নিঝুম দ্বীপে একদিন

প্রকাশের সময় : 2020-03-11 12:35:18 | প্রকাশক : Administration নিঝুম দ্বীপে একদিন

আহনাফ ইশতিয়াকঃ নোয়াখালী জেলার দক্ষিণাংশে হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ- নিঝুম দ্বীপ। একে দ্বীপ বলা হলেও এটি মূলত একটি চর। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিল চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিল। পরে হাতিয়ার সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন।

মূলত বলস্নারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিল না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিল। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২ হাজার। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছ। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবি করেন।

বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকে নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ করতে হলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করলে প্রথমে তাকে সড়ক পথে নোয়াখালী হেড কোয়ার্টার মাইজদী সোনাপুর আসতে হবে। এখানে কিছু আবাসিক হোটেলও রয়েছে। সোনাপুর থেকে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর বাস এবং বেবি টেক্সি পাওয়া যায়। সোনাপুর থেকে চরবাটা ৪নং স্টিমার ঘাট, বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে প্রতি দিন সি-ট্রাক/ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নলচির ঘাট অথবা তমরুদ্দি ঘাট বা চরচেঙ্গোর ঘাট পর্যন্ত চলাচল করে। সি ট্রাকে নদীপথে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সি ট্রাকের ভাড়া ৫০ টাকা ও ৬৫ টাকা লাগবে।

নলচিরা ঘাট থেকে বাসে অথবা বেবি টেক্সিতে হাতিয়া হেড কোয়ার্টার ওছখালী বাজারে আসতে হবে। নলচিরা থেকে ওছখালীর দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। ভাড়া প্রদান করতে হয় বাসে ২০ টাকা, বেবিটেক্সি জনপ্রতি ৩০ টাকা। অন্যদিকে যারা চরচেঙ্গার সি ট্রাকে রওনা হবেন তাদের তমরুদ্দি ঘাটে এসে নামতে হবে। তমরুদ্দি ঘাট থেকে হাতিয়ার হেড কোয়ার্টার ওছখালীর দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। বেবি অথবা রিকশাতে আসা-যাওয়া ভাড়া প্রতি রিকশা ২০ টাকা প্রদান করতে হয়। সময় লাগে আধা ঘণ্টা।

হাতিয়া ওছখালী হেড কোয়ার্টার থাকার ব্যবস্থা স্থানীয় রেস্ট হাউস অথবা উপজেলা ডাক বাংলো, রেডক্রিসেন্ট সড়ক ও জনপথ এবং দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা উন্নতমানের রেস্ট হাউস রয়েছে। আর পর্যটক ভ্রমণার্থীরা উঠতে পারেন সিঙ্গাপুর রেস্ট হাউস/তালুক রেস্ট হাউস, হোটেল প্রিন্স এবং সালমা রেস্ট হাউস। রেস্ট হাউসে অবস্থান করে পরদিন ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে হবে। স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার জন্য হাতিয়া হেড কোয়ার্টার থেকে নদীপথে তমরুদ্দি ঘাট হয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে নিঝুম দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র এবং বিনোদন স্পট যাওয়া যায়।

পযর্টকরা ইচ্ছা করলে তমরুদ্দি থেকে বেবি টেক্সি ভাড়া করতে পারেন আসা-যাওয়া ৪০০-৬০০ টাকা। বর্তমানে নিঝুম দ্বীপে সড়ক পথে নিরাপদে কম সময়ে কম টাকায় যাওয়া যায় বলে ভ্রমণার্থীরা এই পথেই বেশি চলাচল করছে। নিঝুম দ্বীপের মতো দেশের অন্য কোনো বনে কাছাকাছি থেকে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না। শীতে নানান রকম পরিযায়ী পাখি এই দ্বীপে বেড়াতে আসে। দ্বীপে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থাও আছে। তাই ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর এই দ্বীপ থেকে। - যায়যায়দিন