সম্পর্ক নষ্ট করা স্বভাব সমূহ

প্রকাশের সময় : 2021-02-17 13:59:54 | প্রকাশক : Administration সম্পর্ক নষ্ট করা স্বভাব সমূহ

মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ: পারস্পরিক ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সবাই চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের মৌখিক কিছু মন্দ স্বভাবের কারণে সেই চেষ্টা সফল হয় না। সুসম্পর্ক একসময় দুঃসম্পর্কে রূপ নেয়। নানা রকম ঝগড়া ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যার মূলে থাকে সেসব মন্দ আচরণ ও কুস্বভাব। ব্যক্তিগত আচরণে কিছু স্বভাব বর্জন করতে হবে।

পরনিন্দা বা দোষচর্চা সমাজে সম্পর্কহীনতা ও হানাহানির পরিবেশ তৈরি করে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’  (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ)- এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিরূপে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গীবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষ মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১২)

যেখানে সেখানে অপ্রয়োজনে কথা বলার দ্বারা ব্যক্তিত্ব হালকা হয়ে যায়। সমাজে তার মূল্যায়ন কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অনর্থক কথায় অযাচিত বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ইসলামে একে অসুন্দর আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৭৬)

কোথাও তিনজন লোক থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানাকানি করা ইসলামে নিষেধ। এতে তৃতীয় ব্যক্তি মনঃক্ষুন্ন হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি তাদের দেখো না, যাদের কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর তারা সেই নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ৮)।’ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা তিনজন থাকবে, তখন তৃতীয়জনকে ছেড়ে তোমরা গোপনে পরামর্শ কোরো না তার অনুমতি ছাড়া। কেননা সেটি তাকে দুঃখ দেবে।’ (মুসনাদ আহমাদ,  হাদিস : ৬৩৩৮)

কাউকে উপহাস করা কিংবা মন্দ নামে ডাকা ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। তাই এসব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসী! কোনো সম্প্রদায় যেন কোনো সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম।

আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপনামে ডেকো না। বস্তুত ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা হলো ফাসেকি কাজ। যারা এ থেকে তাওবা করে না, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)

অন্যের প্রতি কু-ধারণা মারাত্মক পাপ। এতে অযথা পারস্পরিক সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়। ভুল বোঝাবুঝি থেকে একপর্যায়ে তা ঝগড়া ও সম্পর্কহীনতায় রূপ নেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা অধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কোনো কোনো ধারণা পাপ... (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)।’