উল্টো পথে চলি মোরা, উল্টো পথে হাঁটি কে বা জানে কোনটা ভুল আর কোনটা তবে খাঁটি!!

প্রকাশের সময় : 2020-10-28 11:45:01 | প্রকাশক : Administration
উল্টো পথে চলি মোরা, উল্টো পথে হাঁটি কে বা জানে কোনটা ভুল আর কোনটা তবে খাঁটি!!

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীনঃ

অনেক অনেকদিন পরে এই শিরোনামে আবার লিখতে বসলাম। আগে বেশ লিখতাম। কদিন পরপরই লিখতাম। লিখতে ভালও লাগতো। লিখতে লিখতে গেল কবছরে বেশ কিছু লেখা লিখেছি এর উপরে। লিখে যেমনি নিজে মজা পেয়েছি, তেমনি সাড়াও মন্দ পাইনি। কিন্তু গতিটা ধরে রাখতে পারিনি। মাঝখানে ছন্দপতন হয়েছে। বিষয়বস্তুর ভিন্নতার আঙিকে ভিন্ন জগতে ঘুরে বেড়িয়েছি। ভিন্ন ভাবনায় থেকেছি। কখনো থেকেছি ইচ্ছায়, কখনো বা অনিচ্ছায়।

তাই অনেকদিন লেখা হয়নি। তবে লিখতে ইচ্ছে করতো কিছুদিন পর পরই। খুব করেই করতো। কিন্তু লেখা হয়ে উঠতো না। আলসামো যাকে বলে। শোনিমের আম্মুর বিচারে আমি হলাম জগৎসেরা আলসে; বিশ্বখ্যাত কুইড়া। টেনে হেঁচড়েও আমাকে বাজারে নিতে পারে না। আসলে যতক্ষণ কোনকিছু না করে পারা যায়, ততক্ষণ ওসব করার ত্রিসীমানায়ও যাই না। যাই-যাচ্ছি করে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করি। বলা যায় এ জন্যেই হাজারো বিষয়াদির ভীড়ে আজকের শিরোনামের লেখাটির জায়গা হচ্ছিল না।

জায়গা হচ্ছিল আতেল বিষয়ক লেখাগুলো। করোনার শুরু থেকে দুচারটা ছাড়া সব লেখাই ছিল আতেলদের টার্গেট করে। আতেলগণ পজেটিভ হলে সমস্যা ছিল না। দেশীয় আতেল অধিকাংশই নেগেটিভ। বাংলাদেশের মত এত নেগেটিভ আতেল পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে বলে মনে হয় না। এটা আমার ধারণা। ধারণাটা ভুল হতে পারে। কিন্তু আতেলদের চিনতে আমার কখনোই ভুল হয় না। চিনি ওদের কৌশলও।

এমন কোন কৌশল নেই যেটা দেশীয় আতেলগণ করেন না। একটা দেশকে পঁচানোর জন্যে আতেলগণ কিভাবে উঠেপড়ে লাগতে পারে সেটাও দেশের প্রতিটা দূর্যোগে দেশবাসী হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছে। যখনই দেশে দূর্যোগ এসেছে, আতেলরা এসেছে নবসাজে, নব উদ্দীপনায়। সেই ১৯৪৭ সাল, মানে ভারতবর্ষ ভাগের সময় থেকেই একই অবস্থা। দেশের এলিট সমাজ, সুশীল সমাজ কিংবা হালের আতেল সমাজ সবাই উল্টো পথে হাঁটে। কেমন করে যেন দেশবিরোধী অবস্থান নিয়ে নেয়। দেশ তথা আমজনতার স্বার্থের সাথে তাদের নিজেদের স্বার্থ কখনোই মেলে না।

মেলাতে পারে না। সরকার বিরোধীতার নামে তাদের বেশীরভাগ বিরোধীতাই দেশবিরোধীতার পর্যায়ে পড়ে। সেটা তারা ভাল করেই জানে এবং জেনেশুনেই করে। সদ্য ঘটে যাওয়া পেঁয়াজ সংকটেও একই অবস্থা। বলা নেই কওয়া নেই, ভারত হুট করে এবছরও পেঁয়াজ রফতানী বন্ধ করে একটা জঘন্য কাজ করে বসলো। ভারতের ঘাড়ে ধরার চরম মোক্ষম সুযোগ ছিল তখন। কেননা আমরা সবেমাত্র ইলিশ দিয়েছি ওদের। কিন্তু আতেলরা পরম সুযোগটা নিল না। ওদিকে গেলই না।

গেল ইলিশের দিকে। কিন্তু ইলিশ দিয়ে তো আমরা ভুল করিনি। লিডেই ছিলাম। মুখ বড় ছিল। অন্যদিকে ইলিশ ছিল আমাদের উদ্ধৃত্ত। চাহিদার চেয়েও অনেক বেশী ইলিশ উৎপাদন এবছর। তাই ইলিশ রফতানীতেই আমাদের লাভ। একদিকে ব্যবসাও হলো; আবার মুখ বড় করে বলতেও পারতাম, তোরা আসলেই ভাল না। আমাদের ভালগিরিরও দাম দিলি না। আমরা ইলিশ দিতে পারলাম। আর তোরা পেঁয়াজটাও দিতে পারলি না। শুনে লজ্জা পাওয়া ছাড়া ওদের বলার কিছু থাকতো না। এবং আসলে ওরা শেষমেষ লজ্জাই পেয়েছে। যখন হাসিনা সরকার লজ্জা দিয়ে কথা শুনিয়েছে, তখন সত্যি সত্যি লজ্জা পেয়ে আবার পেঁয়াজ রফতানী শুরু করেছে।

এটাই পজিটিভ রাজনীতি। লাভের রাজনীতি। অথচ আতেলরা লাভের মধ্যে নেই। আছে লসের মধ্যে; ক্যাচালের মধ্যে। ক্যাচাল বাঁধাবার পাঁয়তারায় বললো, ভারত যেখানে পেঁয়াজ দেয় না, আমরা কেন ইলিশ দিলাম! লাগাও ক্যাচাল! যুক্তির কথা! তবে কথা আর পেয়াঁজে থাকলো না। ইলিশে চলে গেল। ওখানে গেলেই তো লাভ। ক্যাচাল পোক্ত হয়। ওদের দরকার ক্যাচাল। পেঁয়াজ দরকার নেই। অথচ পেয়াঁজ নিয়ে হাজারো কথা বলতে পারতো। সে সব হতো যুক্তির কথা এবং সংকট থেকে মুক্তির কথা।

হলো না। সে পথে হাঁটলো না। সর্বদা উল্টো পথে হাঁটতে হাঁটতে ওরা সেভাবে পারলো না। এই উল্টো পথে হাঁটা আমাদের মজ্জাগত। স্যান্ডেল পায়ে পড়ার সময় ছোট বাচ্চারা সব সময় উল্টোভাবেই পায়ে দেয়। আমাদের স্বভাব হলো ছোট বাচ্চাদের মত। যা কিছুই দেখি, উল্টো চোখে দেখি। উল্টো পথে হাঁটি। সঠিক পথে আমরা হাঁটতে জানি না। সমগ্র বিশ্ব যে পথে হাঁটে আমরা সে পথে হাঁটি না। হাঁটি জেদাজেদির পথে।

বহিঃবিশ্বের বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে জেদাজেদির রাজনীতি শেখ হাসিনা করেন না। করেন ভারসাম্যের রাজনীতি। ভারসাম্যের রাজনীতিতে জেদাজেদির কোন জায়গা নেই। জেদাজেদির রাজনীতি পাল্টাপাল্টি রাজনীতির জন্ম দেয়। পাল্টাপাল্টির রাজনীতি জাতি তথা আঞ্চলিক রাজনীতির কোন মঙ্গলই বয়ে আনে না। দেশীয় রাজনীতিতেও পাল্টাপাল্টির রাজনীতি আছে বলে দেশের কোন কিছুই সঠিক পথে চলতে পারছে না। চলছে উল্টো পথে।

শুধু রাজনীতিতেই নয়। সমাজের সব জায়গাতেই। উল্টো পথে হাঁটে বলেই কোন পণ্যের ক্রাইসিস হলেই শুরু হয় প্রতিযোগীতা। যারযার জায়গা থেকে সবাই মজুদদারীর প্রতিযোগীতায় নামে। সবাই মজুদদার। কেউ বড় মজুদদার, কেউবা ছোট। বড়রা ব্যবসার জন্যে মজুদ করে আর ছোটরা করে নিজেদের খাবারের জন্যে। পার্থক্য কেবল এটুকুই। অথচ এসব না করে সবাই মিলে পেয়াঁজের ব্যবহার মাত্র কয়েকদিনের জন্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনলেই কেল্লা ফতে।

কে বলবে এসব কথা! কাকে বলবে! এদেশে তো যে যার সুবিধে এবং ইচ্ছে মত চলছে। দেখবার মত কেউ নেই। কাগজে কলমে সরকারী লোকজনের এসব দেখার কথা। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা হলো জনগণের সেবক তথা পাবলিক সার্ভেন্ট। জনগণকে স্যার ডাকা উচিত তাদের। অথচ বাস্তবে উল্টো। তাদেরকেই বরং জনগণের স্যার ডাকতে ডাকতে মুখে ফেনা তুলতে হয়। তবুও তাদের হয় না। তারা আরো চায়।

চাইবে না কেন? আমরা নিজেরাও তো প্রজা হয়ে নিজেদেরকে ভাবতেই ভালবাসি। দেশের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীদের আমরা রাজাবাদশাহ্ আসনে বসাই। ঘাড় নামিয়ে সালাম ঠুকি। পারলে কুর্নিশ করি। আর কপালও আমাদের। দেশের নামটি যারা রেখেছেন, তারা সেভাবেই রেখেছেন। আমাদেরকে সাংবিধানিকভাবে প্রজা বানিয়ে ছেড়েছেন। বড় চমৎকার করে বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। দেশের নামই বলে দেয় আমরা প্রজা। প্রজা শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কোন শব্দ কি এখানে ব্যবহার করা যেত না! এটা কি আসলেই ভুল, নাকি সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার নগ্ন প্রকাশ!

তবে মানসিকতায় প্রজা হলেও স্বভাবে আমরা ঘাউরা প্রকৃতির। সহজ কথা সহজভাবে মানি না। কারো কথা শুনে চলার লোক আমরা না। করোনা নিয়ে কত নিয়ম, কত কানুন। কে মানে এসব! মানলে কি আর এত সহজে সামাজিক দূরত্বকে টাটা বাই বাই বলে দিতো বাঙালী! সোশ্যাল ডিসট্যান্সের বিশ্বব্যাপী যে ধারণা, বলা চলে, হেসে খেলেই উড়িয়ে দিল। দিতে পারল! সামাজিক দূরত্বকে দু’হাতে দূরে ঠেলে দিল! অবাক কান্ড বৈকি! এখন সবাই পরস্পরের কাছে আসছে। ঘন হচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই করোনাভাইরাস বলতে কিছু এখনও আছে বা ছিল!

করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি ছেড়ে ছুড়ে নিজের মতো চলছে বেশিরভাগ মানুষ। সামাজিক দূরত্বকে পারলে তারা ঝেটিয়ে বিদায় করে! করোনাকালের অন্যতম প্রধান আলোচনা ছিল সোশ্যাল ডিসটেন্স বা সামাজিক দূরত্ব। গোটা দুনিয়া একেবারে শুরু থেকেই এ দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে আসছিল। এ কারণেই বিরাট বিরাট ক্ষতির কথা ভুলে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা।

কিন্তু এসব কেউই মানছে না। ঘরে কেউই আবদ্ধ নেই। সবই এখন কাগজে সীমাবদ্ধ। বরং হিড়িকে নাচছে সবাই। দলবদ্ধ বিয়ের হিড়িক। কী গ্রামে, কী গঞ্জে কিংবা শহরে! ঘরে ঘরে বিয়ের আয়োজন। কনসেপ্টটাও খারাপ না। কখন কি হয়ে যায়, তাই বিয়েটা করে রাখাই ভাল। করোনাকালের এই দূর্দিনে গেল ৭ মাসে যত বিয়ে হয়েছে, গত একবছরেও তত বিয়ে হয়নি বাংলাদেশে।

বাঙালী পারেও। সবচেয়ে বেশী পারে সময়ের কাজ অসময়ে করতে। সামাজিক দায়িত্ববোধের চিন্তা করে না। নিয়ম নীতির ধার ধারে না। নীতির পরোয়া করে না, নিয়মের তোয়াক্কা করে না। উল্টো সারাক্ষণ নিয়ম ভাঙ্গে। আর উল্টো দেখে। বাঙালী সাদাকে কালো দেখে, কালোকে সাদা। আর বড়কে ল্যাং মেরে, ছোটকে দাদা। বাঙালী পারে না কোনটা! চোরকে সাধু মানে, ডাকাতকে পীর! দাবী করে জাতি হিসেবে বাঙালী বীর!!!

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com