এবার বিশ্বমানের হাসপাতাল হবে বাংলাদেশে
প্রকাশের সময় : 2020-12-09 15:53:45 | প্রকাশক : Administration
মিজানুর রহমানঃ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশ নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায় চীন। এ নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছে বেইজিং। ঢাকা ওই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
কেবল চীন নয় কাছাকাছি সময়ে তুরস্ক এবং সৌদি আরবও বাংলাদেশে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধাসমৃদ্ধ হাসপাতাল নির্মাণে প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই সুলিখিত বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। তিনটি প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এর কারিগরি দিক পর্যালোচনা চলছে।
বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্কুর অবস্থার বিষয়টি বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। নানা কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা হাসপাতালগুলোর ওপর অনেকের আস্থা নেই। আস্থা ফেরানোর চেষ্টার পাশাপাশি দেশে উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি অনেক প্রস্তাব এখন আলোচনার টেবিলে। করোনার কারণে বিদেশযাত্রা বিশেষত রোগীদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপে বিভিন্ন দেশে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণকারী বাংলাদেশিরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। বিত্তশালী ওই রোগীদের জন্যও সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ বা থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আদলে বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশে এক বা একাধিক হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরা ভাবছেন। সেটি একক বা যৌথ, দেশি কিংবা অনেকটা ডিজিটাল। হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসক ও নার্সের ৭০ শতাংশ থাকবে বাংলাদেশি। বাকি ৩০ ভাগ বিদেশি।
তাতে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়োগ হবে। প্রত্যেক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। যেখানে চিকিৎসক, নার্সের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে গড়ে তোলা হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতিবছর দেশ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বিদেশে চলে যায়। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা ভালো হলে এই টাকা দেশেই থাকতো।
দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর আড়াই থেকে ৩ লাখ রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এর মধ্যে বড় অংশই যান ভারতে। ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম বিষয়ক প্রফেশনাল সেবা নেটওয়ার্ক গ্র্যান্ট থর্টনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রায় ৪-৫শ’ কোটি ডলারের বেশি ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম খাতে বড় অবদান বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের। দেশ দু’টির যৌথ অবদান প্রায় ৩৪ শতাংশ। কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই হচ্ছে বাংলাদেশি রোগীদের প্রধান গন্তব্য। সে কারণে করোনাকালে আসা হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। চীনের প্রস্তাবে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ লোকের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি ফোকাস করা হয়েছে।
তাদের কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। তাদের প্রস্তাবটি বহুমাত্রিক। প্রথমত: মূল হাসপাতালটি রাজধানীর উপকণ্ঠে কিংবা আশেপাশের যেকোন শহরে হতে পারে। তবে অবশ্যই শহরটির সঙ্গে বিমান, রেল এবং বাসের সরাসরি এবং নির্বিঘ্ন যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে।
বেইজিংয়ের প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরগুলোতেও তারা হাসপাতাল তৈরিতে আগ্রহী। তবে সেক্ষত্রে অবশ্য তাদের চাহিদা মাফিক জমি এবং নির্বিঘ্ন যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তুরস্ক কিংবা সৌদি আরব ঢাকার বাইরে যেতে রাজি নয়। তারা ঢাকার আশেপাশেই হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়।
চীন সরকারের প্যাট্রনে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন- সিএমইসি’র হাসপাতাল নির্মাণ সংক্রান্ত বিনিয়োগ প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা পর্যায়েও তারা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল তৈরিতে বিনিয়োগ করতে চায়। এলাকা এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় ওই হাসপাতালগুলোর শয্যা নির্ধারিত হবে।
প্রত্যেকটি হাসপাতাল সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার শয্যার হবে। সব মিলে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার শয্যার ৫০ থেকে ১০০টি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। চীন প্রস্তাবিত বিভাগীয় এবং জেলা শহরের হাসপাতাল হবে