রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি

প্রকাশের সময় : 2019-11-06 19:35:52 | প্রকাশক : Administration

রশিদ মামুনঃ বহু বাধা পেরিয়ে রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করতে রাতদিন কাজ করা হচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। শুরুর বছরগুলোতে পরিবেশবাদী এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বিদ্যুত কেন্দ্রটির কাজ শুরুই করা যাচ্ছিল না। তবে এখন অনেকটা নীরবে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে রামপাল কেন্দ্রের।

বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) বিদ্যুত কেন্দ্রটির মালিকানায় রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। ভারতের সঙ্গে এই চুক্তিকে বিদ্যুতখাত উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখা হয়। কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার পথ ধরেই যৌথ উদ্যোগে দেশে বড় কেন্দ্র নির্মাণের সূচনা হয়।

বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতেই নানামুখী জটিলতার কারণে কেন্দ্র নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন আর এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রতি দিনই কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। আগামী বছর নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে কয়লা পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির কাজটিও করছে তারা। এজন্য মংলা পোর্ট থেকে প্রকল্পর জেটি এলাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মাটি সংরক্ষণের জন্য ড্রেজিং কাজ যাতে যথাসময়ে শেষ করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি রামপাল ইস্যুতে ইউনেস্কোর ছাড়পত্র পেয়েছে সরকার। রামপাল ইস্যুতে গ্রহণ করা পদক্ষেপ সম্পর্কে জানার পর সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত জানায় ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে দেশে ফিরে প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী (বীরবিক্রম) বলেন, রামপালের কাজ চলবে। তবে ওই এলাকায় একটি সমন্বিত পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলার জরিপ করা হবে। ওই জরিপে কোন বিষয় উঠে আসলে তা মোকাবেলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। এতে রামপাল প্রকল্প বন্ধ করা হবে না।

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির হওয়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রর ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ছাই (কয়লা পোড়ানোর পর অব্যহৃত অংশ) ধরা হবে। যা বাতাসে ছড়াতে পারবে না। এই ছাই স্থানীয় সিমেন্ট কারখানা এবং সিরামিক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। স্থানীয়ভাবে বাজার জরিপ করে দেখা গেছে ছাইয়ের বড় বাজারও রয়েছে। ছাই ধরার পর তা সংরক্ষণের জন্য ২৫ একর জমির ওপর একটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ছাই যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি করতে না পারে এজন্য বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। যা ৯০তলা ভবনের চেয়ে বেশি উচ্চতার। বাতাসের স্তর বিবেচনা করে এই চিমনি বাতাসের ওই স্তরে দশমিক ১ ভাগের কম ছাই ছাড়া হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির ছাই সুন্দরবনকে অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পড়বে।

সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বাতাসে না ছড়ায় এজন্য বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে এ্যাডভান্সড লো নক্স বার্নার প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। এতে করে বাতাসে নক্স ছড়ানোর মাত্রা কোনক্রমেই বিশ্বব্যাংক এবং আইএফসি’এর গাইড লাইনের বেশি হবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্রটিতে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজার ইউনিট (এফজিডি) ব্যবহার করা হবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এর আগে বলা হয়, কেন্দ্রটির ৯৬ ভাগ ফ্লু গ্যাস ধরা হবে।

পশুর নদী থেকে পানি ব্যবহার সম্পর্কে বলা হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রটি চক্রাকার পদ্ধতিতে নদীর পানি ব্যবহার করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি পানি শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি কোন গরম পানি ঠান্ডা না করে নদীতে ছাড়বে না। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের কোন ক্ষতি হবে না।