করোনা দিনের ডায়েরি...

প্রকাশের সময় : 2020-12-09 15:50:21 | প্রকাশক : Administration
করোনা দিনের ডায়েরি...

৮ম পর্ব

করোনা বেটা আসলেই একটা ফাজিল। যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও ফাজিল। চতুরমার্কা ফাজিল। কোনভাবেই মানুষ এই বেটার গতি প্রকৃতি বুঝতে পারছে না। খাসিলত বোঝাও কঠিন। দিনেদিনে শুধু খাসিলত পাল্টায়। আর দেশ ছেড়ে দেশান্তরে যায়। দেশ পাল্টানোর সাথে সাথে খাসিলতও পাল্টে যায়। কায়দা করে ঘাড়ে ধরার সুযোগই দিচ্ছে না কাউকে। ধরার চেষ্টা করছে সব দেশের তাবৎ সব পন্ডিতের দল। কাজের কাজ হচ্ছে না তেমন।

তবে অগ্রগতি হচ্ছে। ইসরাইলের বিজ্ঞানীদের একটি দল আশ্বস্ত হওয়ার মতো খবর দিয়েছে। তারা বলছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির মাত্র কয়েকদিন দূরে রয়েছেন তাঁরা। যা দিয়ে চলতি বছরের ১ জুন মানব দেহে পরীক্ষা চালানো হতে পারে। গ্যালিলি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এমআইজিএএল) বায়োটেকনোলজি গ্রুপের প্রধান ডঃ চেন কেটজ বলেন, আমরা ভ্যাকসিন তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছি। ফেব্রুয়ারীতে গ্যালিলি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ইসরাইলী গবেষকরা বলেছিলেন, তারা ৯০ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবেন।

এদিকে জাপান এবং ইংল্যান্ডও অনেকদূর এগিয়েছে। জাপানের ওয়াসেদা এবং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে টিকা বাজারজাত শুরু করতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনি কিছু একটা বাজারে না আসলে অবস্থা যে কী হবে তা বলাই বাহুল্য। এমনিতেই তো বাংলাদেশী আতঙ্কবাদীদের দাপটে টেকা যাচ্ছে না। সব সময় যত খারাপ খবর আছে, অসত্য আছে; অবলীলায় তারা ভাইরাল করছে।

আতঙ্কবাদীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তারা কখনোই ভাল সংবাদ ভাইরাল করে না। ভাইরাল করবে কি? ভাল সংবাদ পড়েও না। টাইটেলটা দেখার আগেই মুখ ভেংচি কেটে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আর ঘটনাক্রমে না পড়ে উপায় না থাকলে পড়ে। ঠেকায় পড়েই পড়ে। খুবই অনীহা নিয়ে পড়াটা শেষ করে কিন্তু সেটা বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে সব খারাপ খবর। আজগুবি মার্কা অবিশ্বাস্য খবর।

এদের কারণেই সারা বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ অসুস্থ হচ্ছে তার চেয়ে ঢের বেশী অসুস্থ হচ্ছে আতঙ্কে। শোনিমকে নিয়ে এখন যেখানে আছি, এই কানাডায় আতঙ্কবাদীরা নেই। আছে নিয়ম মেনে চলার মানুষ। করোনায় কানাডা আরো বদলে গেছে। নতুন অভিজ্ঞতায় কানাডিয়ানদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক- বীমা ইত্যাদি সর্বস্তরের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কেউ কেউ বাড়িতে বসে কাজ করছে, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান টিমভিত্তিক কাজ করছে। কানাডার বারগুলোর দরজা বন্ধ, তবে মদের দোকান খোলা। স্কুল-কলেজ- ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ, ছাত্ররা বাড়িতে বসে পড়ছে। রেস্টুরেন্টগুলো খোলা, তবে দোকানে বসে খাওয়া যাবে না; খাবার কিনে বাড়িতে নিয়ে খাচ্ছে সবাই। কাজ করতে পারুক বা না-ই পারুক, মালিকরা কর্মীদের বেতন পৌঁছে দিচ্ছে, আর মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সরকার।

বিমানবন্দরগুলো ফাঁকা, বাস-ট্রেনে লোক নেই, গাড়ির দেশ কানাডার রাস্তায় হাতেগোনা দু-চারখানা গাড়ি, বিশাল শপিংমলগুলো কোথাও কোথাও খোলা থাকলেও খরিদ্দারের আনাগোনা নেই। ব্যবসায়িক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ। আমেরিকার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ফেডারেল সরকার। দেশটির সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম শহর টরন্টো যেন এক মৃতনগরী, পর্যটকদের পদধ্বনি শোনা যায় না। চারদিকে শুধু নীরবতা।

কানাডার স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের জন্য আকস্মিক এ দুর্বিপাক নিশ্চয়ই লম্বা হবে না। সবাই একটু সতর্ক হলেই এ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবার মনের কথা একটাই; আমরা যেন বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশগুলো মেনে চলি। তবেই ঘাতক করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মিডিয়া প্রতিনিয়ত একটা কথাই বলার চেষ্টা করে, বাঁচলে যত রঙিন স্বপ্ন সবই যাবে বোনা, এখন একটু কষ্ট হলেও ঘরে থাকিস সোনা।

করোনা নিধনে প্রচুর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে কানাডা। শুধু কানাডা কেন? করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্বই এখন অস্থির। প্রতিটি দেশই এই রোগের নিরাময় খুঁজতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। ঠিক এ সময় দিল্লী থেকে আশা জাগানো খবর পাওয়া গেল। দিল্লীতে গত সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহে প্লাজমা থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করার চেষ্টা করা হয়। এখন সেই রোগীর ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া হয়েছে, তাকে আইসিইউ থেকে ইতোমধ্যে অন্য ঘরে দেওয়া হয়েছে।

প্লাজমা থেরাপিকে সহজ ভাষায় বললে, যেসব কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন তাদের শরীরের রক্তের প্লাজমা গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। এতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসবে রোগী। এই প্লাজমা দ্রুততার সঙ্গে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে অকেজো করে দিতে পারে। যেসব রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাবে, তাদের শরীরে প্লাজমা প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে চিকিৎসা করলে মৃত্যু যেমন কমে আসবে, তেমনি টিকা বা ঔষধ আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করার একটি পথ সৃষ্টি হবে।

তবে করোনা ঔষধ তৈরীতে সব থেকে এগিয়ে আছে জাপানী পন্ডিতেরা। ২০১৪তে তাঁদের বানানো এভিগান ট্যাবলেটটি মারাত্মক কাজ করছে করোনায়। তবে এসব সহ্য হচ্ছে না হিংসুটে আমেরিকার। হিংসায় অন্ধ হয়ে গেছে। তারা আশা দেখছে না। তবে আমরা দেখছি। আমরা আছি আশায়। ভাল ফলাফলের আশায়। ঢাকায় ক্লিনিক্যাল টেষ্ট শুরু হয়েছে। একশ করোনা আক্রান্তকে এভিগান দেয়া হয়েছে। এখন ফলাফল দেখার অপেক্ষা। দিন দশেকের অপেক্ষা। অপেক্ষায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও; অপেক্ষায় পুরো দেশ।

দুঃখজনক হলো, এ নিয়েও ঢাকায় আতলামি শুরু হয়েছে। একটা গ্রুপ উঠেপড়ে লেগেছে এর বিরুদ্ধে। করছে বিরোধিতা। না করে উপায়ই বা কি? করোনা মহামারী হয়েছে তো কী হয়েছে! নিজেদের আতেলগিরী তো আর শেষ হয়ে যায়নি। কোন না কোনভাবে প্রমাণ করতে হবে তারা আতেল। তাই আতলামী শুরু হয়েছে।

আতেলরা দিনভর ঘুমায় আর রাতভর টিভিতে এসে আতলামি করে। আমি টিভিতে আসিনা। শুধু দেখি। রাতভর টিভি দেখি। এখন আছি ভারতীয় পুরনো বাংলা সিনেমা নিয়ে। উত্তম-সুচিত্রা নিয়ে মহা সুখে আছি। ঝালমুড়ি নিয়ে বসি। আর শুনি ওদের ডায়ালগ। কঠিন কঠিন ডায়ালগ। প্রেমের ডায়ালগ যে এত কঠিন হয়, সময়কালে বুঝিনি।

প্রেম যে এত কষ্টের হয়, কান্নার হয় সেটাও বুঝিনি। পর্দায় ওরা কাঁদে আর সোফায় বসে পর্দায় চোখ রেখে আমরা কাঁদি। আমি কাঁদি আর কাঁদে আমার শোনিমের মা। তবে আমরা লুকোচুরি করে কাঁদি। এমন ভাবে কাঁদি যেন একজনেরটা অন্যজনে না দেখে। চোখের পানি যখন গাল বেয়ে নামতে শুরু করে আমরা খুব সন্তর্পনে আঙুলের মাথা দিয়ে পানি কেটে সরিয়ে দেই। একবার ডানে কাটি। একবার বামে।

আবার কাটাকাটি নয়; ফাটাফাটির ঘটনাও ঘটে। ছবির শেষের দিক। সব ঝামেলা শেষ। সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান শেষে নায়ক নায়িকা এক হয়েছে; কাছাকাছি হয়েছে। হাতে হাত ধরেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সুযোগটা আমি নেই। আস্তে করে সিনেমার নয়; আমার নায়িকার হাত ধরার চেষ্টা করি। বুঝতে দেইনা। এমনভাবে করি যেন নিজের অজান্তেই করছি।

নায়িকা কিছু বলে না। হাত ধরতে দেয়। এদিকে তার খেয়ালই নেই; ছবি দেখার ইমোশনে আছে। ফাঁকে কপাল খোলে নায়কের। তবে নায়কের এই কপাল বেশীক্ষণ খোলা থাকে না। পর্দায় “সমাপ্ত” লেখা উঠলেই পোড়তে শুরু করে। হাত ঝারা দিয়ে নায়িকা ওঠে দাঁড়ায়। ফিরে আসে আসল রূপে। নায়কের দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন নায়ক বর নয়; দেবর। চোখ বড় বড় করে দেবররূপী বরকে করোনার ভয় দেখায়।  

হায়রে করোনা! তুই আসলেই ফাজিল। ফাজিলের ফাজিল। ফাজিল না হলে তুই কি আমার ভবনে বাসা বাঁধতে পারতি! ১ম জনাকে ধরার পরে আজ আবার ২য় জনাকেও ধরতে পারতি? আগে তো একটু দূরে ছিলি! বেশ ছিলি। এখন তো এগিয়ে এলি! আমার ফ্লাটের খুব কাছাকাছি চলে এলি!!! চলবে...

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com