শ্রমজীবী মানুষের পাশে বাবুইয়ের শিশুরা
প্রকাশের সময় : 2020-12-09 15:52:25 | প্রকাশক : Administration
সমুদ্র হকঃ শিল্পের পাঠশালা ‘বাবুইয়ের’ শিশুরা সাংস্কৃতিক বোধে ঘরে থেকে সামাজিক দূরত্বে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রজন্মের শিশুদের দৃঢ় মনোবল প্রমাণ করেছে আগামীর দেশ তারা নিরাপদ রাখবে। সেই প্রস্তুতির শুরু এখনই। ওরা ঘরে থেকে ব্যক্তি সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বগুড়ায় শিশু কিশোরদের শিল্পের পাঠশালা বাবুইয়ের প্রতিষ্ঠাতা রাকিবুল হাসান জুয়েল বললেন- শিশুদের ঘরে থাকতে বলেছেন। বাইরে বের হতে বারণ করেছেন। তারপরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাংস্কৃতির পরিমন্ডলে গড়ে তোলা এই শিশু শিক্ষার্থীরা ঘরে সামজিক দূরত্বে ব্যক্তি সুরক্ষায় থেকে কিছু করার আগ্রহে কাজের ধারণা দেয়। তার নজরদারিতে শিশুরা কাজ করছে।
শিশুমনের ধারণায় টিফিনের অর্থ জুয়েলের হাতে দিয়ে ঘর বন্দী শ্রমজীবীদের কিছু কিনে দিতে বলে। ওদের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে আকুতি জানায় কিছু করতে। দ্রুত সাড়া দেন অভিভাবকরা। জুয়েল প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের উপদেষ্টা ও সদস্যগণের কাছে গিয়ে শিশুদের আগ্রহের কথা বললে প্রত্যেকেই অভিভূত হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ছোট্ট ছোট্ট জলের ফোঁটায় যেমন মহাসাগর তৈরি হয় তেমনই রূপক অর্থে ছোট্ট শিশুদের ছোট্ট ছোট্ট আগ্রহ বড় আকারের দিকে যায়।
অনেকেই এগিয়ে আসেন। ভাল কাজের একটি ইচ্ছা শক্তি থেকে আরেকটি সৃষ্টি শক্তির জন্ম নেয়। এ পর্যন্ত যতটা সহযোগিতা পাওয়া গেছে তা দিয়ে অন্তত একশ পরিবারের এক সপ্তাহের খাবারের জোগান হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে আছে চাল ডাল পেঁয়াজ আলু তেল লবণ ও সাবান। খাবারের এই প্যাকেটজাতের কাজ করছে বাবুইয়ের শিশুরা। বাবুইয়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় একশ। এদের বয়স ৬ থেকে ১৪ বছর।
তারা প্রতিষ্ঠিত স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর মধ্যে লেখাপড়া করছে। প্রতিদিন এরা ৪/৫ জন করে ঘরে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে খাদ্য নিয়ে প্যাকেটে ভরে। তারপর এই প্যাকেট নিয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবীরা। আগেই তৈরি করা তালিকা দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্যাকেট পৌঁছে দেয়। বাবুইয়ের সদস্য তিবাহ্, তরী, কথা ও গল্প। বললো খুব ভাল লাগছে। দুই বোন কথা ও গল্পের মা সঙ্গীত শিল্পী ফারজানা নাইম বললেন, মেয়েরা নিজে ও পরিচিতিজনের কাছে ফোন করে খবর নেয়।
এলাকায় ও শহরের আশেপাশে কর্মহীন শ্রমজীবীর কোন বাড়িতে খাবারের টান ধরেছে, ঠিকা কাজের লোকের বাড়ি, নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা সংকোচ বোধ করেন তাদের বাড়ির খবর নেয়া হয়। তালিকা তৈরি করে প্রত্যেকের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয় স্বেচ্ছাসেবী ও শিশুদের অভিভাবকগণ। সংকোচবোধ করা নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়িতে গোপনে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
ফারজানা বললেন, সন্তানদের পুথিগত শিক্ষার পাশপাশি সাংস্কৃতি ও মানবতার ধারায় গড়ে তুলেছেন। বাবুইয়ের পরিচালক জুয়েল বললেন, তার প্রতিষ্ঠানে প্রথমেই পাঠ দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের। এরপর সঙ্গীত আবৃত্তি ছবি আঁকা। তারপর সামজিক ও পরিবেশ সচেতনায় গড়ে তোলা হয়। বাবুইয়ের শিশুরা করতোয়া নদী রক্ষায় প্রতীকী কাগজের নৌকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে।
শিশুদের এমন উদ্যোগ দেখে দেশের বরেণ্য সাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার আনন্দের অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। ‘একাত্তরে আমরা হানাদার পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। জীবনের প্রান্ত সীমায় আমরা আশাবাদী এই শিশুদের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে।’ রাকিব জুয়েল বললেন, করোনা সন্দেহের রোগী, সিজনাল সর্দি কাশি ও অন্য অসুখ বিসুখে চিকিৎসা সহায়তায় ৮ চিকিৎসক ও ১০ স্বেচ্ছাসেবীর সমন্বয়ে ১৮ সদস্যের র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
এই কাজে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বগুড়া জেলা শাখা ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিব) চিকিৎসকগণ। করোনা সন্দেহের কোন রোগীর খোঁজ পেলে চিকিৎসকগণ পিপিই (ব্যক্তি সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরে সেবার অঙ্গীকার করেছেন। দূরের রোগী হলে দ্রুত যানবাহনের ব্যবস্থা করছে এই টিম। করোনা মোকাবেলায় আরও কয়েকটি কাজ তারা করছে।
গণ সচেতনতায় ‘করোনা : বগুড়া পরিস্থিতি নামে’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করেছেন। সকল ধরনের গুজব রটনা থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরী বিষয়গুলো অবহিত করা। সামজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান। এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার সদস্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। নিত্যদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। এই কাজে জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রুপকে সহযোগিতা দিচ্ছে। -জনকন্ঠ