ভ্রমণ; যশোর ও সুন্দরবন
প্রকাশের সময় : 2018-07-13 12:30:51 | প্রকাশক : Admin
লে: কর্ণেল আকম জাহিদ হোসেন অবঃ: গত ১ মে ২০১৮ খৃষ্টাব্দে অফিস হতে আমি ৫ দিনের ছুটি পেলাম। ফলে, ছুটি কাটানোর জন্য যশোরে আমার মেয়ে পূর্ণের বাসা এবং সুন্দরবনে বেড়ানের জন্য পরিকল্পনা করলাম। ট্রেনের টিকেট পেতে সমস্যা হতে পারে ভেবে মেয়ের স্বামী আনসার বাহিনীর কর্মকর্তাকে ডেকে আমার নিকট নিয়ে এসেছেন। ছেলেমেয়ে ও মহিলাদের নিয়ে এই ভীড়ের মধ্যে ট্রেনে উঠা অত্যন্ত কঠিন হবে। আমরা ট্রেনে আদৌ উঠতে পারব কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমার পরিচয় দিয়ে আমি আনসার বাহিনীর এই কর্মকর্তার নিকট প্রয়োজনীয় সহায়তা চাইলাম। তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বললেন যে, ট্রেন ষ্টেশনে এলে তিনি আমাদের অবশ্যই ট্রেনে উঠিয়ে দিবেন।
অবশেষে ৬:৫২ মিনিটের ট্রেন বেলা ১০:৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশনে এসে প্ল্যাটফরমের নিকট দাঁড়িয়েছে। ট্রেনের এহেন বিলম্বের কারণ আমার জানা নাই। প্ল্যাটফরমে ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যাত্রীদের বগি হতে নামা-উঠার মধ্যে রীতিমত দস্তাদস্তী শুরু হয়েছে। কে আগে বগিতে উঠবে আর কে আগে নামবে। নিয়ম তো হচ্ছে আগে যাত্রীদের নামার সুযোগ দিতে হবে। উঠার যাত্রীগণ ট্রেনে পরে উঠবে। এ যেন উঠা-নামার এক পুরস্কার বিহীন তুমুল প্রতিযোগীতা। যাই হোক, আনসার কর্মকর্তার বিশেষ সহায়তায় আমরা ১১ জন সদস্য ট্রেনের বগিতে উঠতে পেরেছি।
ট্রেনে আমাদের উঠার নিমিত্তে অশেষ সহ্য়াতা করার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমার পরিবারের অন্যান্য সকলের পক্ষ থেকে উনাকে এবং উনার সংস্থাকে আমার এ লেখনীর মাধ্যমে আন্তারিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ট্রেনের এসি বার্থ বেশ ভাল। তবে, জানালার কাঁচগুলি ভাঙ্গা। খুব সম্ভবত ট্রেন চলন্ত অবস্থায় বাহির হতে কেউ ঢিল মেরে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে থাকতে পারে। পরে দেখলাম, ট্রেনের অনেক জানালাই অনুরুপভাবে ভাঙ্গা। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বাইরের সুন্দর পরিবেশ ও মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছিল। বিশেষ করে আমার মত ট্রেনের অনেক যাত্রী যমূনা নদীর দৃশ্য ও হাডিঞ্জ সেতুর দৃশ্যসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্য-সৌন্দর্য্য মন ও প্রাণ ভরে অবলোকন ও উপলব্দি করতে পারে নাই। তাই, রেলওয়ে কতৃপক্ষের এসব ভাঙ্গা জানালার কাঁচ অনতি বিলম্বে মেরামত করা উচিত। আমার বিশ^াস মেরামত করার জন্য তাদের যথাযথ বিভাগ ও জনবলও রয়েছে। এর জন্য নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দও আছে। প্রয়োজন শুধু নজরদারী ও তদারকি করা।
বঙ্গবন্ধু ব্রীজ বা যমুনা ব্রীজ ও হার্ডিজ্ঞ ব্রীজ সম্পর্কে পরে আলোচনা করব। যাই হোক, আমাদের ট্রেন নিজ গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে আনা নাস্তা, দুপুরের খাবার ও টিফিন সবাই এসি বার্থের ভিতরে অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে আমরা সকলেই খেলাম। তবে, এ খাবারের মাঝে এক অন্য রকম আনন্দ ছিল। ফ্লোরে কাপড় বিছিয়ে তার উপর সকলে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছি। অনেকটা ট্রেনের ভিতর পিকনিকের মতই লেগেছে। ট্রেন হেলে দোলে চলছে। আর আমরা ট্রেনের ভিতর বসে বসে খাচ্ছি।
পাশের কক্ষে আমার ছোট বেলার বন্ধু ইউসুফ ও তার ৩ জন সহযাত্রীদের সঙ্গে বসে অনেক গল্পগুজব করলাম। তাদের মধ্যে যারা ছিলেন তারা হচ্ছে জনাব আতিয়ার, মতিয়ার ও আরিফিন। তাদের সঙ্গে তাদেরও নিজস্ব আনা নাস্তা খেলাম। আমার বাসা হতে আনা খাবারও তাদের খেতে দিলাম। ট্রেন ভ্রমনে ট্রেনের ভিতর এরূপ বন্ধু মহল সঙ্গে পেয়ে খুবই আনন্দে ও সুন্দরভাবে সময় কেটেছে। সময় কী ভাবে যে পেরিয়েছে মোটেও টের পাই নাই।
অন্যদিকে জহুর ও আছর নামাজের সময় যখনই হয়েছে তখনই আমরা বগির ভিতর কছর নামাজ আদায় করে নিয়েছি। আমরা একই বার্থে পৃথক পৃথক ভাবে কছর নামাজ আদায় করেছি। জায়গার স্বল্পতার কারণে আমরা জামাতে নামাজ আদায় করতে পারি নাই। আমার সকল বন্ধুরাই নামাজি এবং আমিসহ সকলের মুখেই শুভ্র দাড়ি। গল্প করতে করতে এক সময় ট্রেন চূয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ষ্টেশনে এসে পড়েছে। বন্ধুরা সকলেই আমার নিকট হতে বিদায় নিল।