পেঁয়াজ সংকটে ‘তৃতীয় হাত’
প্রকাশের সময় : 2019-12-18 11:39:20 | প্রকাশক : Administration
ডাঃ জাহেদ উর রহমানঃ আগস্টের মাঝামাঝি ভারতের পত্রিকায় খবর হয়েছিলো পেঁয়াজের মূল্য গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের মূল্য চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে- এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮৫০ ডলারে বেঁধে দেয় ভারত সরকার। এর কিছুদিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনাগুলো একের পর এক সাজালে যে কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারবেন ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি হঠাৎ বন্ধ করেনি।
এর সঙ্গে যোগ করা যাক আমাদের সংকটের কথা। এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক যা বলেছেন, তা হুবহু উদ্ধৃত করছি, ‘গত বছর আমাদের আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। মাঠে অনেক পেঁয়াজ ছিলো। পেঁয়াজ সহজেই পচনশীল একটি ফসল। অনেক পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। যার জন্য আমাদের ঘাটতি ছিলো। আমাদের একটি দুর্বল দিক হলো আমাদের আগেই অ্যাসেস করা উচিত ছিলো যে, আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি হবে এবার।’
চাইলেই যে পেঁয়াজের এই সংকট এড়ানো যেতো, শ্রীলঙ্কা এর চমৎকার উদাহরণ। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর সেখানে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৮ থেকে বেড়ে ১৪১ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সংকট মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কা দ্রুত পাকিস্তান, মিসর ও চীন থেকে আমদানি বাড়িয়েছিলো, যে কারণে দ্রুত মূল্য কমে কেজিপ্রতি ৫৮ টাকায় নেমেছে। এই সংবাদ অন্তত দুই সপ্তাহ আগের।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়- হয়তো সরকারের একটি অংশ এই পেঁয়াজ সংকটের সঙ্গে জড়িত হয়ে লুটপাটের অংশ হয়েছে অথবা এটি সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভয়ংকর একটা অদক্ষতার স্বাক্ষর। পারিপার্শ্বিক সব ঘটনা বিবেচনা করে আমি মনে করি, জেনেশুনে এই সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের পকেট কাটার জন্য। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম এটি একটা ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। তাহলেও অর্পিত দায়িত্ব পালনে এমন ভয়ংকর ব্যর্থতার জন্য কোনো মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন, এটাই প্রত্যাশিত, যদিও বর্তমান বাংলাদেশে এই প্রত্যাশা কেউ করে না। কিন্তু সীমাহীন ব্যর্থতা দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষটিকে কিছুটা হলেও লজ্জা দেবে, কিছুটা হলেও অনুতপ্ত করবে, সেই প্রত্যাশাও করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বরং বর্তমান বাংলাদেশে আমাদের এখন প্রস্তুত হতে হবে ব্যর্থ মন্ত্রীদের দম্ভোক্তি শোনার জন্য।
ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত না করার চর্চাটা আমাদের জাতিরই একটা রোগ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও ‘ডিনায়াল সিনড্রোম’ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এ দেশে। এই কারণেই আমরা মজা করি, আমাদের একটা তৃতীয় হাত আছে, সেটি ‘অজুহাত’। যেকোনো সমস্যায় পড়লে আমরা সেটাকেই দেখানোর চেষ্টা করি। সমস্যাকে স্বীকার করি না বলেই, সমস্যার জন্য দায়ী হয়ে লজ্জা পাই না বলেই, অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে অনুতপ্ত হই না বলেই এ দেশে বড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না।
কোনো রকমে একটি সমস্যা শেষ হওয়া মানে আরেকটা বড় সমস্যার অপেক্ষা, যেটা আমাদের দেখা দেয় খুব দ্রুতই। পুনশ্চঃ এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রীকে আমাদের একটা ধন্যবাদ দেয়া উচিত। কারণ তিনি অন্তত ‘ডিনায়াল সিনড্রোমে’ না ভুগে এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার কথা কিছুটা স্বীকার করেছেন। ঈষৎ সংক্ষেপিত। শিক্ষক ও অ্যাক্টিভিস্ট