আনোয়ার হোসেনঃ একের পর এক পিলারের ওপর বসছে মেট্রোরেলের মূল অবকাঠামো। দৃশ্যমান হচ্ছে এর অবয়ব। এগিয়ে চলেছে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের কার্যক্রম। মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত উড়ালপথে রেললাইন বসানো শুরু হচ্ছে এ মাসেই। আগামী জুনে ইঞ্জিন-কোচ চলে আসার কথা। সেগুলো ঠিকঠাকমতো বসানোর পর শুরু হবে পরীক্ষামূলক চলাচল। সবকিছু পরিকল্পনামতো এগোলে ২০২১ সালের শেষে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকাবাসী বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন।
রাজধানীর যানজট নিরসনে উড়ালসড়ক, বাসের বিশেষ লেন নির্মাণসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে। তবে আধুনিক নগরপরিকল্পনায় ও গণপরিবহনে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে দেখা হয় মেট্রোরেলকে। যানজট নিরসন, বিপুল সংখ্যায় যাত্রী দ্রুত পরিবহনের জন্য উন্নত বিশ্বে মেট্রোরেল সমাদৃত। ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের কাজের মোট অগ্রগতি নভেম্বর পর্যন্ত ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের আট কিলোমিটার উড়ালপথ তৈরির কাজ শেষ।
ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত পথ মিরপুর থেকে মতিঝিল। এই পথে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ব্যস্ততম সড়কে এই কর্মযজ্ঞ রাজধানীবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। বর্ষায় পানি জমে থাকা, শীতে ধুলার রাজ্য, রাস্তা সরু হওয়ার ফলে তীব্র যানজট, নির্মাণ এলাকায় এডিস মশার প্রজনন, বায়ুদূষণের মতো বিষয়গুলো ঢাকাবাসীকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তবে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এইসব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন তো মেট্রোরেল দৃশ্যমান। নগর পরিবহনের নতুন এই ব্যবস্থা সংযোজিত হলে ঢাকাবাসী এর সুফল পাবে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আরও পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি মেট্রোরেলের প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকার চেহারা পাল্টে যাবে। মানুষকে গর্ব করার মতো কিছু উপহার দিতে পারবে সরকার।
মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে লাগবে ৩৮ মিনিট। ঘণ্টায় দুই দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। বাকিটা সরকার বহন করছে। এই প্রকল্প ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারিতে জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন হবে ১৬টি। শুরুতে ২৪টি ট্রেন দিয়ে মেট্রোরেল চালু করার কথা রয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি করে বগি থাকবে। পরে তা আটটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, শুরুতে দিনে ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ২০৩৫ সালে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ লাখের বেশি। উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়নের কাজটি করেছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এই কাজের ঠিকাদার থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান–থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও চীনের সিনো হাইড্রো। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই কাজের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। - প্রথম আলো