নবায়নযোগ্য জ্বালানি; এক নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : 2018-11-07 17:20:20 | প্রকাশক : Admin
�নবায়নযোগ্য জ্বালানি; এক নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর বিদ্যুত খাতের বড় যে প্রকল্পগুলো এখন বাস্তবায়নের পথে তা শেষ করে বিদ্যুত উৎপাদনে যেতেও সময় লাগবে। এই সময়ে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে তুলনামূলক কম অর্থ বিনিয়োগ করে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৪০৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। আর সরকার চলতি বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ জন্য রোডম্যাপও প্রণয়ন করেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিই আমাদের ভবিষ্যত। কারণ এই খাতে বিদ্যুত উৎপাদন ব্যয় অন্য যে কোন পদ্ধতির চেয়ে কম। ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ঘিরে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানির ব্যবহার ও এর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি কার্যকর করা হয়। নীতিমালায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল উৎস হিসেবে  সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়ো ফুয়েল, জিও থার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় ২০২০ সাল এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি হতে ১০% বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকার নবায়নযোগ্য শক্তি হতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৩১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে যার মধ্যে পাবলিক সেক্টর ১১০০ মেগাওয়াট এবং বাকি অংশ বেসরকারী উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুত ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় না।

বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষম নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস কর্ণফুলী জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয় বিংশ শতকের ষাটের দশকে। বিংশ শতকের শেষের দিক থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যান্য উৎস যেমন সৌরশক্তি বাংলাদেশে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বেসরকারী উদ্যোগে ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ শক্তি নামে একটি প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা দিতে কাজ শুরু করে।

১৯৬২ সালে কর্ণফুলী জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ইউনিটে ২৩০ মেগাওয়াটে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর স্থাপন করা হয়। পানির প্রবাহ ছাড়া আর কোন জ্বালানি না লাগায় কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি বাংলাদেশের একমাত্র বিদ্যুত কেন্দ্র যেখানে বিদ্যুত উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ২৫ পয়সারও কম। কর্ণফুলী জলবিদ্যুত কেন্দ্রটিকে ২০১৫ সালের জাতীয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যুত কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হয় ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীতে অবস্থিত মুহুরী প্রজেক্টে। মুহুরী প্রজেক্ট হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয়  বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। মুহুরী প্রজেক্ট বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়েছিল। বিদ্যুত কেন্দ্রে অবস্থিত ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াাট (০.৯) বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় চালু হয় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২য় বায়ুচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি। জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত উৎপাদনে যাওয়া ৪০৪.৪৬ মেগাওয়াটের বেশি সৌর বিদ্যুতের মধ্যে ২০১.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতই জাতীয় গ্রিডের বাইরে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কক্সবাজার, কুতুবদিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিবাচক বিষয় এই যে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে এটি দ্রুত ও সফলতম নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

নবায়ন যোগ্য জ্বালানি খাতে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কোস্টারিকা ২০১৭ সালের প্রায় পুরোটাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে পার করেছে। তেল-গ্যাস-কয়লার মতো পরিবেশ বিধ্বংসী জ্বালানি ছাড়াও যে বিদ্যুত চাহিদা মেটানো সম্ভব, তা ভালমতোই প্রমাণ করেছে এই দেশটি। কোস্টারিকার মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যম থেকে।

এছাড়া বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ্যাপল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের ৪৩ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবুজ হওয়ার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল তা রক্ষা করেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এ্যাপল ঘোষণা দিয়েছে তাদের সব স্টোর, ডাটা সেন্টার এবং করপোরেট অফিস এখন শতভাগ নির্মল জ্বালানিতে চলছে। এ্যাপল বিভিন্ন ধরনের নির্মল জ্বালানি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে সৌরবিদ্যুত, বায়ু বিদ্যুত, বায়োগ্যাস, ফুয়েল সেলস এবং বিদ্যুত তৈরিতে মাইক্রো-হাইড্রো জেনারেশন ব্যবস্থা।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com