জাপান কাহিনী - সামাজিক শিক্ষা

প্রকাশের সময় : 2018-06-27 18:27:37 | প্রকাশক : Admin
�জাপান কাহিনী - সামাজিক শিক্ষা

সিমেক ডেস্কঃ এই শিক্ষা জাপানীরা কোথায় পায়? এটা নিয়ে লিখতে গেলে একটা পি, এইচ, ডি থিসিস হবে। একটু আভাস দিচ্ছি - সামাজিক শিক্ষা থেকে। জাপানে সামাজিক শিক্ষা শুরু হয় কিন্ডারগার্টেন লেভেল থেকে। সর্বপ্রথম যে তিনটি শব্দ এদের শিখানো হয় তা হলো- কননিচিওয়া (হ্যালো)- পরিচিত মানুষকে দেখা মাত্র “ হ্যালো” বলবে। আরিগাতোউ (ধন্যবাদ)- সমাজে বাস করতে হলে একে অপরকে উপকার করবে। তুমি যদি বিন্দুমাত্র কারো দ্বারা উপকৃত হও তাহলে “ধন্যবাদ” দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। গোমেননাসাই (দুঃখিত)- মানুষ মাত্রই ভুল করবে এবং সেই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে।

এগুলো যে শুধু শিখানো মুখস্ত করে শিখানো হয় তা না। বাস্তবে শিক্ষকরা প্রো-এক্টিভলি সুযোগ পেলেই ব্যবহার করবেন এবং করিয়ে ছাড়বেন। সমাজে এই তিনটি শব্দের গুরুত্ব কত তা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন। এই শিক্ষাটা এবং প্রাকটিস ওরা বাল্যকাল থেকে করতে শিখে। আমাদের রাজনীতিবিদরা বাল্যকালটা যদি কোন রকমে জাপানের কিন্ডারগার্টেনে কাটিয়ে আসতে পারতেন।

কিন্ডারগার্টেন থেকেই স্বনির্ভরতার ট্রেনিং দেয়া হয়। সমাজে মানুষ হিসাবে বসবাস করার জন্য যা দরকার নিজের বই, খাতা, খেলনা, বিছানা নিজে গোছানো; টয়লেট ব্যবহার, পরিষ্কার করা; নিজের খাবার নিজে খাওয়া, প্লেট গোছানো ইত্যাদি। প্রাইমারী স্কুল থেকে এরা নিজেরা দল বেঁধে স্কুলে যায়। দল ঠিক করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ট্রাফিক আইন, বাস ট্রেনে চড়ার নিয়ম কানুন সবই শিখানো হয়। আপনার গাড়ি আছে, বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসবেন, উল্টা আপনাকে লজ্জা পেয়ে আসতে হবে।

ক্লাস সেভেন থেকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে পারবে। ক্লাসে কে ধনী, কে গরীব, কে প্রথম কে দ্বিতীয় এসব বৈষম্য যেন তৈরী না হয় তার জন্য যথেষ্ট সতর্ক থাকেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্লাসে রোল নং ১, মানে এই নয় যে একাডেমিক পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভাল। রোল নং তৈরী হয় নামের বানানের ক্রমানুসারে।

বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার সমস্ত আইটেম গুলো থাকে গ্রুপের পারফরম্যান্স দেখার জন্য; ইন্ডিভিজুয়েল নয়। সারা স্কুলের ছেলে মেয়েদের ভাগ করা হয় কয়েকটা টা গ্রুপ- সাদা দল, লাল দল, সবুজ দল ইত্যাদি। গ্র“পে কাজ করার ট্রেনিংটা পেয়ে যায় খেলাধুলা জাতীয় এক্টিভিটি  থেকে। এই জন্যই হয়তো জাপানে বড় লিডার তৈরি হয়না কিন্তু গড়ে এরা সবার সেরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগে ১২ বছর শিক্ষাটা সম্ভবত ইউনিভার্সেল। আমাদেরটা হলো ৫+৫ +২ অর্থাৎ প্রাইমারী ৫ বছর, হাইস্কুল ৫ বছর তারপর কলেজ ২ বছর। জাপানে ৬+৩+৩। শতকরা ১০০ ভাগ শিশুই ৬ বছর বয়সে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়। কারো বয়স জানতে হলে সিম্পলী জিজ্ঞাস করুন কোন ক্লাসে পড়ে। তার সাথে ৫ যোগ করে ফেলুন।

১৮ বছর বয়সে এরা সমাজে অনেকটা প্রাপ্ত বয়স্কর স্ট্যাটাস পেয়ে যায়। এই স্ট্যাটাসে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাতে পারে। ছেলেরা বিয়ে করতে পারে (মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৬ বছর)। ২০ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রাপ্ত বয়স্কে পা দেয় এবং ভোট দিতে পারে।

১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ। জাপানের কলেজে আমার প্রথম ক্লাস। ক্লাস রুটিনটা ( যতদুর মনে পড়ছে) নিম্নরূপ-

[সকাল]

(১) ওরিয়েন্টশন - সবাইকে চিন, তোমাকে চিনাও (২) গ্রুপ ছবি (৩) ক্লাস রুম পরিষ্কার, টয়লেট পরিষ্কার (৪) মাঠ পরিস্কার, জিমনেশিয়াম পরিষ্কার।

[বিকাল]

(১) ক্লাস (২) ক্লাস (৩) ক্লাস (৪) ক্লাস

ক্লাসরুম আর টয়লেট পরিষ্কার করতে আমাদের ক্লাসটিচার নিজেও লেগে গেলেন। ঘন্টা খানেকের মধ্যে ক্লাসরুম আর টয়লেট চকচকে হয়ে গেল। দশে না এগারতে মিলি করি কাজ (সাথে শিক্ষক আছেন)। হারা জিতার কোন প্রশ্ন নেই। নিজেদের কাজ নিজেরা করি। নিজ সমাজের কারিগর আমরা নিজেরাই।

কিছু মনে না করলে একটা কন্ট্রাস্ট সিনারিও শেয়ার করি। ১৯৮৫ সালের ১ লা অক্টোবর। ঢাকা কলেজে আমাদের ক্লাস শুরু। একটা ইকোনো বল পয়েন্ট পেন আর নিউজপ্রিন্টের আধা দিস্তা কাগজের একটা খাতা গোল করে হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসে গেলাম। আমাদের ওরিয়েন্টশন দিলেন নর্থ হোস্টেলের সদ্যোজাত জাতীয় পার্টির সারোয়ার বাহিনী। ক্লাস রুম, টয়লেট কোন কিছুই পরিষ্কার করতে হলো না। ক্লাসরুমের জানালার গ্লাস ভাংগলো, মাঠে ককটেল ফুটলো। অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্লাস বন্ধ হলো।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com