কিশোরী রওশনকে বিয়ে করেছিলেন এরশাদ

প্রকাশের সময় : 2019-02-14 16:02:37 | প্রকাশক : Admin কিশোরী রওশনকে বিয়ে করেছিলেন এরশাদ

সিমেক ডেস্কঃ বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল আলোচিত চরিত্র এরশাদ। আনপ্রেডিক্টেবল, পল্ট্রিবাজ, ভেল্কিবাজ নানান নামে তিনি দেশের রাজনীতিতে পরিচিত। তার রাজনীতি ভেল্কিবাজী নিয়ে বছরের পর বছর চলছে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্কের ঝড়।

নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এইচএম এরশাদ গুরুতর অসুস্থ। তার শরীর বেশ ভেঙে পড়েছে। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার উঠতে-বসতে ও হাঁটাচলায় সমস্যা। তার নড়াচড়া করার সামর্থ্যও কমে এসেছে। পরিমাণমতো খেতেও পারছেন না। এরশাদ এককথায় বিছানায় পড়ে গেছেন। দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ এরশাদের পাশে থাকা দূরের কথা ৬২ বছরের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী স্ত্রী রওশন গুলশানের বাসা থেকে কয়েক মিনিটের পথ বারীধারায় গিয়ে স্বামী এরশাদকে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেননি। ১৯৫৬ সালে বেগম রওশন এরশাদ ডেইজিকে বিয়ে করেছিলেন ২৬ বছর বয়সী সেনা কর্মকর্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের ডাক নাম পেয়ারা ও রওশনের ডাক নাম ডেইজি। এরশাদ যখন রওশনকে বিয়ে করেন তখন তার (রওশন এরশাদ) বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। বিয়ের পর সেনা কর্মকর্তা স্বামী এরশাদকে চাকরিতে এখানে সেখানে থাকতে হয়। আর পড়াশুনার জন্য স্ত্রী রওশন এরশাদ ডেইজিকে এক বছর থাকতে হয় বাবার বাড়ি ময়মনসিংহে। এরশাদ নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, চাকরির জন্য আমি আজ এখানে কাল ওখানে। সে সময় দূরে থাকা স্বামীরা স্ত্রীদের কাছে চিঠি পাঠাতো। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। বহু চিঠি লিখেছি; চিঠির প্রথমে রওশনকে অনেকভাবে ‘সম্বোধন’ করতাম।

স্ত্রীর ডাকনাম ডেইজী হওয়ায় ভালবেসে ডাকতেন ডেজু, ডেজুমনি, ডেজুরানী। চিঠির শেষে নিজের পরিচয় লিখতেন ‘পেয়ারা পাগল সাথী’ ‘বড্ড একাকী একজন’ ‘প্রেম-পূজারি’ ‘বিরহী’ ইত্যাদি। ৬২ বছরের সংসার জীবন। স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বের বহুদেশ ঘুরেছেন। ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন। স্ত্রীকে রাজনীতিতে এনে এমপি, এমনকি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতাও বানিয়েছেন। সেই স্ত্রী অসুস্থ স্বামীর খোঁজ নেন নি। গুরুত্বর অসুস্থ স্বামীকে দেখতে যাওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন নি।

স্বাম-স্ত্রীর সেই স্বর্ণালী দিনগুলো এখন যেন হয়ে গেছে তামাটে। উল্লেখ্য, এইচ এম এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদ দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে আলাদা ভাবে বসবাস করছেন। রওশন এরশাদ গুলশানে আর এরশাদ থাকেন বারিধারার দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর প্রেসিডেন্ট পার্কে। বিদিশার সঙ্গে বিয়ের পর এরশাদ গুলশানের বাসা চেড়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে চলে যান। বিদিশার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও এরশাদ ও রওশন এক ছাদের নীচে আসেননি। তবে রাজনীতিটা এখনো এক দলেই করছেন।

স্বামী-স্ত্রীর রাজনীতি নিয়ে বিরোধের সুত্রপাত ঘটে ২০০৭ সালে। ২২ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে ইস্যু করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিরোধ রাজনৈতিক বিরোধে রূপ নেয়। এরশাদ আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মহাজোট আর রওশন এরশাদ বিএনপির ইচ্ছানুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে লাঙ্গলের প্রার্থী দেন।

দেশের টলটলায়মান রাজনীতির মধ্যে সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে স্বামী এরশাদকে বহিস্কার করে রওশন এরশাদ নিজে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও গোলাম মসিহ কে (বর্তমানে সউদীকে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত) মহাসচিব করেন। এরশাদও অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ ও গাইবান্ধা থেকে তিনটি আসনে প্রার্থী হয়ে রওশন পরাজিত হন।

এরশাদ রংপুরের ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচনে স্ত্রী রওশনকে এমপি করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানয়ারির নির্বাচনে এরশাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বামীকে হাসপাতালে রেখে রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন। গুরুমারা শিষ্যের মতোই সংসদে নিজের অধীনে স্বামী এরশাদকে রাজনীতি করতে বাধ্য করেন। মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগ করা না করা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কয়েকবার ঝগড়া হয়।

সম্প্রতি এরশাদ তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান পদ জিএম কাদেরের নামে ‘উইল’ করে দেন। গত ১৮ জানয়ারী এক বার্তায় জিএম কাদেরকে তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়।