রাজনীতি কোন পথে!!!

প্রকাশের সময় : 2023-05-31 11:44:53 | প্রকাশক : Administration রাজনীতি কোন পথে!!!

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি অনড়। তাদের এ দাবির প্রতি সমমনা ক’টি ছোট দলেরও সমর্থন রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা সংবিধান অনুসারে দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। বিএনপি বিদেশীদের কাছে দেনদরবার অব্যাহত রাখলেও এখনো পর্যন্ত কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সমর্থনে কথা বলেনি। তবে তারা সবাই সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত একবছর ধরে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। সেই সঙ্গে এই দাবির পক্ষে সমর্থন আদায় করতে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে চিঠি চালাচালি করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। কিন্তু কোনোভাবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা যায়নি।

বিএনপি মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ ছাড়া দেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তারা সুবিধা করতে পারবে না। এ জন্য তারা ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তারা ধারাবাহিকভাবে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তাদের মিত্রদের নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করছে। তারা সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টাও করছে। এ কারণে ১৪ দলীয় জোটের সকল শরিক দল, আগে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে থাকা ক’টি দলসহ বেশ ক’টি ইসলামী দল, জাতীয় পার্টি এবং ক’টি বাম দলসহ অনেক রাজনৈতিক দলই এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের পর বর্তমান সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থন ও সহযোগিতার মনোভাব আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের এ তিনটি দেশের সরকার বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তারা শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা আরও প্রসার করার কথাও জোরেশোরে বলেছে। তবে তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় বলে জানিয়েছে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকালে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করা হয় এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার আশ্বাস দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে বিভিন্ন ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পৌনে আট মাস আগে বর্তমান সরকারের জন্য শুভ সংবাদ বয়ে এনেছে। 

সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এখন পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী অবস্থানে থেকে নিরপেক্ষ থেকে প্রশাসনকে দায়িত্বশীল করার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করে তাহলে তা সম্ভব। এ জন্য পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছে। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।

অতিসম্প্রতি ইউরোপ ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কিংবা মধ্যস্থতা নয়, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইইউ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জুলাইয়ে নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে ইইউ’র একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের ৮ দেশের রাষ্ট্রদূত।

এর আগে জাপান দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের দেশ কোনো কথা বলবে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই কোনো মন্তব্য করব না।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এমন কোনো কথা বলেননি। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

এর পর ১ মে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-প্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে  যুক্তরাষ্ট্র চায় নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে তা দেশটির জনগণই ঠিক করবে। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

সম্প্রতি ঢাকায় এক সফরের সময় বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো একটি বিশেষ দলের বা ব্যক্তির অংশগ্রহণের বিষয়ে নয়, বরং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশি আগ্রহী বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার।

তিনি বলেন, নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কিনা সেটির চেয়ে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি বাংলাদশের নির্বচনকালীন সময়ের পরিবেশ নিয়ে। আফরিন আখতার আরো বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কি না। এক্ষেত্রে সবার অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোন মন্তব্য নেই।

বিএনপির নির্বাচনে আসা নিয়ে ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে সিনিয়র এই মার্কিন কূটনীতিক বলেন, তার দেশ কোন দল, প্রার্থী ও বিশেষ কোন ব্যক্তিকে সমর্থন করে না। এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে কারো সঙ্গে মধ্যস্থতার ব্যাপারেও তার দেশের কোনো ইচ্ছা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক চর্চার পক্ষে। আমরা সুশীল সমাজ, বিরোধী দল ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের মত প্রকাশ স্বাধীনভাবে করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে চাই। - সূত্র: অনলাইন