এম আর আমিন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ বাস্তবায়নের পর পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে। পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কক্সবাজারে যেতে পারবেন পর্যটকরা। পাহাড়ঘেরা পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনায়াসে দেখতে পারবেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত আটটি উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি এই রেলপথ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে।
দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইনের কাজের সাথে সমন্বয় রেখে ষোলশহর দোহাজারী সাড়ে ৪০ কিলোমিটার রেললাইনের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে চারটি প্যাকেজে কাজ চলছে। ষোলশহর থেকে দোহাজারী সাড়ে ৪০ কিলোমিটার রেল লাইনও টেন্ডারের মাধ্যমে নতুনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। এদিকে ষোলশহর দোহাজারী রেল লাইনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরের মধ্যে দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ শেষ হবে।
দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইনের সাথে সমন্বয় রেখে ষোলশহর দোহাজারী সাড়ে ৪০ কিলোমিটার রেল লাইনের অংশের কাজও সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। চারটি প্যাকেজে কাজ চলছে। ষোলশহর দোহাজারী সাড়ে ৪০ কিলোমিটার রেললাইনের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে। ৪টি প্যাকেজের মধ্যেই দুইটির কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে আরও দুইটির কার্যাদেশ দেয়া হবে।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর জায়গা জুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। এই ঝিনুক আকৃতির স্টেশন চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। ঢাকা থেকে মাত্র ৮ ঘন্টায় কক্সবাজার পৌঁছানো যাবে।
প্রাথমিক হিসাবে, ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনে প্রতি টিকেটের দাম ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পড়বে। এই পর্যটন স্টেশন চালু হলে যাতায়াত সহজ হওয়ায় সমুদ্রে বাড়বে কয়েক গুণ পর্যটক। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। মোট ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান। ঢাকা থেকে প্রতিদিন ১০ জোড়া আধুনিক ট্রেন চালাচল করবে।
আন্তঃনগর পর্যটকদের জন্য এর পাশাপশি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ও লোকাল মিলে আরো বেশ কিছু ট্রেন যাবে কক্সবাজার। পর্যটকবাহী এক একটি ট্রেনে থাকবে ৮০০ থেকে ১২০০ যাত্রী। সবমিলিয়ে এ রেলপথে বছরে যাত্রী আসা যাওয়া করবে প্রায় ২ কোটি। চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথে মোট নয়টি স্টেশন থাকবে। যার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতির যোগসূত্র তৈরি হবে।
স্টেশন ঘিরে হোটেল-মোটেল ও পরিবহন খাতে তৈরি হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিরা তাদের পণ্য ঢাকা থেকে কম খরচে কক্সবাজারে নিয়ে যেতে পারবেন। কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এই রেলস্টেশন এখন দৃশ্যমান। চারদিকে চলছে গ্লাস ফিটিংস, নানা ধরনের ফিটিংস বসানোর কাজ। স্টেশনটি ভবনের নিচ তলায় আছে টিকিট কাউন্টার, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল, রেস্তোরাঁ।
তিন তলায় আছে তারকামানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী নিয়োজিত ছিলেন।
পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বহুল প্রতীক্ষিত পর্যটন রেললাইনের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা, ২০২৪ সালের জুনের আগেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। - সূত্র: অনলাইন