জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম

প্রকাশের সময় : 2018-08-29 21:04:08 | প্রকাশক : Admin জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম

সিমেক ডেস্কঃ মৃত্যু এসে কেড়ে নিল বর্ণাঢ্য এক জীবনকে, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক- সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ জাতীয় অধ্যাপক ভাষাসৈনিক ডঃ মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে। ১৯২৭ সালে ১ মে থেকে ২০১৮ সালের ৯ মে বিস্তৃত জীবনে বাংলা আর বাঙালীকে উজাড় করে দিয়েছেন। বাঙালীর বহু গৌরবগাথার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। শুধু গৌরবগাথাই নয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ পান্ডিত্য ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন এক সাবলীল অনুষ্ঠান সঞ্চালক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিত্র এখনও চোখে লেগে আছে দর্শকের। ৫ বছর বয়সে ১৯৩২-’৩৩ সালে কলকাতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাতে তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। পিতা সাদত আলী আখন্দের চাকরিসূত্রে ঘন ঘন বদলির সুবাদে তিনি মোট ৮টি স্কুলে লেখাপড়া করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল দিয়ে শুরু এবং স্কুলজীবন শেষ হয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। আনন্দমোহন কলেজ ময়মনসিংহে আইএসসি পড়েন। গ্র্যাজুয়েশন করেন কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন এবং পিএইচডি করেন লন্ডন ইউনিভার্সিটির প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র সোয়াস থেকে।

ছাত্র বয়স থেকেই তিনি দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৪৮-১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী আন্দোলনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন। ষাটের দশকের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, একষট্টিতে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উৎযাপনসহ সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক- সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে পিএইচডি করার সময় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন এবং জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মুস্তাফা নূরউল ইসলামের কর্মজীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে, দৈনিক আজাদ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে। তারপর ১৯৫১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় এ্যাসোসিয়েট এডিটর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের যাত্রা সূচিত হয় ডঃ মুস্তাফা নূরউল ইসলামের হাতে। স্বাধীনতা পূর্বকালে কয়েক বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন এবং ১৯৭১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করা কালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন অধ্যাপনার চাকরিও করেন।

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক হন। সামরিক সরকারের সঙ্গে দ্বিমতের কারণে বাংলা একাডেমিতে চাকরির মেয়াদ অসমাপ্ত রেখেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং ১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আগেপরে জাতীয় জাদুঘর পরিচালনা পর্ষদের তিন মেয়াদের চেয়ারম্যান, নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্ট বোর্ডের তিন মেয়াদের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নীতিনির্ধারণী পর্ষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের প্রবন্ধ-সঙ্কলন ও গবেষণাগ্রন্থের সংখ্যা ৩০টির অধিক।