শুরু হচ্ছে যমুনায় পৃথক রেলসেতুর নির্মাণ
প্রকাশের সময় : 2021-01-07 12:05:01 | প্রকাশক : Administration
মশিউর রহমান খানঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণ কাজ। যমুনা নদীতে সড়ক সেতু নির্মাণের পর দেশের এক প্রান্তের সঙ্গে অপর প্রান্তের যোগাযোগের লক্ষ্যে এই ডুয়েল গেজ রেলসেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পৃথক রেলসেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের দুই অঞ্চলের যোগাযোগে আর কোন বাধাই থাকবে না।
বর্তমানে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানতম সমস্যা এ যমুনা নদী। বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতু দিয়ে কোনমতে চলাচল করছে ট্রেন। এর গতি ঘণ্টায় মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার। পৃথক সেতুতে ডুয়েল গেজ ডবল লাইনে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এছাড়া এই সেতু নির্মাণের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমাঞ্চালে অতি সহজে ট্রেনে চলাচল করতে আর কোন বাধাই থাকবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ৩০০ মিটার উত্তর দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করা হবে।
ডবল লাইন হওয়ায় সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বিবেচনা করছে রেলওয়ে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও সংশোধিত প্রকল্পে সময়সীমা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
ডুয়েল গেজ ডবল লাইন বিশিষ্ট সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগে কমপক্ষে ৪০ মিনিট সময় কমে আসবে। একইসঙ্গে যোগাযোগে এক নতুন গতির সঞ্চার হবে। পৃথক সেতু থাকায় বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
জাপান সরকার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি কর্পোরেশন, তোয়া কর্পোরেশন এ্যান্ড জেইএফ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই সেতুটি নির্মাণ করা হবে। দেশীয় শ্রমিকের পাশাপাশি সার্বিক কর্মকান্ড তত্ত্বাবধানের জন্য সার্বক্ষণিক সেতুর নির্মাণ কাজে ১৫০ জন জাপানী বিশেষজ্ঞ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে কাজ পেয়েছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান পার্ল এন্টারপ্রাইজ, মীর আকতার এন্টারপ্রাইজ, তমা এন্টারপ্রাইজ, ডিসিডিএল, আজম এন্টারপ্রাইজ, মোনায়েম এন্টারপ্রাইজ ও ম্যাক্স এন্টারপ্রাইজ। যমুনা নদীর ওপরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর পাশেই ‘বঙ্গবন্ধু ডুয়েল গেজ রেলসেতুর’ নির্মাণকাজ অন্য যে কোন সেতুর চেয়ে উন্নত প্রযুক্তিতে করা হবে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দিনে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় সেতু পার হতে ট্রাফিক সিগন্যালে নষ্ট হয় অনেক সময়। ওজন সীমাবদ্ধতার কারণে ভারি পণ্যবাহী ট্রেন চলতে পারে না। এ সেতুতে ট্রেনও পূর্ণগতিতে চলতে পারে না। ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে ট্রেন। নতুন ডবল লাইন সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
নির্মাণ ব্যয়ের ৭২ শতাংশ ঋণ সহায়তা দেবে জাপান (জাইকা। সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি কর্পোরেশন, টিওএ কর্পোরেশন এবং জেএফই। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ছয় হাজার ৮০১ কোটি টাকা। আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ। এই অংশে ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
জাপানের জাইকার অর্থায়নে ২০২৫ সালের মধ্যে রেলসেতুটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। রেলসেতুর ওপর দিয়ে কম করে হলেও ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সেতুর ওপর ধীরগতিতে রেল চলায় ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
বঙ্গবন্ধু সেতুকে রক্ষা, যাত্রীদের দুর্ভোগ দূর করতে এবং দেশের রেল যোগাযোগ আরও উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে ভারি মালামাল পরিবহনে কন্টেনার পরিবহন বাড়বে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেনারসমূহ দেশ-বিদেশে পরিবহন করা হবে। - সূত্রঃ অনলাইন