সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি পুড়িয়ে বানানো হয় কয়লা
প্রকাশের সময় : 2019-09-16 09:38:35 | প্রকাশক : Administration
টাঙ্গাইলের সখীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ১৯টি কয়লা কারখানা। এসব কারখানায় প্রতিনিয়ত সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি, আকাশমণি, ইউক্লিপটাস, মেহগনি, বেলজিয়ামসহ অন্যান্য কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে। এতে সামাজিক বনায়ন উজাড়ের পাশাপাশি কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পশু, পাখি, বণ্যপ্রাণী, এমনকি মানুষও।
শনিবার সকালে সরেজমিন উপজেলার তেঁতুলিয়াচালা গ্রামে ছয়টি, কীর্তনখোলা গ্রামের ধুমখালী এলাকায় ছয়টি এবং কালিয়ানপাড়া গ্রামে সাতটি কয়লার কারখানা দেখা গেছে। আর প্রতিটি কয়লা কারখানাই গড়ে তোলা হয়েছে সামাজিক বন এবং ঘনবসতি এলাকায়। প্রতিটি কারখানাই টাঙ্গাইল বন বিভাগের সখীপুর হাতিয়া রেঞ্জের কালিদাস বিট কার্যালয়ের আওতাধীন। মাটির তৈরি বড় আকারের প্রতিটি চুলাই সংরক্ষিত ও সামাজিক বন থেকে আনা কাঠ দিনরাত পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে। কারখানার আশপাশে বিশাল আকৃতির কাঠ স্তূপ করে রাখা আছে। এর প্রতিটি কারখানায় চার-পাঁচজন শ্রমিক দিনরাত কাঠ চুলায় পোড়ানোর কাজ করছেন। এসব কারখানায় তৈরি করা কয়লা বস্তায় ভরে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। প্রতিবস্তা কয়লা আটশ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দিনরাত ওইসব চুলা থেকে কু-লী পাকিয়ে সারা গ্রামে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে। এতে এসব এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, গবাদি পশু, পাখি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে হাজার বছরের ঐতিহ্য শাল-গজারি বাগান প্রায় উজাড়ের পথে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওইসব কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, বনের কর্মকর্তারা প্রায়ই কারখানায় এসে টাকা নিয়ে যান। মালিকপক্ষ সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করেই কয়লা পোড়ানোর কাজ করছেন বলেও তারা জানান।
এ ব্যাপারে কারখানা মালিকরা বলেন, বনবিভাগ, স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করেই কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হয়। তবে এসব কাঠ বনবিভাগের নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারদের মাধ্যমে কেনা বলে দাবি করেন তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল শাখার জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকলসহ বন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো কারখানা গড়ে তোলা বেআইনি। অবৈধ কয়লা কারখানার ধোঁয়া পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং কালো ধোঁয়া থেকে নির্গত কার্বন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। কারখানা থেকে ১০০ গজের মধ্যে আবদুল করিমের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘দিনরাত কারাখানার ধোঁয়া ও গন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। পরিবারের প্রায় সবাই কোনো না কোনো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছি। সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মো. এমরান আলী তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওইসব কারখানা উচ্ছেদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, অচিরেই ওইসব কয়লা-কারখানা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কয়লা কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখান থেকে কয়লা কিনে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলাগুলোতে কামার, কর্মকার ও হোটেল মালিকদের মাঝে সরবরাহ করি। - সূত্র: অনলাইন