দেশে মানবিক উন্নয়ন চাই
প্রকাশের সময় : 2021-02-17 14:36:27 | প্রকাশক : Administration
প্রভাষ আমিন: আওয়ামী লীগের অনেক সমালোচনা আছে। টানা এক যুগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলটি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একের পর এক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়েছে। দুর্নীতি প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ব্যাংক শেয়ারবাজারে সুশাসনের প্রবল অভাব। মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তবে একটা বিষয় মানতেই হবে, আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। গত এক যুগে যা হয়েছে, তার তালিকা দিলে পাঠক বিরক্ত হবেন। চোখের দেখা উন্নয়নের তালিকাও অনেক লম্বা। এমনকি গোটা বিশ্বে যখন ২০২০ সালকে ভুলে যেতে চাইবে। সেই বছরও বাংলাদেশের অর্জনের ডালি কানায় কানায় ভরা। বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশে যখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তখন ইতিবাচক ধারায় থাকা অল্প কয়েকটি দেশের একটির নাম বাংলাদেশ। মাথাপিছু গড় আয়ে পুঁচকে বাংলাদেশ বিশাল ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবার। এটা বাংলাদেশের দাবি নয়, এডিবির পূর্বাভাস। করোনায় গোটা বিশ্বেই স্থবিরতা ছিলো। প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। তারপরও থামেনি রেমিটেন্সের গ্রোথ। বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ভেঙেছে। করোনায়ও থেমে থাকেনি উন্নয়নের চাকা। তাই তো বিজয়ের মাসেই সংযুক্ত হয়েছে প্রমত্তা পদ্মার দুই পার। মাতারবাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম মাদার ভেসেল ভিড়েছে, যা আগামীতে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আনপ্রেডিক্টেবল। বছরের প্রথম দিনেই রেকর্ডের খেলায় মেতেছিল শেয়ারবাজার। তবে আমি যে পূর্বাভাস নিয়ে রীতিমতো এক্সাইটেড, সেটি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ-সিইবিআর। তাদের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব ঠিকঠাক থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এটা অবশ্যই অনেক বড় অর্জন, বিশাল সম্ভাবনা। অন্যদের কথা জানি না, আমি নিজে এই সম্ভাবনায় প্রবল বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি জানি উন্নত দেশগুলো তাদের সামর্থ্যের চূড়া ছুঁয়েছে। তাই তাদের এগোনোর গতি হবে মন্থর। আর বাংলাদেশের মত দেশগুলো চাইলে দ্রুত এগোনো সম্ভব। বাংলাদেশ চাইছে, তাই এগোচ্ছেও দ্রুত। তবে কোনোরকমে নামকাওয়াস্তে উন্নয়নের দিন শেষ।
এখন কোয়ানটিটির পাশাপাশি কোয়ালিটিও চাই। যারা আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারেন না, দৃশ্যমান উন্নয়নও তাদের অন্তরে জ্বালা ধরায়; উন্নয়নের বিপরীতে তারা রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষের ছবি দেখিয়ে বলেন, এ তবে কীসের উন্নয়ন? আওয়ামী লীগ আমলে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র্যতা কমেছে। কিন্তু দারিদ্র্যতা তো শূণ্য হয়ে যায়নি, আর সেটা হওয়া সম্ভবও নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দরিদ্র মানুষ আছে, ভিক্ষুক আছে, সেখানেও পার্কে মানুষ ঘুমায়। কোনোদিন যদি বাংলাদেশ বৈষম্যমুক্ত হয়, সম্পদের সুষমবন্টন হয়, কেউ যদি ফুটপাথে না ঘুমায়; তাহলে তো সবচেয়ে ভালো। কিন্তু তেমন দিন এখনও অনেক দূর। তবুও আমাদের হাল ছাড়লে হবে না। সব মানুষ উন্নয়নের সুফল পাক, তেমন একটা সময়ের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শুধু কোনোরকমে চূড়ায় ওঠা নয়, সেখানে স্থির হয়ে থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ যে এখন উন্নয়নের বিস্ময়, সেটা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতার ধারাবাহিকতার কারণে। কিন্তু এ দুটি রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের বিসর্জন দিতে হয়েছে গণতন্ত্র আর নির্বাচনী ব্যবস্থা। তারপরও উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রকে বিসর্জন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। উন্নয়ন না গণতন্ত্র, এই বিতর্কটি অর্থহীন। আমাদের গণতান্ত্রিক পথেই উন্নয়নের দিকে যাত্রা করতে হবে। আমরা উন্নয়ন তো চাইই; সাথে অবশ্যই চাই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিবাদ করার সুযোগ। যেনতেন ভাবে উন্নয়নের পথে যাত্রা করাটাই শেষ কথা নয়। সেটা টেকসই হতে হবে এবং মানসম্পন্নও হতে হবে। লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ