আবারও রমজান এলো! এলো নববর্ষও!!

প্রকাশের সময় : 2021-04-15 11:56:13 | প্রকাশক : Administration
আবারও রমজান এলো! এলো নববর্ষও!!

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন

বছর পেরিয়ে গেল। ইংরেজী বছর, বাংলা বছর; এমনকি হিজরী বছরও। সব গেল। ফিরে এলো রমজানও। তবুও বিশ্ববাসী এখনো করোনামুক্ত পৃথিবী পেলো না। পাবো, পাচ্ছি বলেও পেলো না। খুব আশায় ছিল; খুব। কিন্তু হয় হয় করেও হয়নি। আশা পূরণ হয়নি। হবে দূরের কথা। উল্টো পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই গেল। ক’দিন আগে ঠিক উল্টো ছিল। সংক্রমণ কমলো, মৃত্যু কমলো। আসলো টিকা। চারদিকে আনন্দের ঢেউ বইতে শুরু করেছিল।

আমার শোনিমও ভাসছিল সেই ঢেউয়ে। ভাসতে ভাসতে নিজের কলেজের আঙিনায় ভেসে যাবার স্বপ্নে বিভোর ছিল। উদ্বেলিত ছিল। গেল টানা একটি বছর শোনিমের কলেজে যাওয়া হয়নি। পাওয়া হয়নি ক্লাসের বন্ধুদের সান্নিধ্য। করা হয়নি ওদেরকে নিয়ে উদ্দাম আনন্দময় সময় পার। স্কুল জীবনে ছেলেমেয়েরা অপেক্ষায় থাকে কলেজে কবে উঠবে এই আশায়। উচ্ছল, উজ্জল তারুণ্যের প্রচন্ড দীপ্তমাখা উল্লাস করার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা কলেজ আঙিনা।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এমনি জায়গাটিতে যাওয়া ওদের বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য কেবলই দিবাস্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল। কলেজে উঠলো, কলেজ জীবন শেষও হয়ে যেতে লাগলো। তবুও সেই কলেজ জীবনকে দেখা হলো না। করোনা গেল না বলেই হলো না। মানতেই হবে, করোনা যায়নি। বরং গেল একবছরে নিয়ে গেছে বহু তাজাপ্রাণ। এখনো আরো প্রাণ সংহারে ভেসে বেড়াচ্ছে দেশ হতে দেশান্তরে। বাংলাদেশেও দাবড়ে বেড়াচ্ছে। বেড়াচ্ছে শহরে; বেড়াচ্ছে গ্রামে।

এদিকে আবার বাড়ছে করোনা; হুহু করে বাড়ছে। সাথে বাড়ছে আতঙ্ক। দেশ আবার স্তব্দ হয়ে যাবার আতঙ্ক। যে মূহুর্তে আঁতেলদের দল মোটামুটি রণেভঙ্গ দিয়ে করোনা নিয়ে আজগুবি লেখালেখি বন্ধের পথে ছিল, ঠিক সেই মূহুর্তে করোনা আবার বেঁকে বসলো। জানি না এবার কতটুকু কী করে! কতটুকুই বা ছড়ায় আর কতদূরই বা গড়ায়। এখন আর কিছুই বুঝি না। বুঝি না করোনার গতি, বুঝি না প্রকৃতি। কেবল এতটুকুন বুঝি, শীতের দেশে করোনা বাড়ে শীতের সময়; আর গরমের দেশে গরমের সময়।

গরমের এই সময় দেশের জন্যে, বিশেষ করে সিমেক পরিবারের জন্যে বড়ই খারাপ সময়। খারাপ না হলে এত অসময়ে সাইফুল এভাবে চলে যেতে পারে! সদ্য চল্লিশ পেরুনো তরতাজা যুবক সাইফুল। প্রচন্ড উদ্দ্যোমী আর পরিশ্রমী। করোনাকে ভয় পেত না কখনোই। গেলবার করোনায় সিমেকের হয়ে এলাকাবাসীকে ত্রাণ বিলিয়েছে অকুতোভয় সৈনিকের মত। রাতভর জেগে জেগে খাবারের প্যাকেট করেছে। শতশত মানুষকে সাহায্য করেছে। মরণকে কখনো ভয় পায়নি। তোয়াক্কা করেনি।

এবার সেই মরণ ওকে জাপটে ধরেছে। যেমনি জীবিতকালে সাইফুল আমাদের এই সিমেক পত্রিকা আর পত্রিকার বান্ডিল জাপটে ধরে বসে থাকতো! ঠিক তেমনি। একবার নয়, দু’বার নয়; বহুবার। সন্ধ্যার ট্রেনে চেপে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে পত্রিকার অনেকগুলো বান্ডিল নিয়ে রওনা দিত ধলার উদ্দেশ্যে। শতশত যাত্রীর ভীড়ে এত সহজেই কি এসব নিয়ে যাওয়া যায়! এ পারা দেয়, ও বসে পরে। আরো কত কি। সাইফুল অতন্ত্র প্রহরীর মত পত্রিকার সবগুলো বান্ডিল দু’হাত মেলে আগলে রাখতো। নিজে বসতো না। পত্রিকার উপর কাউকে বসতেও দিত না।

রাতের ট্রেন লেট করে গভীর রাতে ধলায় পৌঁছলেই বাঁধতো বিপত্তি। স্টেশনে লোক নেই। জন মানব শুণ্য। এত্ত এত্ত পত্রিকা কে বয়ে নিয়ে যাবে সিমেক ফাউন্ডেশন অফিসে! সাইফুলের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। হাসতে হাসতে পত্রিকার বান্ডিল মাথায় নিত আর সাজিদকে বলতো, কপালডা ভালা। আইজ বৃষ্টি নাই। বৃষ্টি থাকলেও সাইফুল ঘাবরাতো না। ভিজে ভিজে পত্রিকার বান্ডিল মাথায় নিয়ে অফিসে পৌঁছতো সিমেক ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইফুল।

ঝড়, বৃষ্টি কিংবা করোনা পারেনি সাইফুলকে হারাতে। কিছুতেই পারেনি। অথচ অকস্মাৎ হার্ট এট্যাক ওকে হারিয়ে দিয়েছে। সময় দেয়নি এতটুকুন। সময় দেয়নি ডাক্তার ডাকার, সময় দেয়নি ঢাকা আনার। মূহুর্তেই নিয়ে গেছে পুরো জীবন। ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে রেখে যাওয়া সংসারের বাকীদের। বিধবা করেছে স্ত্রীকে আর সন্তানহারা করেছে গর্ভধারিনী মাকে। এতিম করেছে তিন তিনটি সন্তানকে। কত ঠুনকো মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবন!

আমাদের সাইফুলের তিরোধানে সিমেক পরিবার ভাল নেই। আবার জ্বালাওপোড়াও কান্ডে ভাল নেই দেশমাতৃকাও। কেমন জানি সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে সব। ভাল চেহারার মানুষগুলোও কালো রূপ লুকাতে পারছে না। নিপুন রায়ের ফোনালাপ অন্তত তাই বলে। জ্বালাও পোড়াও নিয়ে কত কুবুদ্ধিই না তিনি দিলেন সহকর্মীকে! মোদীবিরোধী আন্দোলন করে হেফাজত আর গাড়ী দাউদাউ করে পোড়াতে বিএনপির কর্মীকে বলে বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়। শুধু পোড়ালেই হবে না। দাউদাউয়ের ভিডিও দিতে হবে।

ভিডিও পাঠাবে বিশেষ জায়গায়। বিশেষ জায়গায় বসে বিশেষ ভাবে আয়েশ করে তার ভাইয়া বিশদ ভাবে দেখবেন বাংলা পোড়ার দৃশ্যাবলী। মিষ্টিদুধের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিয়ে দেখবেন। কি চমৎকার দৃশ্য! কিন্তু বাঙালী কি এতই ভোদাই! বিষয় আষয় কিছুই বোঝে না! মোদীর আসাটা বিষয় হলে বাঙ্গালী বুঝতো। কিন্তু কিভাবে বুঝবে? মোদী এলেন ঢাকায়, গেলেন সাতক্ষীরা আর গোপালগঞ্জ; অথচ মানুষ মরলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর হাটহাজারী। পুরোদেশ জুড়েই যদি হাঙ্গামা হতো তাহলেও বুঝতাম। বিশেষ দু'একটি জায়গায় এমন উত্তেজনাই বলে দেয় কারা এর পেছনে আর তাদেরকে নিয়ে নিপুণের বিশেষ সেই ভাইয়া বাংলাকে নিয়ে কেমন করে খেলছে।

কোন দ্বিমত নেই! কিছুদিন আগে দিল্লীতে ভারতীয় মুসলিম নিধনে বাংলাদেশের আপামর জনতা মোদীর উপর বেজায় নাখোশ। মোদির ভারত গো মাংসের জন্য মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের ওপর যে তান্ডব চালিয়েছে তা মহা আতঙ্কের। বিজেপির সাম্প্রদায়িক উগ্রতা ভারতের বিরুদ্ধে সারা মুসলিম বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। যার পুরো দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীকেই নিতে হবে। কিন্তু তিনিই কি প্রথম? তাঁর হাতেই কি প্রথম মুসলিম নিধন হয়েছে এই বিশ্বে? বিশ্বের কথা বাদ দিলাম। শুধু এশিয়ার কথাই না হয় বলি।

প্রতিবেশী মিয়ানমার নিধন করেছে রোহিঙ্গা মুসলিম গোষ্ঠীকে। উদ্বাস্ত হিসেবে যাদেরকে আশ্রয় দিতে হয়েছে এই বাংলাদেশেই। বছর দুয়েক আগে সেই মিয়ানমারের বিশেষ মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ঘুরে গেলেন ঢাকায়। কোথায়ও কোন প্রতিবাদ, ভাংচুর কিংবা টুশব্দ হয়েছে? হয়নি! শব্দ করেনি তৌহিদী জনতা, শব্দ করেনি হেফাজত।

গেল চারটি বছর ধরে তথাকথিত যুদ্ধের নামে দেদারছে ইয়েমেনী মুসলিমদের বোমা মেরে নিধন করছে সৌদি আরবের মুসলিম সরকার। এসব নিয়ে কেউ একটি কথাও বলে না। না বলে সৌদি জনগণ, না বলে বাংলাদেশী ভাইয়েরা। খুব শীঘ্রই সৌদি যুবরাজ সালমান বাংলাদেশে আসছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে। মুসলিম নিধনের দায়ে অভিযুক্ত করে তার আগমনের খবরেও সবাই চুপ। কেউ মাঠে নামছে না। কেউ হুংকার দিচ্ছে না। দেবেও না। উল্টো তাঁর সাথে দেখা পাবার জন্যে হোটেলে লাইন পরবে।

বাকী রইল পেয়ারে পাকিস্তান! ৭১ এ তাদের হাতে লাখ লাখ বাঙালী মুসলিম মা-বোনের ইজ্জত গেছে, প্রাণ গেছে। সারা বাংলায় মুসলিম নিধন হয়েছে কাতারে কাতার। গেল ৫০ বছরে সেই পাকিস্তান থেকে রাষ্ট্রীয় সফরে একের পর এক রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধান বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। বাংলার জনগণ বাংলার কোথায়ও সামান্য প্রতিবাদ দেখেনি। যেমনটা দেখেছে এবারের মোদীর সফরের প্রতিবাদে হেফাজতী তান্ডবে।

এক অদ্ভুত জাতি আমরা। ভিনদেশে ভিনদেশী মুসলিম মারা গেলে নিজ দেশে তান্ডব চালাই। দেশকে লন্ডভন্ড করে দেই। অথচ ভিনদেশীদের হাতে নিজদেশে নিজের জ্ঞাতী মুসলিম ভাই মারা গেলেও মুখ খুলি না। নিশ্চুপ থাকি। আর কৌশলে ৩০ লাখকে ৩ লাখ বানাবার পাঁয়তারা করি। খুব জানতে ইচ্ছে করে আজ যদি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আসেন, তাহলে তারা কী করবেন? যারা ভাংচুর করেছেন হাটহাজারী আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, জনগণের সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছেন আর রেল স্টেশন জ্বালিয়ে দিয়েছেন! মুখ খোলবেন? ইমরান খান এলে একাত্তরের কথা মনে রেখে বাঙালী গণহত্যা, নারী ধর্ষণের জন্য এমন তান্ডব করবেন?   

আমি নিশ্চিত, করবেন না। কেননা তাদের আক্রোশের জায়গাটা মোদী কিংবা ইমরান নয়। জায়গাটা হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু। যা তারা মুখে বলেন না। কিন্তু একটার পর একটা কর্মকান্ডের মাধ্যমে হাতে কলমে বুঝিয়ে দেন। অনেকটা করোনার মত। নিজেদের আসল রূপ বুঝতে দেয় না। কিন্তু সুযোগ আর পরিবেশ পেলেই দানবরূপে লক্ষ্য হাসিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com