ভ্রমণ; যশোর ও সুন্দরবন

প্রকাশের সময় : 2018-07-25 19:06:12 | প্রকাশক : Administrator ভ্রমণ; যশোর ও সুন্দরবন

লে: কর্ণেল (অবঃ) আকম জাহিদ হোসেনঃ (পূর্বে প্রকাশের পর) বিমান বন্দর ষ্টেশনের প্ল্যাটফরম ও ট্রেনের বার্থের ভিতরে আমরা এক সঙ্গে দীর্ঘ সময় গল্প করে কাটিয়েছি। তাই বন্ধুদের এভাবে ট্রেন হতে বিদায় দিতে গিয়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। ট্রেন চূয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ষ্টেশনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র বিদ্রোহ রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮৮ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ নে উইন ঘোষণা দেন যে তিনি ক্ষমতা ছাড়ছেন। এতদিনের সামরিক শোষণ, নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অর্থনৈতিক অবনতি হতে মুক্তির আশা দেখে রেঙ্গুনের রাস্তায় জনতার ঢল নামে। কিন্তু ৮ জুলাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেনাবাহিনী রাস্তায় জমা নারী পুরুষ ও শিশুদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। চারদিন ধরে চলা এ হত্যাযজ্ঞে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়। হাজারে হাজারে ছাত্র ও গণতন্ত্রকামী মানুষ সীমান্তবর্তী এলাকায় পালিয়ে যায়।

ঠিক এই অশান্ত অবস্থাতেই বার্মার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা অং সানের কন্যা বিদেশে অবস্থানরত অং সান সুচি অসুস্থ মাকে দেখতে দেশে আসেন। সময়ের প্রয়োজনে তিনিও রাজনীতিতে পা রাখেন। এ সময় আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে সামরিক সরকার এক বহুদলীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। সমমনাদের নিয়ে গঠিত সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (ঘখউ) দেশব্যাপি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সুচির জনপ্রিয়তার ফলাফল টের পেয়ে তাকে গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ মে প্রতিশ্র“ত নির্বাচনে সুচির দল ৮২% ভোট পেয়ে জয়ী হয়, কিন্তু সামরিক সরকার সে ফলাফল গোপন রেখে ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।

২০০২ সালে সুচিকে মুক্তি দেয়া হলেও ক্ষমতা সামরিক সরকারের হাতেই থাকে। সমগ্র রাজনৈতিক জীবনের ১৫ বছরই সুচির বিভিন্ন সময়ে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটে। ২০১০ সালে সুচি মুক্তি পান। ২০১২ সালে সাধারণ নির্বাচনে সুচি ও তার দল ঘখউ বিজয়ী হয়ে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ৯ মে সুচি প্রথম আইন প্রণেতা হিসেবে পার্লামেন্টে উপস্থিত হন। ছয় দশকের রক্তপাত ও সশস্ত্র সংঘাত ও একনায়কতন্ত্রের পর বার্মা বা মিয়ানমার গণতন্ত্রের মুখ দেখে।

কিন্তু সমস্যা কি আদৌ ফুরোলো? বার্মায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতির মানুষদের উপর অত্যাচার নিপীড়ণ চলছে সে গোড়া থেকেই। এর পেছনে মূল কারণ তাদের বহিরাগত ভাবা। অনেক আগে মূলত বাংলাদেশ থেকে উঠে যাওয়া মানুষদেরই একটি গোষ্ঠী এই রোহিঙ্গারা। সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগুরু বার্মীজদের গণহারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও এর কারণে রোহিঙ্গারা আজ নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত। আশ্চর্যের বিষয় বার্মার গণতন্ত্রের মানসকন্যা সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একদম চুপ। ২০১২-তে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বার্মার অধিবাসী মনে করা যায় কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

বর্তমান পরিস্থিতি সকলেরই জানা। তুমুল আগ্রহে আজও রোহিঙ্গা নিধন চলছে। তেমন কার্যকরী ভূমিকা কেউই নিচ্ছে না। আর সীমান্তবর্তী দেশ হওয়ায় লাখে লাখে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সয়লাব হয়ে গেছে বাংলাদেশ। যেভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মাটি আঁকড়ে ধরছে আর যেভাবে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরে যাবার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এই দ্রুত জনবর্ধনশীল দেশের কী অবস্থা হবে তা ভাবা যাচ্ছে না। পৃথিবীর রাজনীতিতে সুদীর্ঘদিন আড়ালে থাকা মিয়ানমার এভাবেই আজ বাংলাদেশের জন্য এক মূর্তিমান উৎপাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বাংলাদেশের জন্য সময়ের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।