পড়তে পারে ভালো করেই জানেন। তবুও চিকিৎসক হিসেবে কর্তব্য পালনে পিছপা হননি। যার কথা বলা হচ্ছে তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নিয়মিত কাজ করে চলা ৩৫ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসক।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও ওই রোগীর চিকিৎসায় যুক্ত হন। মার্চ মাসের শেষ দিকে এসে হাসপাতালেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিন দিন অন্য একটি হাসপাতালে কাটিয়ে কোনো বিশ্রাম ছাড়াই আবারও কাজে যোগ দেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এটা আমাদের কর্তব্য। রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার এখনই সেটা প্রমাণ করার সময়। এটা পালন করতে হবে। মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার যে শপথ নিয়ে আমরা পেশায় ঢুকেছি, সেটা এখন পূরণ করার সময়।
তার মতো আরও বহু চিকিৎসক ঝুঁকি মেনে নিয়েই এই হাসপাতালটিতে কাজ করছেন। ৬০ জন চিকিৎসক ও ৮৫ জন নার্স রোগীদের দেখাশোনা করছেন। এমনকি এখানে কাজ করতে গিয়ে তার এক সহকর্মীর গর্ভপাত হয়েছে বলে জানান তিনি। এখানকার কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স জানান, করোনা আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালটি নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই তারা বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়ছেন। বাসা থেকে বের হবেন না। যদি বের হন তাহলে আর বাসায় ফিরবেন না, এমন কথাও কয়েকজনকে শুনতে হয়েছে তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।
ওই নারী চিকিৎসক জানান, প্রতিবেশীদের আপত্তির কারণে সিঁড়ি দিয়ে সাত তলায় ছাদে উঠতে হয় তাকে। ছাদে গোসল সেরে সিঁড়ি দিয়েই চার তলার বাসায় ঢোকেন। তিনি বলেন, আমি লিফট ব্যবহার করি না। লিফট থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমার সন্তান ও প্রতিবেশীদের সুরক্ষার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তার মেয়ের বয়স চার বছর, ছেলের বয়স ছয় বছর। প্রতিবন্ধী ছেলের বাড়তি যত্নের দরকার হলেও পেশাদারিত্বের ব্যাপারে আপোস করেননি এই মা।
লিফট ব্যবহার না করে প্রতিবেশীদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা গেলেও নিজের বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তাই বাড়িতে না ফিরে হাসপাতালের পাশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত একটি হোটেলে থেকেছেন তিনি। তার অনেক সহকর্মীও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে হোটেলে থেকেছেন।