পোশাক খাতে বিপুল রপ্তানির হাতছানি

প্রকাশের সময় : 2022-08-03 16:03:44 | প্রকাশক : Administration পোশাক খাতে বিপুল রপ্তানির হাতছানি

আলতাফ হোসাইন: করোনা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত। বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে চিন্তিত ছিলেন পোশাক মালিকরা। মাঝে সংক্রমণ কমলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ইউরোপের দেশগুলোতে পোশাকের ক্রয়াদেশ থেমে গিয়েছিল। যদিও রপ্তানিতে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। বরং এরইমধ্যে শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাতটি।

শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে আগামীতে আরও বিপুল পোশাক রপ্তানির হাতছানি দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশকে তাদের ভালো সোর্সিং হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি আরও বাড়ানোর কথা বলছেন। একইসঙ্গে পোশাক রপ্তানি বাজারে চীনের একক আধিপত্যও যখন কমছে, তখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার মাধ্যমে ক্রেতাদের বাংলাদেশমুখী করতে গুরুত্ব দিচ্ছেন পোশাক মালিকরা।

গত কয়েক বছরে কমপ্লায়েন্সের মানদণ্ডে বাংলাদেশের যে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে, সে তথ্য এখনো বিশ্বের পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের কাছে সঠিকভাবে যাচ্ছে না। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি কিংবা তার পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের চিত্র এখনো তাদের মনে গেঁথে আছে।

ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দরাদরিতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিবাচক দিক বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে বিশ্বের পোশাক খাতের ব্র্যান্ড, বায়ার, ফ্যাশন জায়ান্টসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী বড় আকারে ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইক-২০২২’- আয়োজন করতে যাচ্ছে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং আন্তর্জাতিক অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএফ)।

তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে এ ধরনের বিশাল আয়োজন বাংলাদেশে এই প্রথম। আইএএফ পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য ছাড়াও ৪০টি দেশের পোশাক শিল্প সমিতির নেতা, শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড, রিটেইলার, সরবরাহকারী (সাপ্লায়ার্স) এবং বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেবেন। পাঁচদিনের ওই অনুষ্ঠানে চার দশকে বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতির গল্প তুলে ধরা হবে। বিশেষত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর কিভাবে এ খাত নন-কমপ্লায়েন্ট থেকে বিশ্বের অন্যতম কমপ্লায়েন্ট ও গ্রিন কারখানার হাব হয়ে উঠছে, তা তুলে ধরা হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের ওইসব কারখানা ঘুরে দেখানো হবে। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে আইএএফ কনভেনশন, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সপো, ডেনিম এক্সপো, ঢাকা অ্যাপারেল সামিট, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ফ্যাশন শো, এনবিআর ও ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডের মতো আরও অনেক অনুষ্ঠান। মেড ইন বাংলাদেশ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করা।

এখানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ের বায়াররা আসবেন। আমাদের খাতের ইতিবাচক দিকগুলো তাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ থাকবে। এটা করতে পারলে আগামীতে রপ্তানি আরও বাড়বে। চায়নার কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে একটা ট্রেড গ্যাপ আছে। তবে আমাদেরও চায়নার সঙ্গে পার্থক্য অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে চায়নার শেয়ার হলো ৩১ শতাংশ, আর আমাদের মাত্র ৭ শতাংশ। অনেক বড় একটা গ্যাপ। এই গ্যাপটা আমরা পূরণ করতে চাই।

অবশ্য সারা বিশ্বে চায়নার পরেই বাংলাদেশকে চিন্তা করে। এই দিকটা আমরা আরও ভালোভাবে নিয়ে আসতে চাই। এরসঙ্গে আরও কিছু কাজ আছে। যেমন অবকাঠামোগুলো বড় করতে হবে। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। এগুলো করতে পারলে সামনে আরও বিপুল রপ্তানির সুযোগ আছে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি, উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরিতে সক্ষমতার চিত্র বিশ্ববাজারে সঠিকভাবে তুলে ধরা গেলে দরের ক্ষেত্রেও আরও ভালো অবস্থানে থাকা যাবে।

বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে জাতি হিসেবে অর্জন এবং গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে সপ্তাহব্যাপী ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’-এর আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পোশাক রপ্তানি আরও বাড়াতে সক্ষম হবো।

মেইড ইন বাংলাদেশ উইক পোশাক শিল্পের আকর্ষণীয় ইতিবাচক দিকগুলো উপস্থাপন করবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে বিশ্বে একটি নিরাপদ, টেকসই এবং প্রতিযোগিতামূলক শিল্প হিসেবে অবস্থান শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

করোনার সময় যখন সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তারা ছুটিতে ছিলেন, তখন শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক বর্তমানে পোশাক খাতে নিয়োজিত আছেন। পরোক্ষভাবে যুক্ত আরও ১০ লাখ। এদের পরিবারের সংখ্যা ধরলে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই এখানে যুক্ত। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের জুন শেষ নাগাদ এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ ছাড়া পোশাকের মূল রপ্তানিকারক চীন ধীরে ধীরে পোশাক রপ্তানি থেকে বেরিয়ে আসায় বাংলাদেশের সামনে আগামী দিনগুলোতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।