এই অধঃপতন কী করে ঠেকাবে সমাজ?
প্রকাশের সময় : 2019-09-12 23:24:34 | প্রকাশক : Administration
অজয় দাশগুপ্তঃ সমাজ যদি এমন জটিল আর বাজে হয়, দেশ আর্থিকভাবে এগোলেও কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ একাত্তরে স্বাধীনতা পেলেও এই ভূখণ্ডের অস্তিত্ব দীর্ঘকালের। এর ইতিহাস ও সংস্কৃতি দুনিয়ার বুকে ফেলনা কিছু নয়। ছোটো এক ফালি দেশ, অথচ কত বড়ো ইতিহাস, কত বড়ো বড়ো অর্জন আমাদের! এখনো পৃথিবীর নানা দেশের তুলনায় আমাদের বন্ধন অনেক বেশি শক্তিশালী।
ঘরের কাছের দেশ জাপান। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা উন্নত নামের দেশগুলো এশিয়ার এই একটি দেশ ছাড়া আর কাউকে তেমন পাত্তা দেয় না। ইদানীং ভারত জাতে উঠলেও ভারতের সার্বিক উন্নয়ন জাপানের কাছে নস্যি। জাপানিরা আয়ু, মেধা ও শ্রমে অগ্রসর একটি জাতি। সেদেশেও মানুষ কত ব্যস্ত আর কত যান্ত্রিক। টোকিও শহরে রাতে ছাড়া দিনে পরিবারের মিলন বা একে অপরকে দেখাশোনা করা এমনকি দেখা হওয়াটাও আশ্চর্যের। এমন গল্পও আছে, দম্পতিরা সময়াভাবে শহরে বা কাজের আশপাশে কোনো হোটেলে দেখা করে তাদের দরকারি কথা বা মিলনপর্ব সেরে নেয়।
আমি সিডনির কথা বলি। এদেশকে এখনো গতিতে শম্বুক বলা হয়। লেট ব্যাক নামে পরিচিত এই আয়েশি সমাজেও মানুষের সময় কোথায়? আমি নিজে একসময় এক্সামিনারের কাজ করতে গিয়ে দুপুর রাতে বাড়ি ফিরতাম। আর তখন বাড়ির সবাই থাকত গভীর ঘুমে অচেতন। পরদিন আমি যখন বাসার কাজকর্ম থেকে অবসর নিয়ে বিকেলে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন স্ত্রী-পুত্র পথে। তারা ফিরছে বাড়িতে। ভেবে দেখুন, সেদিক থেকে কত সৌভাগ্য আমাদের!
সে তুলনায় কত ভালো আছে দেশের মানুষ। এখন এই ভালো থাকাটা কি অলস মস্তিষ্কের কু-কাজের সূতিকাগার হবে? না মানুষ ব্যস্ত থাকবে পজেটিভ কাজে? কী দেখছি আমরা? শ্রমজীবী মানুষ বা কৃষক-মজুরদের দেখুন। তাদের সময় নেই। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা দিন কাটায়। সন্ধ্যা বা রাতে বাড়ি ফিরে পত্নী বা পতি কিংবা সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো; এই তাদের জীবন। তারা কিন্তু আকামের জন্য সংবাদ শিরোনাম হন না।
হন কারা? যাদের আমরা বড়ো কর্তা বা পদসহ বলি। একজন জেলা প্রশাসক মানে কী? তিনি জেলার অভিভাবক। এখন অভিভাবকের কোনো চাহিদা নাই বা থাকবে না, এটা মানা কঠিন। নিশ্চয়ই থাকবে। আছে বলেই তো তিনি বিয়ে করেছেন। সেখানে যদি অসুবিধা বা অসন্তুষ্টি থাকে, তার নিরাময়েও সামাজিক বিধান আছে। আছে আবার বিয়ে করার অধিকার। কিন্তু অফিসে আলাদা প্রমোদখানা বানিয়ে মজা লোটার মতো জঘন্য আর নোংরা কাজ করার অধিকার আছে তার? এরাই এখন সমাজপতি।
মুশকিল হলো, আমরা জানি না আর কতজন এমন করছেন বা করে থাকেন। ধরা পড়া ডিসি কতগুলো সম্মান আর পদক পেয়েছিলেন দেখুন। কেন? শুধু তেল আর চামচাগিরির কারণে। স্বার্থ, টাকা আর ব্যবসা সব মিলিয়ে আমরা নৈতিকতাকে পাঠিয়েছি জাদুঘরে। পেতে পেতে আর বিচার বা শাস্তি না হতে হতে ডিসিমিসি সবাই বুঝে গেছেন কিচ্ছু হবে না। দুই-চার দিন হইচই, তারপর সব ম্যানেজ করা সম্ভব। -লেখক : সিডনি প্রবাসী