অনলাইন লেখাপড়ায় গতি আসুক
প্রকাশের সময় : 2020-10-28 11:36:48 | প্রকাশক : Administration
ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকারঃ উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও ইউজিসি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সার্ভিস কীভাবে শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করে ফলপ্রসূ একটা সমাধানও পাওয়া গেছে। আর তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১০০ টাকায় মাসব্যাপী ইন্টারনেট তথা ডাটা ব্যবহার করার সুযোগ।
ইউজিসির তথ্যমতে বর্তমানে দেশের ৪২টি পাবলিক ও ৬৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় BdREN প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে। মাসব্যাপী ১০০ টাকার এই সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে শিক্ষার্থীদের টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় নূন্যতম ডাটা ব্যালেন্স থাকতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের টেলিটক সিম ব্যবহার করতে হবে।
তবে BdREN প্লাটফর্মের মাধ্যমে Zoom App -এ যুক্ত হওয়ার পর আর কোনো ডাটা চার্জ করা হবে না। ক্লাসের পাশাপাশি যদি কোনো শিক্ষার্থী ওই ডিভাইস থেকেই অন্য কোনো সাইট/অ্যাপ ব্রাউজিং করে অথবা মোবাইলে ইন্টারনেট হটস্পট চালু করে অন্য কোনো ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাহলে এ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যে ডাটা খরচ হবে সে পরিমাণ চার্জ করা হবে।
উল্লেখ্য, এক ঘণ্টার একটি ভিডিও ক্লাসের জন্য সাধারণত প্রায় ৭০০-১০০০ মেগাবাইট ডাটা প্রয়োজন হয়। যার মূল্য নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ৭০-৮০ টাকা। সে হিসাবে একজন শিক্ষার্থীকে যদি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২টি ক্লাসে সংযুক্ত হতে হয়, তবে তার খরচ হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকা। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য এটি খুবই ব্যয়বহুল ও প্রায় অসাধ্য।
করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যখন অনেকটা তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে এবং বলতে গেলে লেখাপড়া থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ঠিক তখনই সরকারের এ ঘোষণা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ সুযোগের আওতায় আসবে নিশ্চয়ই। এমনকি প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সব স্তরের সব শিক্ষার্থী এ সুযোগটি পাবে।
টেলিটকের ফ্রি ইন্টারনেটে ‘পড়বে সবাই- শিখবে সবাই’ স্লোগানটি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে কার্যকর হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন চমৎকার সুযোগটি অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দেয়ার জন্য ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্যবসাসফল অন্য কোম্পানিগুলো সরকারের আহ্বানে কোনো সাড়া না দিলেও টেলিটকের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই সে মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। করোনার শুরু থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা করতে পারেনি।
পরবর্তী সময়ে ইউজিসি ও BdREN-এর সহায়তায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস শুরু করে। শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক (প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ) থাকলেও দিনে দিনে তা কমে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ গ্রামেগঞ্জে থাকা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ডিভাইসের অভাব, নেটওয়ার্ক সমস্যা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি। ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের কার কী সমস্যা, ক্লাসে কেন উপস্থিতি কম- এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে।
বিদ্যমান সব সমস্যা আমলে নিয়ে ইউজিসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশে চলমান সব টেলিফোন কোম্পানির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। একপর্যায়ে অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার জন্য বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে মোবাইলে ডাটা দেয়ার জন্য টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী নিজে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, টেলিটক কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। অতঃপর সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ইউজিসি উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্যসব টেলিফোন কোম্পানির সেবা টেলিটকের চেয়ে ভালো এবং তাদের গ্রাহক সংখ্যাও বেশি। এমনকি শহরাঞ্চল ছাড়া গ্রামেগঞ্জে, পাহাড়ি এলাকা, বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল ইত্যাদি স্থানে টেলিটকের টাওয়ার নেই বললেই চলে।
তাই এসব স্থানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে সম্পৃক্ত হতে পারবে না এখনই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব বিচ্ছিন্ন স্থানে টেলিটকের টাওয়ার স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখনই মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, কলরেট কমানো, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি, ফোর-জি, ফাইভ-জিসহ সব ধরনের আধুনিক সেবায় টেলিটক যেন সবার উপরে থাকতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি সমগ্র বাংলাদেশকে টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে যথাশিগগির।
টেলিটক ছাড়া বাকি সব অপারেটর বিদেশি মালিকানাধীন এবং তাদের লভ্যাংশ তাদের দেশে নিয়ে যায়। সেই লভ্যাংশের কিছু অংশ দিয়ে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে তারাও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এগিয়ে আসবে, এটাও আমাদের প্রত্যাশা। আসুন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষসহ আমরা সবাই টেলিটক ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হই, দেশের টাকা দেশেই রাখি, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সহায়তা করি।