স্বপ্ন জয়ের পথে দেশের বিদ্যুত খাত উৎপাদন ক্ষমতা ২০,০০০ মেগাওয়াট

প্রকাশের সময় : 2018-09-26 15:45:34 | প্রকাশক : Admin
স্বপ্ন জয়ের পথে দেশের বিদ্যুত খাত  উৎপাদন ক্ষমতা ২০,০০০ মেগাওয়াট

সিমেক ডেস্কঃ উৎপাদন ক্ষমতায় ২০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বিদ্যুত খাত। উদযাপন করা হয়েছে আলোক উৎসব। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, সদরঘাট আর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে হয়েছে এই আলোক উৎসব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় তিন দিনের এই আয়োজন উদ্বোধন করে বলেছেন, দেশের বিদ্যুত চাহিদা পূরণে নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সৃষ্টি করে বিদ্যুত খাতের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে ব্যাপক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।

দেশের ১২৪টি বিদ্যুতকেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৪৩ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো থেকে আরও ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। সে হিসেবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। এছাড়া সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে এসেছে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে বিদ্যুত পেয়েছিলাম মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, চারদিকে হাহাকার, এদেশের অধিকাংশ মানুষের ঘরে আলো ছিল না। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য সর্বপ্রথম আইন করে আমরা বেসরকারী খাতে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করি এবং বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেই। ফলশ্র“তিতে আমরা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এক হাজার ৬০০ থেকে বিদ্যুত উৎপাদন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যেতে সক্ষম হই। সেই সঙ্গে জেনারেটরের ওপর থেকে সব ট্যাক্স তুলে দেই এবং শিল্প কারখানার মালিকদের বলে দেই আপনারাও আপনাদের মতো বিদ্যুত উৎপাদন করুন এবং সেই বিদ্যুত আশপাশে বিক্রিও করতে পারবেন। আমরা গ্রিড লাইন আপনাদের ভাড়া দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন দেখি বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ যা আমরা রেখে গিয়েছিলাম, তার থেকে কমে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে। পৃথিবীর আর কোন দেশের জনগণের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছরে কোন দেশ এভাবে পিছিয়ে যায়, সেটাও আমার জানা ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ৬ দশমিক ২৫ টাকা। কিন্তু বিক্রি মূল্য রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৮২ টাকা। কাজেই এখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। অর্থাৎ বিদ্যুত উৎপাদনে যে খরচ তা আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

১০ বছর আগেও বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত। শিল্প-বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুত খাতে সাড়ে নয় বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুত খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। লক্ষ্য সবার জন্য বিদ্যুত যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

একই সঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে নয় বছরে ২০০৯ সাল থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বিদ্যুত খাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে।

সরকারের ৯ বছরের চেষ্টায় বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে ১১৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে মোট ১২টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট। একইভাবে ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি, ২০১৪ সালে ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে এক হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে এক হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি এবং ২০১৭ সালে দেশে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ১০টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারী খাতে ৬ হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারী খাতে ৪ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুত কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া সরকারী খাতে ২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং বেসরকারী খাতে ২ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুত কেন্দ্রসহ সর্বমোট ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। সরকারী খাতে ৬ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হতে ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুত ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন ঘটবে। 

এক নজরে ২০০৯ সাল থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাড়ে নয় বছরে বিদ্যুত খাতের উল্লে−খযোগ্য অর্জন হলো বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৩১০০ মেগাওয়াট থেকে ১৭২০০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩২৬৮ মেগাওয়াট হতে ১১৩৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, বিদ্যুত সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭% থেকে ৯০% উন্নীত করা; মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার হতে ৪৬৪ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করা; ৯৬ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুত সুবিধা প্রদান।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com