করোনার ধকল শেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গার্মেন্টস

প্রকাশের সময় : 2020-09-17 16:42:11 | প্রকাশক : Administration
করোনার ধকল শেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গার্মেন্টস

রহিম শেখঃ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক চরম বিপাকে পড়েছিল। তবে দেশের রফতানির প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে ক্রেতারা পুনরায় কেনাকাটা শুরু করায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।

মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী রফতানিতে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম বা জিন্স রফতানিতে চীন, মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। করোনার প্রভাবে বাতিল ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশী ক্রেতারা। আবার নতুন করে আসছে ক্রয়াদেশও।

এরই মধ্যে অনেক কারখানাতেই কাজ করার মতো পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে বিপর্যস্ত রফতানি আয়ের শীর্ষ খাতটি শক্তভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা, বায়ারদের আস্থা ফিরে আসা ও শ্রমিকদের আন্তরিকতার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। আগামীতে বড় কোন সমস্যা না হলে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি করতে থাকবে এই খাতটি।

বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস ও টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা এখনও রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে সেখানকার বড় ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে থাকেন। এদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মাসখানেক পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তাতে এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পরের মাসে রফতানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপরও বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ১.৯৮ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। কিন্তু আগস্ট মাসের চিত্র এখন পর্যন্ত ভাল।

ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া। না খুলতে অনেক দিক থেকে চাপ ছিল। এই সময়ে অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করা বায়াররা আবার ফিরে এসেছেন। তারা আস্থা রাখছেন এবং শ্রমিকদের সহযোগিতায় সময়মতো শিপমেন্ট দিতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা, শ্রমিকদের কাজে আন্তরিকতা, বায়ারদের আস্থা ফিরে আসায় ও ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা তৈরি পোশাক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে অবদান রেখেছে।

বাংলাদেশী পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সুইডেনের এইচএ্যান্ডএম। এই ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পোশাক কিনে থাকে। গত দুই থেকে আড়াই মাসে তারা ৫০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। তিনশত সরবরাহকারী কারখানার সবাই ক্রয়াদেশ পেয়েছে। এইচএ্যান্ডএমের ক্রয়াদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভাল। চীন ও তুরস্ক থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরছে, তার একটি অংশ বাংলাদেশে আসছে। পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানেই বাংলাদেশ।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের তালিকাতেও এ দুটি পণ্য বৈচিত্র্য এনেছে। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে সুরক্ষা পণ্যের রফতানি। বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগও করছেন। তৈরি পোশাক খাতে এই দুই পণ্যের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে পরিমাণ রফতানি আদেশ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা তা পূরণ করা গেলে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করবে।

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর পর সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল পোশাক খাতের লাখ লাখ কর্মী। তাদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু অনেক বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে প্রায় ছয় মাসের কাছাকাছি সময়ে এসে এখন দেখা যাচ্ছে, পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা তুলনামূলক খুবই কম। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও খুবই কম। দেশে চার হাজারের বেশি পোশাক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। কারখানাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১১ জন। এর মধ্যে ৪৪৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com