অমিত সম্ভাবনার তারুণ্যশক্তি

প্রকাশের সময় : 2019-10-09 18:21:12 | প্রকাশক : Administration অমিত সম্ভাবনার তারুণ্যশক্তি

আরাফাত শাহীনঃ একটি দেশের তরুণরাই সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। দেশের যে কোনো বিপদাপদ এবং ক্রান্তিকালে সবার আগে এই তরুণেরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসে। তরুণদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি ব্যবহার করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে একটি দেশ। তবে সবার আগে এই তারুণ্যশক্তির সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

পৃথিবীতে মানুষের মুক্তির জন্য যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেখানে তরুণেরাই মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া ফরাসীবিপ্লব এবং রুশবিপ্লবে আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য লাখো তরুণ যদি তখন এগিয়ে না আসত তবে ফরাসী এবং রুশ দেশের মানুষ আজও মানুষের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারত কি না বলা কঠিন। আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ভাষা আন্দোলন। সেখানেও যে মানুষগুলো বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন তাদের সবাই ছিলেন তরুণ। তরুণদের ভেতরের অপরিমেয় তেজই এক্ষেত্রে তাদের সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে।

সাধারণত একটি দেশের মোট জনসম্পদকে আমরা মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। শিশু, তরুণ এবং বৃদ্ধ এই তিন শ্রেণির মধ্যে একমাত্র তরুণরাই তাদের সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়ে কোনো কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে। শিশু এবং বয়স্ক মানুষ ইচ্ছা থাকার পরও শারীরিক অক্ষমতার কারণে সব কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি হলো এর তরুণেরা। একটি দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাগ হয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এসব জায়গায় তরুণদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। কারণ, তারা যত সহজে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করে শেষ করতে পারে কোনো বৃদ্ধ মানুষের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।

দেশ গঠনে এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেকেই বলে থাকেন, রাজনীতিতে তরুণদের অনীহা দেখা দেওয়ার কারণে আজ আমাদের এমন করুণ দশা। যতদিন না অধিক হারে রাজনীতিতে তারুণ্যের সমাবেশ ঘটবে ততদিন এই সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। দেশের প্রতিটা জায়গাতে অধিক সংখ্যক শিক্ষিত এবং পরিশীলিত মননের তরুণদের প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার লক্ষণীয়। শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধে সরকার সব সময় সোচ্চার থাকার ফলে দেশে উচ্চশিক্ষার হার পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি।

তারুণ্যের জয়গান গেয়ে একজন তরুণ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে, ঠিক তখনই চাকরি নামক সোনার হরিণ এবং নানামুখী বিপর্যয়ের কারণে তাকে বিপর্যস্ত হতে দেখি। তখন স্বভাবতই বুকের ভেতরে একটা অসহ্য খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। বেদনায় মুষড়ে পড়ে ভাবি, আমরা আমাদের তারুণ্যের অফুরন্ত শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। এভাবে কত শক্তিই না নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারলে একটা তাজা গাছ যেমন ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে, ঠিক তেমনি তারুণ্যকে সঠিকভাবে পরিচর্যা না করলে এক সময় সেটা নিঃশেষ হয়ে যায়। আমাদের তরুণেরা ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের তরুণেরা আজ নানামুখী দেশবিধ্বংসী অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। নেশা নামক ভয়ানক ব্যাধি তাদের প্রাণশক্তি শুষে নিচ্ছে। অনেকে হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে। আমরা যখন শুনি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে আত্মহত্যা করেছে তখন অশ্রু ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারুণ্যের এমন অপচয় মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের এখনই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দেশকে দেওয়ার মতো বহু কিছু রয়েছে লাখো কোটি তরুণের। এই বোধটুকু তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। তরুণদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। তাদের হতাশার কারণ খুঁজে বের করে মুক্তির উপায় বাতলে দিতে হবে। তরুণরা যদি না জেগে ওঠে তাহলে কিছুতেই এই সমাজ জেগে উঠতে পারবে না। লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়