সিমেক ডেস্কঃ দশ বছরে অর্থনৈতিক-সামাজিক উভয়ক্ষেত্রে সাফল্যের অনুকরণীয় নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের উন্নয়ন আকাঙ্খার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে ৭ গুণের বেশি। একটি দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সক্রিয় হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। বিভিন্ন ধরনের কর্মসৃজন ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশে-বিদেশে সরকারী-বেসরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে কাজের সুযোগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সার্বিকভাবে এই সময়ে দেশে ১ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে ৭৯ লাখ মানুষ চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছে।
এদিকে, আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার এই মজবুত ভিত রচনা করতে সরকারকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। মোকাবেলা করতে হয়েছে বিশ্ব মন্দার প্রভাব। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অপ্রতুলতা ও জনমুখী নীতি কৌশল না থাকাটা ছিল বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া ওই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের সামনে। তবে দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের অভিঘাতসহ সব বাধা সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার এই মজবুত ভিত রচিত হওয়ার পেছনে সরকারের নেতৃত্ব ও অনুসৃত কর্মকৌশলের ধারাবাহিকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। একদশকের এই অর্জন আরও শাণিত করে ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গঠনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সুদূরপ্রসারী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১-৪১ প্রণয়নের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই মেয়াদে দশ বছরের ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের ফলে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের অভিযাত্রা শুরু হয়। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে কম মাথাপিছু আয় নিয়েও বাংলাদেশ সামাজিক সূচকসমূহ বিশেষ করে প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল, স্বাক্ষরতার হার, শিশুমৃত্যু হ্রাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।
রাজস্ব ও মুদ্রানীতির যথাযথ সমন্বয়, অর্থনীতির সার্বিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হলেও কার্যত তা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। বরং বর্ধিত সরকারী ব্যয় ও তার বণ্টনে দক্ষতা ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করার ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্যের অনুকরণীয় নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে গড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে একাদিক্রমে সাত শতাংশের অধিক হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ইতোমধ্যে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৮ এবং ১১ দশমিক ৩ শতাংশে। এছাড়া সরকার পরিকল্পিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং দারিদ্র্যের হার কমে এসেছে।
ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটেছে এবং চলতি বছর স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তিনটি শর্ত যথা মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে নির্ধারিত মান অর্জন একসঙ্গে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়নে বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্জন সমমানের অন্যান্য দেশের তুলনায় ছিল অনেকটাই ভিন্ন মাত্রার।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান এ তিনটি নির্দেশকের ভিত্তিতে জাতিসংঘের তৈরি করা মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে চার ধাপ এগিয়েছে। এই সময়ে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়ার ফলে তাদের মজুরি ও আয় বেড়েছে। দুটি জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করায় সরকারী কর্মচারীগণের জীবনমানে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখা হয় এই সময়ে।
গত এক দশকে অর্থনৈতিকক সব সূচকে বাংলাদেশ ভাল করেছে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখেও রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এছাড়া গত দশ বছরে অবকাঠামো খাতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ায় দেশের বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে দেশের জন্য এটা বড় অর্জন। প্রথাগত তত্ত্ব ও ধ্যানধারণাকে পেছনে ফেলে বিগত এক দশকে বাংলাদেশ এগিয়েছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক খাত ও মানব উন্নয়ন ঘটেছে একই সমান্তরালে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দশ দেশের মধ্যে একটি।
এছাড়া প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক দশটি মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিগত দশ বছরে সরকারী ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও বেড়েছে। ফলে অবকাঠামো খাত উন্নয়নে দেশে সরকারী বিনিয়োগ বেশ ভালভাবেই বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচনে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।