বহুদর্শী এক নেতৃত্ব
প্রকাশের সময় : 2019-01-31 13:20:54 | প্রকাশক : Admin
আসিফ কবীরঃ ছোটবড় সব প্রকৃতির নেতৃত্বের জন্য নেতাকে নৈতিকভাবে শক্তিমান ও বিতর্কমুক্ত হতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বের নেপথ্য কারণ এটিই। নৈতিকতার প্রশ্নে তাকে কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়নি। এজন্য রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে নেতৃত্ব প্রদান ও আস্থা ধরে রেখে তিনি সবসময় পারঙ্গমতা দেখাতে পেরেছেন।
আর অত্যন্ত পরিশ্রমী হওয়ায় তিনি সুচারুভাবে তার দায়িত্ব পালন ও লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছেন। ভালো কর্মপরিকল্পনা, ধারাবাহিক ইশতেহার ও এর ভিত্তিতে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সুনাম অর্জনকে সম্ভবপর করেছেন। পিতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া নিখাদ দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক ব্যুৎপত্তি তাকে অমিত সক্ষম করেছে।
ধৈর্যশীলতা, স্মরণশক্তি, কৃতজ্ঞতাবোধ, নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথার্থ সিদ্ধান্ত প্রদান শেখ হাসিনাকে কিংবদন্তি নেতায় পরিণত করেছে। গণমানুষের জীবনঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য সাধারণের যাপিত জীবনের সমস্যা ও সংকট তিনি সমানুভূতিতে অনুভব করেন।
তার রাজনৈতিক সত্তাটিও অসাধারণ। তিনি নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন সর্বাবস্থায়, সর্বাত্মক। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করেছেন সব সংকট ও আঘাতের। কখনও ষড়যন্ত্র বা অপকৌশল আশ্রয়ী হননি। বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার প্রধানমন্ত্রী থেকেও বিশেষ কোনো ট্রাইব্যুনালে করেননি।
জীবন বিপন্ন করে দেশের ঝুঁকি হ্রাস করেছেন কয়েকবারই। চৌদ্দবার তার জীবননাশের চেষ্টা হয়। এক-এগারোর সময় ঝুঁকি ও হুমকি উপেক্ষা করে দেশে আসেন। মানুষও তাকে ভালোবাসে সব উজাড় করে। গরিব রিকশাচালক হাসমত আলী তার সর্বস্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জন্য জমি কিনে দেন, নির্জন কারাবাসে টেলিভিশন দেখার সুযোগ করে দিতে সবকিছু বিক্রি করে একটা সাদাকালো টিভি সেট নিয়ে বিশেষ আদালতের ফটকে আসে নাম না জানা এক আওয়ামী লীগ কর্মী শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে।
মোহাম্মাদ হানিফ ফ্লাইওভারের দুটি স্প্যান অতিরিক্ত করা হলে মাটির তলদেশে প্রবহমান সার্ভিস লাইনগুলো স্থানান্তর বা বন্ধ না করে জনদুর্ভোগ এড়ানো যাবে একনেক সভায় তিনিই তা বলেন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ছাত্রী হোস্টেল হলে নারীশিক্ষার প্রসার হবে সেই অসাধারণ নির্দেশনা দিতে পারেন একমাত্র তিনিই।
উপবৃত্তির টাকা মোবাইলযোগে সন্তানের মায়েদের কাছে প্রেরণ তার আরেক অনন্য উদ্ভাবন। আমাদের দেশের বহুল প্রচলিত আয়ুর্বেদিক বা ইউনানী চিকিৎসা ব্যবস্থা বাতিল না করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সাধ্যের কথা ভেবে এই চিকিৎসাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অথবা পরিবার পরিকল্পনায় জোরারোপ না করে পশ্চিমা ও উন্নত দেশগুলোর ঋণাত্মক জন্মহার মাথায় রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরি শেখ হাসিনার দূরদর্শিতারই উদাহরণ।
বিশ্বব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ বা জঙ্গি দমনের মতো অসাধ্য সাধন রাজনীতি-অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কাছে তার নেতৃত্বকে ‘রহস্যময়’ করে তোলে। এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধি বেগবান করতে পশ্চিমাদের শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান তাকে করে তোলে বিশ্বনন্দিত নেত্রী। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের স্থল সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার যে কোনো একটি সাফল্যই তার অবিস্মরণীয় নেতা হতে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু অর্জনের সোপানে সতত অগ্রসরমান থেকেছেন তিনি।
বিশ্বনেতা, প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধানের বাইরেও তিনি একজন আটপৌরে অভিভাবক। অবসরে বই পড়েন, লেখালেখি করেন। জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি নিঃসর্গপ্রেমী। ফুল, পাখি, প্রকৃতি ভালোবাসেন। নিজের হাতে রান্নাবান্না করেন। তিনি পোশাক-পরিচ্ছদ-ব্যবহার্যে রুচিশীল, মার্জিত কিন্তু বিলাসী নন। দেশি শাড়ি পরিধান করেন।
আমাদের দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ সম্পন্নকারীদের মূলধারায় যুক্ত রাখতে তিনি কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রদান করেন। সব্যসাচী মানুষ হিসেবে বৌদ্ধ মংরা তার সফরসঙ্গী হিসেবে আকাশপথে ভ্রমণকালে তাদের নির্দিষ্ট সময়ের পর খাবার গ্রহণে মানার কথা স্মরণ করিয়ে এয়ারলাইন্স কর্তপক্ষকে ধর্মগুরুদের সুবিধামতো খাবার পরিবেশনের নির্দেশনা দেন। একই রকম সংবেদনশীলতা প্রকাশ পায় গণভবনে আগত অনাথ শিশুদের মুখে তুলে আপ্যায়নে, দর্শনার্থী বয়োবৃদ্ধদের আসা-যাওয়ার সময় বিশেষ খেয়াল রাখায়। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর তিন কন্যার ভেঙে যাওয়া বিবাহের সম্বন্ধ পুনঃস্থাপনে।
সভা ও আলোচনায় নিজের উপলব্ধি ও বাস্তব জ্ঞান থেকে কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকাকালীনই সারা দেশ সফর করে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও বিস্তারিত হোমওয়ার্কপ্রসূত উন্নয়ন ভাবনার বাস্তবায়নে অন্তঃপ্রাণ থাকেন। তাইতো প্রতিনিয়ত শেখ হাসিনাকে বাঙালির আটপৌরে অগ্রজপ্রতিম তথা ‘আপা’ হিসেবে আরও আপন, অতি কাছের মানুষ করে তোলে।
- সাংবাদিক, বিশ্লেষক