গাদ্দাফীর জীবনের শেষ দিনগুলো
প্রকাশের সময় : 2019-10-24 12:55:23 | প্রকাশক : Administration
সিমেক ডেস্কঃ আফ্রিকার লৌহমানব হিসেবে পরিচিত লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফী ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালে, মাত্র ২৭ বছর বয়সে। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের রক্তিম চক্ষু উপেক্ষা করে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করে গেছেন দোর্দন্ড প্রতাপে। মার্কিন, ব্রিটিশ এবং ইতালিয়ান সেনা ঘাঁটি উচ্ছেদ করে এবং লিবিয়ার তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করে, লিবিয়াকে তিনি পরিণত করেছিলেন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী এবং শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রে।
কিন্তু ২০১১ সালে শুরু হওয়া আরব বসন্তের ছোঁয়া লিবিয়াতে লাগার পরে গাদ্দাফীর নিজের কিছু ভুল ও অদূরদর্শিতার কারণে, আরব রাষ্ট্রগুলোর বিশ্বাসঘাতকতায় এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর ষড়যন্ত্রে লিবিয়ার বিপ্লব রূপ নেয় সহিংস গৃহযুদ্ধে। দীর্ঘ আট মাসের এ গৃহযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে, যখন সাড়ে ১৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লিবিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র তার জন্মস্থান সিরত শহরের মাত্র ২ থেকে ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিদ্রোহীদের হাতে পতনের বাকি ছিল, তখন চারিদিকে শত্র“বেষ্টিত সেই এলাকা থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ন্যাটোর বিমান হামলা এবং বিদ্রোহীদের আক্রমণের শিকার হন গাদ্দাফী। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, বিদ্রোহীদের হাতে ধরা খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়।
অনেক রাজনৈতিক সমালোচকই ধারণা করছিলেন, গাদ্দাফী হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন, অন্য কোথাও আশ্রয় নিবেন। যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল যে, গাদ্দাফী ভেনেজুয়েলায় পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তখনই গাদ্দাফী বলেছিলেন, তিনি কখনও লিবিয়া ছেড়ে যাবেন না। যে দেশে ইতালিয়ান উপনিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তার দাদার কবর আছে, যে দেশটিকে তিনি নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন, প্রয়োজনে তিনি যুদ্ধ করে মারা যাবেন, কিন্তু বহিঃশক্তির হাতে সে দেশের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে তিনি অন্য কোনো দেশে পালিয়ে যাবেন না। গাদ্দাফী তার কথা রেখেছিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি লিবিয়াতেই থেকে গিয়েছিলেন।
বিদ্রোহ শুরুর পর ২২শে ফেব্রুয়ারি জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণে গাদ্দাফী; Source: You Tube. গাদ্দাফীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী এবং চাচাতো ভাই মানসুর দাও। মানসুর দাও দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ, পিপল’স গার্ডের প্রধান ছিলেন। শেষ দিনগুলোতে তিনি গাদ্দাফীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০ অক্টোবর, গাদ্দাফীর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি গাদ্দাফীর সাথে ছিলেন। যুদ্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর বিদ্রোহীরা তাকে গ্রেপ্তার করে মিসরাতায় নিয়ে যায়। সেখানে এক অস্থায়ী কারাগারে তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন সাংবাদিকরা।
আগস্ট মাস পর্যন্ত গাদ্দাফী লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীতেই ছিলেন। আগস্টের ২০ তারিখে বিদ্রোহীদের হাতে ত্রিপলীর পতনের প্রাক্কালে তিনি স্বপরিবারে ত্রিপলী ত্যাগ করেন। তবে তাদের সবার গন্তব্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন। গাদ্দাফীর ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গিয়েছিলেন গাদ্দাফীর সমর্থকদের শক্তিশালী ঘাঁটি, পার্বত্য শহর বানি ওয়ালিদে। তার আরেক ছেলে খামিস, যিনি লিবিয়ান সেনাবাহিনীর ৩২ নম্বর ব্রিগেড পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি ত্রিপলী ছেড়ে যাওয়ার পথে তারহুনায় ন্যাটোর বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন। আর গাদ্দাফীর স্ত্রী সাফিয়া, কন্যা আয়েশা সহ পরিবারের বাকি ছেলেদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র আলজেরিয়ায়।
ত্রিপলী থেকে বেরিয়ে গাদ্দাফী রওনা হয়েছিলেন ৪৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপকূলীয় শহর সিরতে। তার সাথে ছিল তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার এবং কিছু বডিগার্ড। সিরত গাদ্দাফীর জন্মস্থান এবং তার সমর্থকদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি। সেখানে আগে থেকেই তার আরেক ছেলে মৌতাসেম বিল্লাহ পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। গাদ্দাফী সিরতে গিয়ে তার কাছে আশ্রয় নেন। চলবে...