মানবতা দেখানো আশ্রয়দাতাকেই হুমকি!
প্রকাশের সময় : 2019-09-12 23:17:10 | প্রকাশক : Administration
সিমেক ডেস্কঃ ২০১২ সালে একবার আগুন লেগেছিলো রাখাইনে। সেবার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তবে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশে প্রবেশ করছিলো মিয়ানমারের বাসিন্দারা। তখনই নড়েচড়ে বসেন অনেকে। আগের-পরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয় জোরেসোরে।
গোয়েন্দারা জানতে পারে, দেশি-বিদেশি কয়েকটি এনজিও রোহিঙ্গাদের এদেশে আসার বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। এই অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ২০১২ সালের জুলাই পরবর্তী সময়ে তিনটি আন্তর্জাতিক এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর চার বছর কেটে গেছে। কিন্তু এনজিওগুলোর নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৭ সালের আগস্টে সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশটিও ঘটে গেলো। এখন এগারো লাখ মিয়ানমারের নাগরিক এদেশের মাটিতে বসবাস করছে। আশ্রিত এই জনগোষ্ঠী এখন বাংলাদেশকেই হুমকি দিচ্ছে! নিজেদের দেশে কয়েক যুগের বঞ্চনা-অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ তারা করতে পারেনি। দেয়ালে পিঠ ঠেকলে পালিয়ে এসেছে, রুখে দাঁড়ায়নি, দাঁড়াতে পারেওনি।
রোহিঙ্গাদের উসকানি দেয়ার অভিযোগে ২০১২ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত আইএনজিওগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কী বহাল আছে? সেই খবর অবশ্য আর নেয়া হয়নি। তবে তারা আছে। এখন তাদের বাজেট ও কাজের পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রায় স্থায়ী আস্তানা গেড়েছে আরও একগাদা এনজিও। বাংলাদেশের কাছে তথ্য, সাহায্য সংস্থা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কারণেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এই অভিযোগে অভিযুক্তদের বিষয়ে এ দফায় কী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? উসকানিদাতাদের কী চিহ্নিত করা হয়েছে?
রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার খরচটা তো দৃশ্যমান। কিন্তু রোহিঙ্গাদের রাখতে প্রশাসনিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবলের পেছনে যে বাড়তি ব্যয়, তার কোনো হিসাব নেই। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতেও বিপুল ব্যয় হয়েছে। রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য আশ্রয় ক্যাম্প বানাতে উজাড় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। রোহিঙ্গারা যদি কখনো যায়ও, ভূমিটা হয়তো বাংলাদেশ ফেরত পাবে, কিন্তু বন পাবো কোথায়? সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করায় যে জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয়েছে তা আসলে অমূল্য, টাকার অঙ্কে হিসাব করে লাভ নেই। তবু জাতিসংঘ হিসাব করেছে। ক্ষতির পরিমাণ শুনবেন, ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকা। কিন্তু এই পরিমাণ টাকা কেউ দিলেও কি আর হারানো বন বা জীববৈচিত্রে ফিরে পাওয়া যাবে? তবে সব ক্ষতি টাকার অঙ্কে মাপা যায় না। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি পাল্টে দিয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের চিত্রই।
স্থানীয় মানুষেরা এখন সংখ্যালঘু। রোহিঙ্গাদের জন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, মাদক চোরাচালান বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের পাত্তাই দেয় না, বলে, আমাদের খাবার তো জাতিসংঘ দেয়, তোদের কে খাওয়ায়? শুধু মুখের কথায় ক্ষান্ত থাকলেও হতো। ক’দিন আগেই এক যুবলীগ নেতাকে মেরে ফেলেছে রোহিঙ্গারা। তারা বেপরোয়া ধরনের মানুষ। শিক্ষা নেই। বছরের পর বছর নির্যাতিত হতে হতে তারা ডেসপারেট, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন।
সব মিলিয়ে স্থানীয় মানুষদের জীবন এখন দুর্বিষহ। তাদের শঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে একদিন উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমি এখনো বলছি, বিপদে পড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটা ঠিক আছে। তাদের সম্মানের সঙ্গে রাখাটাও ঠিক আছে। বাংলাদেশের এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেই চেষ্টাটাই করা উচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটা অবশ্যই মানবিক; বাংলাদেশের বড় সাফল্য। কিন্তু তাদের নিরাপদে, নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে না পারলে আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই এখন আমাদের কূটনীতির টপ প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই পাকিস্তানিদের মতো আটকেপড়ার সুযোগ না পায়। -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত