আমার গ্রাম; আমার শহর
প্রকাশের সময় : 2019-03-27 18:12:04 | প্রকাশক : Administration
মুনতাকিম আশরাফঃ ১৯৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জে এক জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যের বিরোধিতা করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তোমরা ৮৫ জন, আমরা ১৫ জন। সামরিক বিভাগে তোমরা ৯০ জন, আমাদের দিয়েছ ১০ জন। বৈদেশিক সাহায্যের তোমরা খরচ করেছ ৮০ ভাগ, আমাদের দিয়েছ ২০ ভাগ। মহাপ্রলয়ে দক্ষিণ বাংলার ১০ লাখ লোক মারা গেল। লাখ লাখ লোক অসহায় অবস্থায় রইল। রিলিফ কাজের জন্য বিদেশ থেকে হেলিকপ্টার এসে কাজ করে গেল। অথচ ঢাকায় একখানা মাত্র সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর কোনো হেলিকপ্টার এলো না। আমরা এসব বেইনসাফির অবসান করব।’
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ তিনি আমাদের দিয়ে যেতে পারেননি। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ রুদ্ধ করে দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে এনে দিয়েছিলেন আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
পরবর্তী সময়ে স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্ল−বের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন।
নানা শক্তির শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে। ১৬ কোটি বাঙালিকে এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে একসময়ের ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য।
তবে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ধনী-গরিবের বৈষম্য কমছে অপেক্ষাকৃত কম হারে, কম গতিতে। এমন প্রেক্ষাপটেই ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে অগ্রযাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ বর্তমানে শহরে বসবাস করে। সামনে শহরে বাস করা মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে। বর্তমান শহরগুলোর উন্নয়ন করে অতিরিক্ত মানুষের বাসযোগ্য রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তাই নতুন নতুন শহর গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু এখন কালের দাবি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রাম হবে শহর। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’- এই ব্যতিক্রমধর্মী ধারণা জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র অর্থ হল গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া।
উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি দেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
গ্রামপর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে শেখ হাসিনার সরকার। অ-কৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাও দেয়া হবে। নতুন কর্মস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে এক হাজার যুবক বা যুব মহিলাকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।
গ্রামে শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। পাকা সড়কের মাধ্যমে সব গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্তকরা হবে। ছেলেমেয়েরা উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। সুপেয় পানি এবং উন্নত মানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য জেলা-উপজেলায় কলকারখানা গড়ে তোলা হবে। গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে যাবে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা।
উন্নত জীবনব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকার সন্ধানে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার নামে গ্রামের মানুষ আর শহরে ভিড় করবে না। দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে বিদ্যুত। আধুনিক শিক্ষায় আলোকিত হবে প্রতিটি গ্রাম। অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে যাবে প্রতিটি গ্রামে। আমার গ্রাম হবে আমার শহর। এর মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ মার্কিন ডলারের বেশি। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার নেমে যাবে শূন্যের কোঠায়।